অন্ত্যজদের পুজোর করছেন ব্রাহ্মণ পরিবার - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 28 October 2019

অন্ত্যজদের পুজোর করছেন ব্রাহ্মণ পরিবার



দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট, ২৮ অক্টোবর:        মা এখানে দক্ষিণাকালী। কারণ মা এখানে দক্ষিণমুখী। একসময় এই পুজো শুরু করেছিলেন সমাজের অবহেলিত মানুষজন। কিন্তু কালক্রমে সেই পুজো ধরে রেখেছেন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়। তারাপীঠ যাওয়ার পথেই ৫০০ বছর পুরনো এই পুজো দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান দূরদূরান্তের মানুষ। এমনকি তারাপীঠের সেবাইতরাও এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন।



বীরভূমের রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামে বর্তমানে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় বসবাস শুরু করলেও এক সময় গ্রামে অন্ত্যজদের বসবাস ছিল। কথিত আছে সে সময় দ্বারকা নদী পথে ব্যবসা করতে আসা বণিকদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুঠ করত অন্ত্যজরা। শক্তির আরাধনা করতে অন্ত্যজরা। প্রথম দিকে গ্রামের দক্ষিণ দিকে বেদি গড়ে পুজো শুরু করে। এখন সেই এলাকা কালী কিয়ারি নামে পরিচিত। সেখানেই রয়েছে মায়ের বেদি। নিয়মিত পুজো হয় সেই বেদিতেও। আষাঢ় মাসের প্রতি মঙ্গল ও শনিবার সেখানে বলি এবং পুজো হয়। পরে রি পুজো পাঁচ শরিকের দায়িত্বে চলতে থাকে। একাকটি শরিক ৭২ দিন করে পুজোর দায়িত্ব পালন করে আসতেন।



 সময়ের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়েছে অন্ত্যজ পরিবার গুলি। দেখুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রতন ভট্টাচার্য বলেন, “প্রায় ৪০০ বছর আগে গ্রামের এক প্রান্তে কাঁদরের ধারে চাষ করছিলেন পার্শ্ববর্তী সাতঘরিয়া গ্রামের কোনাই পরিবারের কয়েকজন মানুষ। তারাই কোন এক দিন কাঁদরে নেমে শিলা মূর্তি উদ্ধার করেন। তাঁরা প্রথম দিকে সাতঘরিয়া গ্রামের তেরোল পাড়ায় পুজো শুরু করেন। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে তাঁরা বেশিদিন পুজো চালাতে পারেননি। সে সময় অবিভক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে দেখুড়িয়া গ্রামে এসে জমিদারী ক্রয় করেন শতঞ্জীব ভট্টাচার্য। সেই থেকেই বংশানুক্রমে পুজো করে আসছেন ভট্টাচার্য পরিবার। ভট্টাচার্য পরিবারের পাঁচ শরিক পুজো করে আসলেও এখন তাদের দৌহিত্ররা পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।



এবার পুজোর দায়িত্বে ছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের দৌহিত্র দীপক মুখোপাধ্যায়, তন্ময় মুখোপাধ্যায়, বিট্টু মুখোপাধ্যায়রা। তাঁরা বলেন, শিলা মূর্তির উপর মায়ের পুজো হয়ে আসলেও সাড়ে তিনশো বছর আগে মায়ের মৃন্ময়ী রূপ প্রতিষ্ঠা করে পুজো হয়ে আসছে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের উচ্চতা তিলে তিলে বেড়ে ওঠে বলে মানুষের বিশ্বাস। বর্তমানে মায়ের উচ্চতা ১৪ হাত। এক সময় মায়ের কোন ছাউনি ছিল না। কয়েক বছর আগে গ্রামের মানুষ মায়ের মাথায় ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমিদারের আমলে মায়ের জন্য রেখে যাওয়া দেবত্ব সম্পত্তি থেকেই মায়ের পুজো হয়ে আসছে। মা কে সাজানো হয় ডাকের সাজ দিয়ে। এই ডাকের সাজে মাকে সাজাতে বহু ভক্ত বছরের পর বছর অপেক্ষা করে থাকেন। মানত করার পর কমপক্ষে দশ বছর পর মাকে ডাকের সাজ পরানোর সুযোগ পান ভক্তরা। এবার পুজোর রাতে শতাধিক ছাগবলি দেওয়া হয়েছে।




পি/ব

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad