আসলে প্রশান্ত কিশোরের জন্য তৃণমূল বাংলায় বিজেপিকে ধাক্কা দিতে পেরেছে এই উদ্ভট ফাঁপা বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে যে প্রশ্নটি বাংলার মিডিয়া তোলেনি তা হল, বিজেপির কি এমন ছিল যা ধাক্কা দিতে প্রশান্ত কিশোরকে লাগল ? মিডিয়া প্রশ্নটি তোলেনি বলে মানুষের মনে প্রশ্নটি জন্মায়নি তা তো নয়?
বিজেপিতে ১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর একদল তরুণ বাংলায় বাম রাজনীতির অন্ধকার ভবিষ্যৎ বুঝে বিজেপিতে যোগদান করেছিল। বিজেপিতে যাওয়া এই বামেরা চাইতেন লোভ লালসায় ভরপুর এবং নিজেদের ক্ষতিকর মানসিকতায় ইচ্ছুক কর্মীদের নিয়ে তৈরি সাংগঠনিক বিজেপি যেন ২১ -এ ক্ষমতায় না আসে।
শুধু কি বাম থেকে রাম হওয়া কর্মীরা! বিজেপি দলে যারা নিজেদের কেরিয়ার গড়তে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি দলে যোগদান করেছে এমনরা একান্ত আলাপ চারিতায় ভোটের আগেই বলেছিলেন, বিজেপি এবার ক্ষমতায় এলে তা হবে বিজেপির জন্য ক্ষতি বরং সাংগঠনিক ভাবে পরিণত হয়ে বিজেপি বাংলার ক্ষমতায় আসুক।
২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। বাংলার সরকার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস দলের হয়ে পরিশ্রম করার পারিশ্রমিক হিসাবে প্রশান্ত কিশোরের আই প্যাক নিয়েছে। যা বাম কংগ্রেসকে শূন্য করে একমাত্র বিরোধী হওয়া বিজেপির লাভের তুলনায় বেশি। কারণ, বিজেপি একমাত্র বিরোধী হলেও বিধায়কদের ধরে রাখতে পারছে না।
প্রশান্ত কিশোরের খেলা আদতে শুরু হয়নি। প্রশান্ত কিশোর খেলবেন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে।
এই মুহুর্তে বেশিরভাগ নেতারা হতবাক হয়ে গেছেন যে পিকে ভালোর জন্য কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন - রাজনৈতিক কৌশলবিদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে। আবার সেই তিনি যে দাবী করেছেন , তিনি এখনও টিএমসির পক্ষে কাজ করছেন। বিষয়গুলি আরও বিভ্রান্তিকর হতে পারে কারণ পিকে ইতিমধ্যেই অন্য একটি দলের সাথে "প্রতিষ্ঠাতা সদস্য" হিসাবে যোগ দিতে ইচ্ছুক দলের সাথে আলোচনায় আছে বলে জানা গেছে। অথবা রঙিন ভাষায় যাকে বলা হবে “ব্যাকআপ কা ব্যাকআপ” (ব্যাকআপের জন্য একটি ব্যাকআপ)।
এটা কোনও গোপন বিষয় নয় যে, মমতা ব্যানার্জী বিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়ার এবং শেষ পর্যন্ত মোদীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগের প্রত্যাশা করেন। টিএমসি নেতারা এই প্রসঙ্গে উদ্ধৃতি দিতে থাকেন যে এখন সময় এসেছে যে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীকে দিয়ে হবে না। দিদিকেই দরকার হবে।
বাস্তবতা হল বেশিরভাগ আঞ্চলিক স্যাট্র্যাপে এই জাতীয় স্তরে অন্য রাজ্যে ভোট নেই। কেবল তাদের রাজ্যে বা অঞ্চলে রাজা। বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেস তার সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সে এখনও কম না হলে ২০ শতাংশ ভোট পাবে, যা দেশের কোনও আঞ্চলিক দলের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দেখার উচ্চাভিলাষী আঞ্চলিক স্যাট্র্যাপগুলি কীভাবে দেখছে ? পিকে বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার পার্টির ফুট প্রিন্ট গোয়ায় বিস্তৃত করার জন্য প্রস্তুত নেতা পেয়ে গেছে। সুস্মিতা দেবও কংগ্রেস থেকে টিএমসিতে চলে যাওয়ায় তৎক্ষণাৎ ব্যানার্জী তাকে রাজ্যসভার আসন দিয়ে পুরস্কৃত করলেন।
ব্যানার্জী তার এবং তার দলের পদমর্যাদা আসামে বিস্তৃত করার পরিকল্পনার জন্য দেব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যানার্জীর প্যান-ইন্ডিয়া পরিকল্পনাটি বাংলার প্রবাসীদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে-ত্রিপুরা, আসাম এবং মেঘালয়।
পিকে রাজিদোর দলের অখিল গগৈয়ের সাথে তার জন্য বৈঠকের ব্যবস্থা করেছেন এবং তিনি আদিবাসী প্রগতিশীল আঞ্চলিক জোটের প্রধান প্রদ্যোত মানিকিয়ার সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এই সাহসী পদক্ষেপে বিরোধীরা একে অপরকে আক্রমণ না করে ছাড়বে কি ?
কংগ্রেস নেতারা আরও দিশেহারা প্রশান্ত আসলে কি করবে আর কি করবেনা।
সব সমীকরণ মেলালে দেখা যাবে ডন যা চায় পিকে তাই করবে। ডন যা চায় না পিকে তা করবেনা। প্রশ্ন তাহলে, এই ডন কে ? উফ বলেই দেই। প্রশান্ত কিশোরের ডন হল অর্থনীতি। আই প্যাক।
© সত্যজিৎ চক্রবর্তী
লেখক আর প্লাস নিউজের সাংবাদিক।
বি দ্র : আর্টিকেলটি লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। লেখকের মতামতের সাথে সহমত পোষন করে না প্রেসকার্ড নিউজ।
No comments:
Post a Comment