দিলীপ ঘোষ সহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাধিক পদে রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমন খবরে তোলপাড় বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ। ভোটের আগে হঠাৎ কেন বিজেপির বাংলা সংগঠনে বড়সড় রদবদল করতে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ? কেউ বলছেন বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চায় না বলেই ভোটের দোরগোড়ায় এসে এরকম রদবদল। যদিও বিরাট অংশের দাবি, বিজেপি দক্ষ সংগঠন দিয়েই বাংলার শাসন ক্ষমতায় বসতে চায়। ত্রিপুরা পার্ট টু করতে চায় না বাংলায়।
ইতিমধ্যে বিজেপির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে অমিতাভ চক্রবর্তীকে বসিয়েছে। বাংলার সহকারী পর্যবেক্ষক শিব প্রকাশ কে বাংলা সংগঠনে বেশি সময় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে মধ্যপ্রদেশে বেশি সময় দিতে বলা হয়েছে। বিজেপি সুত্রের খবর, কৈলাশ বিজয় বর্গীয়কে বাংলা থেকে কার্যত অব্যাহতি দেওয়া হল।
বিজেপির সংগঠনের বাংলা প্রদেশের মাথা এমন রদবদল আচমকা করানোর পর সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল টাইমস নাউ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নভেম্বর ৫ তারিখে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা কলকাতা সফরের সময় বিজেপির বাংলা প্রদেশের সভাপতি দিলীপ ঘোষকে সরাতে পারেন।যদিও শনিবার সকালে জানা যায় জেপি নাড্ডা কলকাতা আসছেন না। টাইমস নাউ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে দিলীপ ঘোষের ওপর সন্তুষ্ট নয় সংঘ পরিবারের প্রচারক ও কার্যকর্তারা। টাইমস নাউয়ের প্রতিবেদন নিয়ে বিজেপি সংগঠনের একাধিক সুত্রের কাছে জানতে চাইলে তারা দাবি করছে, শুধু দিলীপ ঘোষ নয় রাজ্য নেতৃত্বের এক জেনারেল সেক্রেটারি দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হতে পারে। কিংবা দিলীপ ঘোষকে রেখে দক্ষ কাউকে কার্যকরী সভাপতি পদে বসাতে পারে।
আরএসএসের মতাদর্শ মেনে চলা রাজনৈতিক দল বিজেপি ইতিমধ্যে আরএসএসের শীর্ষ প্রচারকদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সভাপতিও চুড়ান্ত করেছে বলে দাবি করেছে টাইমস নাউ। শুক্রবার দুপুরে টাইমস নাউয়ের এই ব্রেকিং মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সংগঠন শুধু নয় বাম ও তৃণমূল দলের নেতা কর্মীদের মধ্যেও চাঞ্চল্য তৈরি করে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সহ রাজ্য নেতৃত্বের রদবদলে বিজেপি নেতৃত্বের অনেকেই মনে করছেন সামনেই বিধানসভা নির্বাচন সেক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব তো কি সময় পাবে কাজ করার। এই রদবদল আরও আগে করলে ভালো হত। যদিও সংঘ পরিবারের একাধিক কার্যকর্তা বলছেন, দেশে এই প্রথম বিহারে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এরাজ্যেও তেমন ঘটনা ঘটার জল্পনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
বিহারে বিজেপির উচ্চ পদস্থ ৪৩ নেতাকে বহিস্কার করতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। বহু নেতা টিকিট না পেয়ে দল ছেড়ে বিজেপির বিরুদ্ধেই নির্বাচনে কাজ করছে। রাজনৈতিক ময়দানে এরকম পরিস্থিতি ভারতীয় গনতন্ত্রে এর আগে ঘটেনি। রাহুল সিনহা, মুকুল রায়দের নিয়ে এরকম দল বদলের সংবাদ মাধ্যমে একাধিকবার উঠে এসেছে। এমনকি বেশ কিছু জেলায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের সময়ে বিহার ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলায় চাইছেনা নেতৃত্ব ।
পাশাপাশি অনেকেই এটাও বলছেন যে, দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিধানসভা নির্বাচনের মত গুরুত্বপূর্ণ ভোটে যাওয়া মোটেও বিজেপির জন্য ভালো নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতৃত্বদের ব্যাখ্যা , অতিসম্প্রতি বিজেপির যুব মোর্চার কমিটি ভেঙে দেওয়া, দিলীপ ঘোষ বনাম মুকুল রায় লবি বিবাদ আর দিলীপ ঘোষের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করা মন্তব্য বাঙালি ভোটার সমাজ ভালো মনে নেয়নি। এমনকি তৃণমূল থেকে আসা কয়েক জন ব্যক্তি পদ পেয়ে এমন কিছু কাজ করেছে যা বিজেপির সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর। মানুষ যদি তৃণমূলের ওপর তৈরি ক্ষোভ বিজেপির বাক্সে দেয় তাহলে এই লোকগুলো মন্ত্রী হয়ে সাপের সাত পা দেখবে। সংঘ পরিবার এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের তৈরি টিম যে ভাবে সাংগঠনিক বিবাদে জড়িয়ে পড়া নজরদারি করেছে।
এপ্রসঙ্গে বিজেপির এক সুত্রের দাবি, সংঘ পরিবার মনে করেছে বিজেপি যদি বর্তমান সংগঠন নিয়ে ভোটে যায় তাহলে ভোটের আগেই এমন কিছু অপ্রিয় ঘটনা ঘটত যাতে বিজেপির মুখে চুন কালি লাগত।
বিজেপি সুত্রের খবর, বিজেপির সংগঠনের মাথা থেকে সুব্রত চ্যাটার্জিকে সরানো যদি মুকুল রায়ের শক্তি বৃদ্ধি হয় তাহলে কৈলাশ বিজয় বর্গীয়কে বাংলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অর্থ মুকুলের শক্তি কমা। নতুন সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী মুকুল ঘনিষ্ঠ এটা যারা ভাবছেন তারা যুক্তি দেবেন, দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য নেতৃত্বের কয়েক জনকে অপসারণ হলে মুকুল রায় পূর্ণ শক্তি পাবেন সংগঠনে।কারণ, নতুন সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী রাজ্য সংগঠনকে এখনও নিজের তালুর মধ্যে আনতে পারেননি। সেক্ষেত্রে মুকুলের ওপর নির্ভর করতে হবে। এমন ভাবনার যারা বিজেপিতে আছেন তারাও ভুল করছেন। সুত্রের যুক্তি, বিজেপি ক্যাডার বেস পার্টি। বিজেপি ক্ষমতায় আসার থেকে মজবুত সংগঠনে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ত্রিপুরার ঘটনা ব্যতিক্রমী। ত্রিপুরা এবং আসামে বিজেপি নিয়মতন্ত্র ভেঙে কিছুটা ভুগছে। ফলে সেই অভিজ্ঞতাও বিজেপির আছে। বাংলায় বিজেপি ভুলের পুনরাবৃত্তি চায় না।
বিজেপির আরেক সুত্রের দাবি, বাংলার সংগঠনে কোথায় কি হচ্ছে তা নজর রাখছেন জেপি নাড্ডা ও অমিত শাহ। তারা জানেন সংগঠনের কে কি করছে এবং কখন কোথায় কার সাথে যোগাযোগ রাখছে।
বিজেপির সংগঠনের অনেক বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও সহ ঘুরছে গত কয়েক মাস ধরে। বিজেপির বাংলা সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব তা সামাল দিতে পারেনি। সংগঠনের সমস্যা সমাধান করতেও ব্যর্থ। যারা সংগঠন সামলাতে ব্যর্থ তারা সরকারে এলে সরকার সামলাবে কি করে। শুধু তাই নয় অনেকেই দলের আভ্যন্তরীণ তথ্যও গোপন রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাও জেপি নাড্ডা এবং অমিত শাহ জানতে পেরেছেন।
সব মিলিয়ে বিজেপির সংগঠনকে শক্তিশালী এবং আদর্শিক করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চায়। আর সেকারণেই এত তাড়াতাড়ি রদবদল। এই রদবদল কেবল রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে হবে এমন নয় বহু জেলার সংগঠনেও রদবদল করা হবে।
No comments:
Post a Comment