বন্ধ কারখানা, মাথায় হাত শ্রমিকদের - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 28 October 2019

বন্ধ কারখানা, মাথায় হাত শ্রমিকদের



দেবশ্রী মজুমদার, সিউরি, ২৮ অক্টোবরঃ       সিউড়ি থেকে বক্রেশ্বর উষ্ণপ্রস্রবন যেতে পড়ে তাঁতিপাড়া গ্রাম। সেখানেই গড়ে উঠেছিল কৃষিভীত্তিক শিল্পের অন্যতম বৃহৎ শাখা আরামবাগ হ্যাচারির এই ইউনিট। সেই ১৯৭৯ সালে শুরু যার পথ চলা। বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে কম করে পাঁচশো কোটি। মুরগীর ছানা পালন, ডিম উৎপাদন, খাবার তৈরী, মাংসের বিক্রি মিলে এখন বিরাট কলেবর কারখানার। স্থায়ী ও ঠিকা মিলিয়ে শ-দুয়েক শ্রমিকের রুটি-রুজির একমাত্র ভরসা এই আরামবাগ। আজ বন্ধের নোটিশে গ্রামের দু-শো শ্রমিক পরিবারের আঙিনায় আছড়ে পড়েছে নিকষ কালো ছায়া।



  নব দুলই। বিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করছেন কোম্পানীতে। বেতন সাকুল্যে ছয় হাজার টাকা। এক মেয়ের  বিয়ে দিয়েছেন। আর এক মেয়ে বিকলাঙ্গ। কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, “এবার খাব কি! মেয়েকেই বা বাঁচিয়ে রাখব কি করে”। সকাল হতেই মুখ চুন করে কারখানার পেটের সামনে বসে পড়েন শ্রমিকরা।



 সিআইটিইউ সকাল থেকেই কারখানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে জোরালো আওয়াজ তুলেছে, ‘কারখানা খুলতেই হবে। এভাবে কোম্পানী পালাতে পারে না”। কারখানার গেটে ঝোলানো নোটিশে আরামবাগ কর্তৃপক্ষ অজুহাত দিয়েছে, ‘কোম্পানী নোট বাতিল ও জিএসটি থাবায় বিধ্বস্ত। আর্থিক লোকসানে জর্জরিত। এছাড়াও শ্রমিকদের একাংশ কর্তৃপক্ষের সাথে অভব্য আচরন করছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে। নিয়মনীতি মানছেন না”।  এলাকার মানুষের সহায়তায়, জমিদানের উপর ভীত্তি করেই এই কোম্পানীর পথ চলা শুরু।



এলাকার বিশাল বাজারের কেনাবেচা নির্ভর করে এই কোম্পানীর শ্রমিকদের আয়ের উপর। এলাকার সদিচ্ছাকে অবলম্বন করেই কোম্পানী আজ বীরভূমের সর্ববৃহৎ উৎপাদন ইউনিটে পরিণত  সিআইটিইউ-র নেতা সাধন ঘোষ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এত বছরের পুরোনো কারখানা। কি করে সাহস পেল, কার মদতেই বা পেল এমনভাবে রাতারাতি কারখানা গোটাতে তা প্রকাশ পাওয়া  জরুরী। আমরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি করছি। লাভ-ক্ষতি যাই হবে আলোচনার মাধ্যমে তা মেটাতে  হবে। কারখানা বন্ধ করা চলবে না কোনোমতেই”।



  আরামবাগ হ্যাচারীর বক্রেশ্বর ইউনিটের ম্যানেজার প্রতাপ সিংকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি কিছু বলব না। বন্ধের কারন নোটিশে দেওয়া আছে। এক্ষুনি কারখানা খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই”। যা শুনে মুষড়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। প্রায় দুশো শ্রমিক। কেউ স্থায়ী কেউ অস্থায়ী। ঠিকা শ্রমিকরা কাজ করতেন দৈনিক ১৭৫ টাকা বেতনে। স্থায়ীদের বেতন ছিল চার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে ছিল। বকেয়া রয়েছে দু-মাসের বেতন। বোনাসও পাননি এবার পুজোয়। দরকষাকষি চলছিলই।



এবার তো কারখানার দরজাতেই পড়ে গেল তালা। বছর দুয়েক আগেই পাশের ব্লক খয়রাশোলে শাসক দৌরাত্বে অতীষ্ট হয়ে একইভাবে পাততাড়ি গুটিয়েছিল এমনই কৃষি ভীত্তিক শিল্পের বিশ্বখ্যাত থাই সংস্থা ‘সিপিএফ’। কাজ হারিয়ে অনটনে দুমড়ে যাওয়া মাজা সোজা করতে পারেননি সেই কোম্পানীর উপর নির্ভরশীল প্রায় বারো’শ মানুষ। এবার মাজা ভাঙল পাশের ব্লক অর্থাৎ রাজনগরের তাঁতিপাড়ার দু’শো পরিবারের। আলোর উৎসবে অন্ধকার গ্রাসে তাঁতিপাড়ার শ্রমিক মহল্লা।



পি/ব

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad