দেবশ্রী মজুমদার: মহাকাশে পাড়ি দিতে দিতে ব্ল্যাক হোলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সিমাইয়ের পায়েস বনে যাওয়ার গল্প নয়। এ এক আকাশ চুম্বি দুর্নীতির গল্প। হেঁয়ালি করে কেউ বলতেই পারেন, তা বটে! এতো ছন্ন ছাড়া, আকাশ ছাড়া, অনেক দূরের কাহিনী।
পছন্দ সই না হলে সাদা কালো ছবির চিত্রনাট্য শোনায়। দেখুন মিল খুঁজে পেলেও পেতে পারেন!
পুলিশ মটোর বাইকে ধাওয়া করে পিছু নিয়েছে একটি ট্যাক্সির।ট্যাক্সি ড্রাইভার ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পাশের সিটে রুমা গুহ ঠাকুরতা। হঠাৎ হাতে টিনের তেলের জ্যারিকন ও ফানেল নিয়ে এক জলাশয়ে নেমে পড়লেন ভানু। পুলিশ কর্তা তাকে জল থেকে উঠে আসতে বললে, ভানু বলে উঠলো, আমি এখন জল পুলিশের আণ্ডারে! কমেডির এই দৃশ্য কোন ছবির তা আর বলে দিতে হবে না বাঙালি দর্শককে! "আশি আসিও না" সিনেমায় ভানুর এই যুক্তি হাস্যকর মনে হলেও, মনে করিয়ে দেয় নভশ্চর মিস মাইকক্লেইনকে।
মাইকক্লেইন মহাকাশে থাকা কালীন তাঁর স্ত্রী যথা মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন গোয়েন্দা কর্তা মিস সামার ওয়ার্ডেনের ব্যাঙ্ক একাউন্ট হ্যাক করেন। টাকা তুলেছেন কি তোলেন নি, সেটা পরের প্রশ্ন। কিন্তু তিনি কী বললেন? মিস মাইকক্লেইনের সোজা সাপটা উত্তর--- মহাকাশে নিজের স্ত্রীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট হ্যাক করে কোন অন্যায় তিনি করেন নি। প্রশ্ন যে অপরাধ পৃথিবীর মাটিতে শাস্তি যোগ্য, তা কী মহাকাশে প্রযোজ্য? মহাকাশের তো কোন সীমা নেই! আইনের হাত কী এত লম্বা, যা মহাকাশ ছুঁয়ে যায়? নভশ্চর মিস মাইকক্লেইন ও মিস সামার ওয়ার্ডেন লেসবিয়ান দম্পতি। অর্থাৎ দুজনেই মহিলা। কিন্তু সমকামী হিসেবে স্বামী স্ত্রীর মতো বসবাস করেন। ২০১৪ সালে ম্যাকক্লেইন ও ওয়ার্ডেনের পরিচয় ও বিয়ে। বিয়ের কিছুদিন পর ওয়ার্ডেন এক সন্তানের জন্ম দিলে, ম্যাক তাকে দত্তক নিতে চান। তারপর থেকে শুরু হয় মনোমালিন্য। সেটা এমন তিক্ততায় পৌছায় যে দুজনের ডিভোর্স আবেদন এখন প্রক্রিয়ার মধ্যে।
যাইহোক, ওয়ার্ডেনের অভিযোগের ভিত্তিতে নভশ্চর ম্যাকক্লেইনকে মাটিতে নামানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে নাসা।
হ্যাকিং দুনিয়ার বস স্কটল্যান্ডের গ্যারি ম্যাক কিননকে মনে পড়ে? ২০০০-২০০১ সালে নাসা ও পেন্টাগনের ইনফরমেশন সিস্টেমে হ্যাক করেন তিনি। আরেকজনের নাম সকলের জানা। তিনি হলেন কেভিন মেটনিক। তাঁকে বলা হয় হ্যাকারদের গুরু। কুড়ি হাজার ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করেন তিনি।
এসব এখন গল্প। এসব ঘটনা পৃথিবীর। মাটির। এই অপরাধ প্রবণতা ছেয়ে গেছে গোটা পৃথিবী। আইনের হাত লম্বা। তাই একদিন না, একদিন তাকে ধরা পড়তেই হয়!
