দূষিত করে চলেছে বসিরহাটের লক্ষ মানুষের জনজীবন - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 1 December 2019

দূষিত করে চলেছে বসিরহাটের লক্ষ মানুষের জনজীবন




বসিরহাট থেকে ইচ্ছামতী নদীর তীর বরাবর যতদুর দৃষ্টি যায়, তত দূর দেখা যায় সারি সারি চিমনি অবিরাম নিঃসৃত করে চলেছে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী। যা ছড়িয়ে পড়ছে বসিরহাট থেকে টাকী বা তারও ওপারের আকাশে। গ্রামের পর গ্রাম,  কার্বন পূর্ণ ধোঁয়া দূষিত করে চলেছে লক্ষ মানুষের জনজীবন। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে, বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে এই ধরনের কালো ধোঁয়া।
সম্প্রতি ইচ্ছামতীর দু ধারে বাঁধ বরাবর, বাজিতপুর, দ্বীপ মেদিয়া,সংগ্রামপুর,সৈয়দপুর,টাকী,হাসনাবাদের বিস্তীর্ন অঞ্চলে সম্প্রসারিত হচ্ছে ম্যানগ্রোভ -গরান,কেওড়া, বাইন এমনকি গোলপাতা কেয়ার ঝোঁপ। মানুষের উৎসাহ যখন সবুজ বাঁচানোর দিকে মন দিয়েছে আর এই সুযোগে প্রকৃতিও নিজেকে আবার পুনরায় গড়ে তুলতে শুরু করেছে ঠিক তখনই কিছু অতি ফন্দিবাজ, অর্থলোলুপ মানুষ সেই সবুজ কে ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
ইটিণ্ডা,সংগ্রামপুরের দু পাড় বরাবর সম্প্রসারিত হচ্ছে ইটভাঁটা।মূলত এই সম্প্রসারণের জন্য আইন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে সেইসব ম্যানগ্রোভের ঝোঁপ।এইসব ইটভাটার চিমনির ধোঁয়া যেমন বায়ুকে কার্বনডাই-অক্সাইড, সালফার,নাইট্রোজেন অক্সাইড,ধূলিকণা ইত্যাদি দ্বারা সুসজ্জিত করে বাতাস কে ভারী ও দূষিত করে তুলছে তেমনই তার অকাট্য ফল হিসাবে দুইপাশের হাজার হাজার মানুষ ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, কাশি,সর্দি,চর্মরোগ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।একই কারণে এখানকার উর্বর তিন ফসলি জমি তার উর্বরতা হারিয়ে বন্ধ্যাত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃতি যেহেতু কারোর পৈতৃক সম্পত্তি নয়, তাই প্রত্যেক মানুষেরই বিষুদ্ধ প্রকৃতিকে ভোগ করার অধিকার আছে যা কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তবে একথাও মাথায় রাখতে হবে যে,বসিরহাট মহকুমার একটা বৃহৎ অংশের মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই ইটভাটা গুলোর উপর।ইটভাটা গুলো আজকের দিনেও ১৫০ বছর আগের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে বেশি মুনাফা লোটার জন্য প্রতিনিয়ত প্রশাসন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সভ্যতার সংকট বাড়াচ্ছে। অথচ আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইটভাটা গুলো যেমন উৎপাদন বাড়াতে পারে তেমন দূষণ ৯০শতাংশ কমাতে পারে।এটা এমন কিছু অসম্ভব বিষয়ও নয়।
কিছু মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।কিন্তু তাদের সংখ্যা নিতান্তই ধরার মধ্যে আসে না। সভ্যতার ইতিহাস বলছে ন্যায় এবং যুক্তির পেছনে সব সময় লোক কম থাকে।অতিসম্প্রতি বুলবুল নামক সাইক্লোন কি ভাবে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য পুরো মাত্রায় ধ্বংসলীলা চালাতে ব্যার্থ হয়েছে তা আমরা মোটামুটি অনেকেই অবগত। তাই দলমত নির্বিশেষে সরকারকেই এব্যাপারে মুখ্য উদ্দ্যোগ নিতে হবে।


লেখক
Jyotiprakash Mukhopadhyay 
লেখাটির তথ্যদিয়ে সাহায্য করেছেন --অধ্যাপক ড.নারায়ণ দাস। চিত্র -প্রবীর দাস।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad