বর্তমানে পড়ালেখার চাপ এবং প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা থেকে চুরি করতে শুরু করেছে বা তাদের পড়ালেখা মোটেও ভালো লাগছে না। বেশিরভাগ বাবা-মা তাদের সন্তানদের এই অভ্যাসের জন্য বিরক্ত। অধ্যয়নের এই পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
1. অধ্যয়নের জন্য সঠিক জায়গা বেছে নিন
কিছু শিশু স্বভাবে খুব খেলাধুলা করে। পড়াশুনার সময় আশেপাশের পরিবেশ তাদের উপর অনেক প্রভাব ফেলে যার কারণে তাদের মন পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকে না। সন্তানের লেখাপড়ার জন্য ঘরের সেই ঘরটি বেছে নিন, যেখানে শান্তি থাকে, কোলাহল নেই। বসার জন্য টেবিল-চেয়ার ও কপি-বই সঠিকভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে। তার কক্ষটি সুসংগঠিত হতে হবে, যাতে শিশুর মনোযোগ এদিক-ওদিক না হয়ে পড়ালেখায় নিবদ্ধ হয়।
2. প্রতিদিন অধ্যয়ন করুন
শিশুর মনকে পড়ালেখায় লাগাতে হলে তাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়াতে হবে। নিয়মিত পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করুন। স্কুলের মতো বাড়িতে পড়াশোনার জন্য একটি টাইম টেবিল তৈরি করুন। টাইম টেবিল এমন হওয়া উচিত যাতে শিশু পড়াশুনাকে বিরক্তিকর মনে না করে।
3. ধীরে ধীরে পড়ার সময় বাড়ান
খেলাধুলাপ্রিয় হওয়ায় শিশুদের পড়ার জন্য বসানো সহজ নয়। বসে থাকলেও তাদের একাগ্রতার অভাব হয়। তাদের একাগ্রতা বাড়াতে এবং পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে, শুরুতে অধ্যয়নের সময় কম রাখুন, তবে ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। নিয়মিত অধ্যয়ন করলে আপনার একাগ্রতা বাড়বে এবং আপনার মনও পড়াশোনায় নিযুক্ত থাকবে।
4. পর্যাপ্ত ঘুম পান
শিশুর জন্য একই সময়ে পড়া, খেলা এবং খাওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, পর্যাপ্ত ঘুমানোও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময়, সে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে পড়াশোনা করতে পারে এবং জিনিসগুলি খুব ভালভাবে মনে রাখতে পারে।
5. সময়মতো পড়ার অভ্যাস করুন
শুধু পড়াশোনা নয়, শিশুকে সময়মতো সবকিছু করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথম দিকে শিশুর একটু কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তাকে বুঝিয়ে বলুন যে পড়াশুনা স্থগিত রাখলে পড়ালেখার বোঝা দিন দিন বাড়বে এবং মানসিক চাপের কারণে তার পড়ালেখা ভালো লাগবে না।
6. কেন অধ্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ?
শিশুর যদি পড়ালেখায় আগ্রহ না থাকে বা সে পড়তে লজ্জাবোধ করে, তাহলে জানার চেষ্টা করুন কেন সে এমন করছে? হয়তো তার দৃষ্টি পরিষ্কার নয়? সে কি করতে চায়? প্রথমে এই সমস্যার সমাধান বের করুন।
এ ছাড়া তাকে পড়ালেখার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিন। তাকে তার লক্ষ্য সেট করতে সাহায্য করুন। একবার সে লক্ষ্য স্থির করে ফেললে, তখন সে পড়াশুনার গুরুত্বও বুঝতে শুরু করবে।
7. সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অধ্যয়নের জন্য বসুন
শিশুর পড়াশোনার জন্য কপি-বই ও অন্যান্য জিনিস দরকার, তাকে সঙ্গে নিয়ে বসুন। ঘন ঘন ঘুম থেকে উঠলে শিশুর মন খারাপ হবে।
প্রস্তুতির মধ্যে আরেকটি বিষয়ও আসে, পড়াশুনা শুরু করার আগে ঠিক করে নিন আজকে কি পড়াশুনা করবেন, কয়টি অধ্যায় শেষ করবেন এবং কত সময়ে, পরীক্ষায় কি ধরনের প্রশ্ন আসবে ইত্যাদি নিয়ে নিন, না হলে সব সময়। গবেষণা এই সিদ্ধান্ত ব্যয় করা হবে.
8. পড়াশুনার পর সন্তানকে পুরস্কৃত করুন
বাবা-মায়ের পক্ষে ছোট বাচ্চাকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করা কিছুটা কঠিন, তবে পড়াশোনার বিনিময়ে যদি তাকে কিছু পুরস্কার দেওয়া হয় তবে তিনি অবশ্যই আপনার কথা শুনবেন, তবে সন্তানকে বারবার পুরস্কারে অভ্যস্ত হতে দেবেন না।
9. খাদ্যের যত্ন নিন
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকে, তাই শিশুকে ব্রেন বুস্টার খাবার খাওয়ান। ব্রেন বুস্টার ফুড খেলে শুধু ব্রেনই দ্রুত হয় না, পড়াশোনায়ও ভালো লাগে। তৈলাক্ত, জাঙ্ক এবং ভারী খাবার খাওয়ার ফলে অলসতা হয় এবং পড়াশোনায় ভালো লাগে না।
10. যোগ-প্রাণায়াম
শিশুকে অন্তত ৩০ মিনিট নিয়মিত যোগ-প্রাণায়াম করানো নিশ্চিত করুন এতে শিশুর একাগ্রতা বাড়ে। শিশু সারাদিন এনার্জিতে থাকে। শুরুতে যোগব্যায়াম করার সময় কম রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
11. বিক্ষিপ্ত জিনিস দূরে রাখুন
প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবে বড় হয়েও শিশুরা অস্পৃশ্য নয়। টিভি, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, রিমোট কন্ট্রোল গেম এবং সোশ্যাল মিডিয়া শিশুদের মনোযোগ নষ্ট করে, মনোযোগ ব্যাহত করে। মা-বাবা যদি চান সন্তানের মন দীর্ঘদিন পড়াশোনায় মগ্ন থাকুক, তাহলে তাকে এসব থেকে দূরে রাখুন।
No comments:
Post a Comment