স্বয়ং তারা মায়ের ঘরে চুরি - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 29 August 2019

স্বয়ং তারা মায়ের ঘরে চুরি




দেবশ্রী মজুমদারঃ      স্বয়ং তারা মায়ের জায়গা চুরি। এত বড় কেলেঙ্কারিতে কারো হেলদোল নেই!  তারা মায়ের মন্দিরের জায়গা চুরির হদিশ আজও মেলেনি। কমিটির অগোচরে কীভাবে বেআইনি জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হতে পারে, তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না। তারাপীঠ জীবিতকূণ্ডে ২ শতক জায়গা কম। ১৯৪০ সালে সরকারের তরফে যে সংশোধনী করা হয়, সেখানে জমির পরিমাণ দেখানো হয় ২.৪৬ শতক। অথচ আগে সেই জমির পরিমাণ দেখানো ছিল ২.৪৮ শতক। সন্দেহজনক ভাবে এই জমির হিসেব নতুন দলিলে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু নিয়ম মেনে মন্দির চত্বরের জমি ,সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রয় যোগ্য নয়। তবে?     



মন্দির কমিটি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে যোগাযোগ করা হলেও, কারো কাছে সদুত্তর পাওয়া যায় নি। এদিকে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে, মন্দিরের পশ্চিম দিকের জায়গা কোন লজের দ্বারা অধিগৃহীত থাকতে পারে। মাড়্গ্রাম থানার ভূমি রাজস্ব দফতরের অধীন তারাপীঠ মন্দির। ভূমি রাজস্ব দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ মন্দিরের উত্তর দিকে রাস্তা তৈরীর সময় কিছুটা জায়গা ১৯৫৮-৫৯ সালে সম্ভবতঃ অধিগ্রহণ হয়েছে। তবে বিষয়টা আমার জানা নেই। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মন্দিরের উত্তর দিকের এই রাস্তা  ১৯৫৯ সালের বহু আগে তৈরি।     



 আশ্চর্য হওয়ার আরো বাকি আছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিস রেকর্ডে ৪১৪ পাতায় খতিয়ান দাগ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে ১.৬৬ শতক জমির। কিন্তু দাগের বদল নম্বরে কোন স্বাক্ষর ছাড়াই কলমের আঁচড়ে ১.৬৬  শতক কেটে লেখা হয়েছে ১.৬৪ (অর্থাৎ দুই শতক কম ) শতক।   



 কোলকাতায় জিওলজিক্যাল সার্ভের অফিসে ম্যাপ তৈরী করতে দেওয়া হয়। তাতেও কী সেই জায়গা ফেরত এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। অতঃ কিম? মায়ের জমির চুলচেরা হিসেব এখন কেবল অস্বস্তি বাড়ায়। জমির বর্তমান মালিকানা যাদের সেই মন্দির সেবাইত সমিতিও সেই তিমিরেই।অতীতের ঘটনাবলীতে চোখ রাখলে তারাপীঠে যেভাবে অপরাধমূলক কাজ কর্ম বেড়েছে, সেগুলির কাছে মন্দিরের জমি চুরি তো তুচ্ছ ঘটনা।       



ইতিহাস ঘাঁটলে তারাপীঠে মায়ের সম্পত্তির মূল অংশীদার হিসেবে কুমার বীরেন্দ্র রায় বাহাদুরের নাম জানা যায়। ১৯৭৪ সালের ১৫ এপ্রিল জমির মূল বন্টন নামা দলিলেও তাঁর নাম রয়েছে। তারাপীঠ নিয়ে যে সমস্ত বই এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত সেখানে কোথাও মুর্শিদকুলি খাঁর রাজত্বের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো বছরের তারাপীঠের ইতিহাস স্পষ্ট নয়।        বিভিন্ন বইতে আবার মুর্শিদকুলি খাঁর শাসনকালে রাজশাহির জমিদার লালা উদয় নারায়নের নাম ও পাওয়া যায়। কয়েক জায়গায় রাজা রামজীবন রায়, কালিদাস রায় ও রাম কান্ত রায়ের নামের ও উল্লেখ আছে। 



লোকমুখে শোনা যায়, কুমার বীরেন্দ্র নাথ রায় বাহাদুর তাঁর সম্পত্তির কিয়দংশ দেবোত্তর করেন। সেখানেই মন্দির তৈরী হয়। অনুমান করা যায়, তিনি নাটোরের জমিদার ছিলেন। তাঁরই নিকট আত্বীয়া রানী তারাদেবী নিত্য অন্নভোগের প্রচলন করেন। যা তারা মা সেবাইত সমিতির ব্যবস্থাপনায় আজও চলে আসছে। প্রথমে মন্দিরের ৫২ জন পাণ্ডা মিলে সেবাইত ট্রাস্টি গঠন হয়। তাঁদের বংশধর পুরুষানাক্রমে মায়ের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী। মন্দিরে মায়ের সেবা, পুজো, ভোগদান সমস্ত বিষয়ে তাঁরাই মূখ্য কার্যাবলী তৈরী করেন। কিন্তু তাঁরা কেউ মন্দিরের জীবিত কূণ্ড পুষ্করিণীর দুই শতক জায়গা কমে যাওয়া নিয়ে ভাবিত নন। সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়কেও প্রশ্ন করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় নি।       



 দলিলের মূল বন্টন নামা থেকে জানা যায়, মায়ের সম্পত্তির পরিমাণ ২.৯৮ শতক। মায়ের মন্দিরের পাশেই ৮২ শতক জায়গায় রয়েছে জীবিত কুণ্ড। সেখানেই ১.৬৬ শতক জমিতে জীবিত কুণ্ডের পাহাড় যা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য। সেই ১.৬৬ শতক জমি থেকেই ২ শতক জমির কোন হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। মন্দিরের জমির কিছুটা অংশ আচমকা উধাও হওয়া নিয়ে যেমন কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। মায়ের সম্পত্তিতে ছেলের অধিকার তো থাকবেই! তবে এই দুই শতক কোন সুসন্তান আত্মসাৎ করল, তার উত্তর কোন দিন মিলবে না!



পি/ব 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad