দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট, ২৮ অক্টোবরঃ অমানবিক তিনটি সরকারি হাসপাতাল! বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু তরতাজা প্রাণের! মুখ ফিরিয়েছে একের পর এক পিজি, নীলরতন, কলকাতা মেডিক্যাল। হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের মুরারই ২ নম্বর ব্লকের কাঠিয়া গ্রামে।
মৃত যুবকের নাম রাহুল শেখ (১৯)। বাড়ি নন্দিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঠিয়া গ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিল রাহুল। সে মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব ছোটতেই তার হিমোফিলিয়া রোগ ধরা পড়ে। এরপর থেকে বহু চিকিৎসা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে কার্যত গৃহবন্দি রাখা হয়েছিল রাহুলকে। কারণ খেলতে গিয়ে বা কোন কারনে শরীরে কাটাছেঁড়া হলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না। এটাই রগের লক্ষণ। তাই সব সময় নজরে রাখত পরিবারের লোকজন। ২৪ অক্টোবর হঠাতি মুত্রদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরিবারে লোকজন তাকে সোজা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলজে হাসপাতালে ভর্তি করে।
সেখানে ‘ফ্যাক্টর আট’ ওষুধ দেয়। পরের দিন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসা করার পর পাঠানো হয় কলকাতার পিজি হসাপাতালে। কিন্তু শয্যা নেই অজুহাত দেখিয়ে তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এরপর রাহুলকে নিয়ে নীলরতন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাতভর ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফেরে অসহায় পরিবার। সোমবার বিকেলের দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত যুবকের দাদা সামিরুল সেখ বলেন, “ভাইটা বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। কলকাতার কোন হাসপাতালে চিকিৎসা তো দুরের কথা ভর্তি টুকুও নেয়নি।
নীলরতন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার কটাক্ষ করে বলেন এটা সাইকেল স্ট্যান্ড নয়, যে আসবে জমা নেব। এখানে চিকিৎসা হবে না। এভাবেই রাতভর কখন পিজি, কখন নীলরতন, কখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে ভাইকে ভর্তি করতে পারিনি। শেষে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে ভাইয়ের মৃত্যুর দিন গোনার জন্য আমরা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসি”।
পরিবারের ক্ষোভ, এক সরকারি হাসপাতালে তাদের বলা হয়, হাসপাতাল সাইকেলের গ্যারেজ নয়। আমাদের প্রশ্ন যদি চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া যাবে তাহলে ওই সমস্ত হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া ভালো। তাদের যে অভিজ্ঞতা হল যাতে আর কারও না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা।
পি/ব
No comments:
Post a Comment