দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর, ০৪ অক্টোবর:
২০১৭ সালে 'দেবার্ঘ্য - এবার পুজো ওদেরও হোক' নাম দিয়ে পথ চলা। হাতেগোনা কয়েক জন। সাধারণ হিসেবে পরিচিতি। এঁদের কেউ বিশ্বভারতীর পড়ুয়া কেউবা চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রামপুরহাট, ভেদিয়া, কলকাতায়। কিন্তু, সকলেই এতদিন ছুটেছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে শুধু মাত্র 'অপু-দুর্গা'দের মুখে হাসি ফোটাতে। পুজোর আগে বীরভূমের প্রান্তিক কিছু এলাকার শিশুদের হাতে নতুন জামা তুলে দিতে ছুটে চলেছেন দেবার্ঘ্য। এ বছরের লক্ষ্য প্রায় ৩৬০ জন শিশুকে পুজোর আগে উপহার দেবে নতুন জামা। যার প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। গ্রামে গ্রামে পৌছে শিশু দের জামার মাপ নিয়ে ওরা জামা তৈরি করে দেয়। যাতে ঠিক মত পরতে পারে ওরা।
পড়ুয়ারা জানালেন, এই বছর বোলপুরের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় এবং শহরের কিছু অংশে ১০৮ জন ছেলেমেয়েকে নতুন জামা দেওয়া হয়। পরের বছর সংখ্যা কিছু বাড়ে। এ বছর তারা পায়ে পায়ে পৌঁছেছে তিনে। আগের দু'বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে নতুন জামা দিতে এখন থেকে লেগে পড়েছেন তাঁরা।
পুজোর দু'মাস আগে থেকে বীরভূমের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত উপেক্ষিত এলাকায় পৌছে শুরু হয় শিশু নির্বাচন। এখানেই থেমে থাকা নয়। কয়েকটা জমা কাপড় কিনে দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চায় নি এরা। শিশু দের দেহের মাপের হয়। যা পেয়ে শিশুরা কিছুদিন পরতে পারে। তাই রীতিমত শিশুদের জামার মাপ নেওয়ার কাজ হলে গ্রামে ঘুরে ঘুরে । জামা তৈরি হয়ে গেলে শুরু হয় নাম ডেকে মাপ দেখে জামা দেওয়া।
কবে থেকে শুরু এই কাজ? বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকে শুরু হযেছে নতুন জামা বিতরণ। চতুর্থীর সন্ধ্যায় থ্যালাসেমিক কিছু শিশুকে নতুন জামা উপহারের মধ্যে দিয়ে কাজ শেষ হয়।
দেবার্ঘ্য সদস্য বিশ্বভারতীর ছাত্রী দেবস্মিতা চ্যাটার্জ্জীর, কথায়, "মাপ নিতে গিয়ে যখন দেখি, ওরা আগের বছরে দেওয়া আমাদের জামা পরে আছে কিংবা ছোট্ট মেয়েটা কানের কাছে এসে বলছে, 'আমার কিন্তু হলুদ রংয়ের জামা চাই', কিংবা মাপ নেওয়ার সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যে শিশুটি খুব কেঁদেছিল নতুন জামা পেয়ে সে খিলখিল করে হাসছে, এগুলোই আমাদের সব থেকে বড় প্রাপ্তি।আমরা কোন সংগঠন গড়ে নাম চাই না। শুধু একটু আনন্দ পাবার জন্য এটা করি প্রতিবছর। "
২০১৭ সালে 'দেবার্ঘ্য'র সদস্য বিশ্বভারতীর এক ছাত্রী একটি রিয়েলিটি-শো খেলতে গিয়ে যে টাকা পান তার পুরোটাই দিয়ে দিয়েছিলেন নতুন জামা কেনার জন্য। সেই বছর থেকে শুরু করে প্রতিমাসে সদস্যরা হাতখরচের টাকা থেকে কিছু পরিমাণ টাকা জমাতে শুরু করে। এরপর প্রত্যেকের যত টাকা জমা হয় বছর শেষে একবারই পুজোর সময় তাঁরা শিশুদের নতুন জামা কিনে দিয়ে সেই টাকা খরচ করেন। সদস্য শুভজিৎ পাঁজা, সৌরভ সাহা, কালীপ্রসন্ন মণ্ডলরা জানালেন, কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই, ব্যানার নেই দেবার্ঘ্যের। এই কাজের প্রচার মাধ্যম একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া। অনেকেই নতুন জামা কিনে দিয়ে কিংবা আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। এ ভাবেই একটু একটু করে তাঁদের এই কাজের পরিসর বাড়ছে।আর আমরা আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছি। এটাই প্রাপ্তি।
এ বছরই প্রথম বোলপুর মহকুমা ছেড়ে রামপুরহাট মহকুমার কিছু এলাকা এমনকি বর্ধমান জেলারও একটা অংশে নতুন জামা দিচ্ছেন তাঁরা। বোলপুরের গয়েশপুর, কসবা, নূরপুর, সুপুর, কালীমোহনপল্লী, তারাপীঠের কবিচন্দ্রপুর, ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন বেলপাহাড়ি এবং বর্ধমানের ভেদিয়া ঘাটোয়ালপাড়ার শিশুদের নতুন জামা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বেশ কিছু বয়স্ক মানুষকে ধুতি, শাড়ি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে ।
প্রত্যেক শিশুর জামার মাপ নেওয়া প্রসঙ্গে ভেদিযার বাসিন্দা ছাত্র মুকুল মাহাতো
জানালেন, বয়স একই হলেও মাপের হেরফের হয়। যাদের জন্য জামা কেনা, পুজোর দিনে তারা যদি সেটা ভাল করে পরতেই না পারে তাহলে সেটা দেওয়ার কোনও মানে হয় না। তাই প্রত্যেক শিশুর আলাদা করে মাপ নেওয়া হয়। দেবার্ঘ্য-র এক সদস্য বললেন, "আমরা বাচ্চাগুলোকে কোন করুনা করি না। 'অপু-দুর্গা' বলি। ওরাই আমাদের পথ।"
পি/ব
No comments:
Post a Comment