এখন দেখার, মহাকাশে এই দূর্নীতির প্রতিকার কেমন ভাবে হয়? আর এটাই এখন থাউজেণ্ড ডলারের প্রশ্ন! এমনিতেই মানুষ পৃথিবীর পর মহাকাশ পাড়ি দিয়ে জঞ্জালে ভরে দিচ্ছে সেই সব জায়গা। এবার দুর্নীতিকেও সঙ্গে নিয়েছে। মহাকাশকেও ছাড় দিচ্ছে না তারা!
তবে মিলবে না রেহাই। তাই তাকে মহাশূন্য থেকে নিচে নামানো হয়েছে। নেটগুরু গুগলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন সংক্ষেপে আই এস এস গড়ে ওঠে। যার কাজ হলো মহাকাশে অপরাধ মূলক কাজকে আইনী আওতায় আনা! ব্যোমচারী হওয়ার সুবাদে কোন রক্ষা কবচ তাদের জন্য রাখা হয় নি।
আর তার জন্য মহাকাশে প্রথম অপরাধে অভিযুক্ত মার্কিন মহাকাশচারী অ্যান ম্যাকক্লেইন মহাকাশচারী অ্যান ম্যাকক্লেইনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী জালিয়াতির অভিযোগে যেগুলো বলেছেন, তার পূর্ণ তদন্ত হবে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢোকার অভিযোগ উঠেছে নভশ্চর ম্যাকের বিরুদ্ধে৷ মহাকাশে ঘটা প্রথম কোনো অপরাধ এটি৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা- নাসা এখন ঘটনাটির তদন্ত করছে৷
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অ্যান ম্যাকক্লেইনের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছিলো৷ এর মধ্যেই স্পেস স্টেশন থেকে এই অপরাধ করেন ম্যাকক্লেইন৷ আর তা সোরগোল ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে।
ম্যাকক্লেইনের স্ত্রী সামার ওয়ার্ডেন মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা৷ ওয়ার্ডেন জানিয়েছেন, ম্যাকক্লেইন চুরি করে তার খরচের হিসাব দেখছেন বুঝতে পেরে তিনি চমকে গেছেন।
ম্যাকক্লেইনের বিরুদ্ধে পরিচয় চুরি করার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওয়ার্ডেন৷ তবে ম্যাকক্লেইনের দাবি, তিনি ভুল কিছু করেননি৷ এর আগেও অনেক বার ওয়ার্ডেনের সম্মতিতেই তিনি তাদের আয়-ব্যয়ের ‘যৌথ' হিসেব দেখেছেন। ম্যাকক্লেইনের আইনজীবী রাস্টি হার্ডিন জানিয়েছেন, তার মক্কেল ‘বেআইনি কিছু করেন নি। সব অভিযোগ অস্বীকার' করেছেন এবং তদন্তে ‘সব ধরনের সহযোগিতা' করছেন৷ তাকে এরই মধ্যে স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফিরিয়েও আনা হয়েছে৷
মহাকাশের প্রথম অপরাধ, আইন কী বলে?
মহাকাশে কোনো দেশের সীমানা নেই৷ ফলে সেখানে কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে, তার বিচার কোন আইনে হবে, সে নিয়ে কোন মতভেদ নেই৷ কোন দেশের নাগরিক হিসেবে, অপরাধীর নিজের দেশে বিচার হবে। তবে স্বার্থের কারণে অন্য দেশ তাকে নিজের দেশে বিচারের প্রয়োজনে নিয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, মহাকাশ সংস্থাগুলোর মাথায় মহাকাশ স্টেশনের মালিকানায় রয়েছে পাঁচটি দেশ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ক্যানাডা,জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
মহাকাশে সংগঠিত অপরাধের জন্য রাখা হয়েছে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থাও৷ ফলে যে দেশের অপরাধী, সে দেশ চাইলেই নিজের দেশের নাগরিক হিসেবে মহাকাশচারীকে নিজের দেশে ফেরত নিয়ে বিচার করতে পারবে৷ তবে, আইনী কচকচানি যাই হোক, এই দম্পতি কী আবার শ্যামলে শ্যামল নিলীমায় নীল হতে পারবে? তবে স্বস্তির! মহাকাশে প্রথম দুর্নীতি করলেন কোন আমেরিকান। ভারত সেখানে কোন সুযোগ পায় নি!!! বঞ্চিত ভারত!!!
পি/ব
No comments:
Post a Comment