পর্নো : ভয়াবহ এক স্লো পয়জন! - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 1 June 2019

পর্নো : ভয়াবহ এক স্লো পয়জন!

ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নো এবং পর্নোগ্রাফির অবস্থান কোথায় সেটা আমরা সবাই জানি, তাই ওগুলো সম্পর্কে আলোচনা করে সময় নষ্ট করবো না। কারণ আমি জানি, কাউকে জ্ঞান বা উপদেশ দিয়ে পর্নো এবং পর্নোগ্রাফি থেকে বিরত রাখতে পারবো না।   

আমি সাদামাটাভাবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্নো আমাদের ব্রেনকে কীভাবে ভুল পথে প্রোগ্রাম করে শারীরিক অক্ষমতা সৃষ্টি করছে, কীভাবে আমাদের সোশ্যাল এনগেজমেন্টকে ব্যাহত করছে, আমাদের পারিবারিক জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে... ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

আমি কোনো সিদ্ধান্তে যাবো না। শরীর আপনার, মন ও আপনার। তাই পোস্টটি পড়ার পর আপনি নিজে চিন্তা করবেন এবং সিদ্ধান্ত নেবেন আজকের পর থেকে পর্নো দেখবেন কিনা...   

নিউরোসাইন্স বলে, শরীরের মতো আমাদের মস্তিস্কও যে কোনো অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আমরা যা দেখি, শুনি, করি, শিখি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে আমাদের মস্তিস্ক যে ইনপুটগুলো পায় সেগুলোর উপর ডিপেন্ড করে আমাদের মস্তিস্কের এই প্যাটার্ন আবার প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে।

ছোটবেলার ধর্মীয় শিক্ষা, পিতা-মাতা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দর্শন, সামাজিক দায়বদ্ধতা, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় উঠে আসা বিভিন্ন টপিক, সেমিনারের গুরু-গম্ভীর আলোচনা, প্রেমিকার সাথে রোমান্টিক কথোপকথন, এমনকি আপনি মনকে শান্ত করার জন্য অথবা টাইমপাস করার জন্য যে বই পড়ছেন, গান শুনছেন বা টিভিতে যে অনুষ্ঠান দেখছেন... এমন প্রতিটা কাজের মাধ্যমে আপনার ব্রেন সেলে নতুন নতুন ডাটা তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিটি ডাটার বিপরীতে প্রতিটি ঘটনা বা অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত ইনপুটসমূহের একটা যোগসূত্রও তৈরি হয়ে যায় আমাদের মস্তিস্কে। যা পরবর্তীতে একই ধরনের সমস্যা/ঘটনা/অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে আমাদের মস্তিস্ক সেই ডাটাসমূহ এবং ওগুলোর যোগসূত্র অ্যানালাইসিস করে আমাদের চিন্তাশক্তি এবং শরীরকে সে অনুযায়ী কমান্ড দেয় এবং সেভাবেই চালিত করে এবং আমাদের চিন্তাশক্তি এবং শরীর সে অনুযায়ী সাড়া দেয়।

পর্নো এবং পর্নোগ্রাফির কিছু সাইড ইফেক্টস


** নিয়মিত পর্নো দেখার ফলে পুরুষের সেক্সুয়াল অর্গান এক সময় শুধুমাত্র পর্নো দেখার সময়ই পুরোপুরি ইরেক্ট হয়, কিন্তু বাস্তবে যখন কোনো নারীর সাথে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেয় তখন সেটা আর সেভাবে সাড়া দেয় না। কারণ তার সেক্সুয়াল অর্গান পর্নের মোহনীয় নারী শরীর, তাদের নানা কলা-কৌশল, আর্টিফিিশয়াল সাউন্ড এবং বিহেভিয়ার দেখে দেখে ব্রেনের সাথে ওগুলোর যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায়। ফলে বাস্তবে এসেও তার এক্সপেক্টেশন যখন পর্নে দেখা সেই মোহনীয় শরীর, ছলা-কলা, আর্টিফিশিয়াল শীৎকার এবং বিহেভিয়ারকে পায় না, তখন তার অনুভূতিতে সেই আনন্দটা আর জাগে না। এটাকে বলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (ED) । তবে এটা যে শুধুমাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রেই ঘটে তা নয়, মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। 

** অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুজনের একজন হয়ত পর্ণে আসক্ত বা পর্ণ পছন্দ করে কিন্তু আরেকজন পর্ণ মোটেও পছন্দ করেনা বা আগ্রহ পায়না। সেক্ষেত্রে পর্ণ আসক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় জনের কাছে রুচিহীন, হীনমন্য এবং চরিত্রহীন একজন মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। 

** মাত্রাতিরিক্ত পর্নো দেখার ফলে পুরুষদের সাধারণ নারীদের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে। ফলে তারা পর্নে দেখা নায়িকাদের মতো আকর্ষণীয় দেহ এবং চেহারাকে বাস্তবের নারীদের সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পর্নে ব্যবহৃত নারীদের সৌন্দর্য্য মূলত প্লাস্টিক সার্জারি, কড়া মেকআপ এবং এডিটিংয়ের অবদান। তা ছাড়া পর্নে তারা যে শীৎকার ধ্বনি দেয় এবং যে আচরণগুলো করে সেগুলোও মূলত কৃত্রিম এবং ভিউয়ারকে স্টিম্যুলেট করার উদ্দেশ্যেই তৈরি। বাস্তবে জীবনে সেগুলোর সাথে মিল না পেয়ে পর্নো আসক্তরা হতাশ হয়ে পড়েন। হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ এবং অসুখী। 

** নানা ধরনের পর্নো দেখতে দেখতে এক সময় পুরুষ এবং নারী উভয়ের সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট এবং টেস্ট দুটোই চেঞ্জ হয়ে যায়। দেখা গেল, পর্নো দেখার আগে বা পর্নো দেখার শুরুর দিকে একটা পুরুষ আকর্ষণীয় সৌষ্ঠবের কোনো মেয়েকে দেখলে সেক্সুয়ালি অ্যারাউজড হতো, কিন্তু এখন সুপার সেক্সি কোনো মেয়েকে দেখেও তার মধ্যে কোনো ইন্টারেস্ট তৈরি হয় না। কারণ তার রুচি এবং স্বাদ বদলে গেছে। তিনি এখন হয় গে পর্নের দিকে ঝুঁকেছেন, নয়তো চাইল্ড পর্নো অথবা অ্যানিমাল পর্নো...।

** মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপারটি ঘটে। যে মেয়ে পর্নো দেখার আগে বা পর্নো দেখার শুরুর দিকে আকর্ষণীয় কোনো পুরুষ দেখলে সেক্স অ্যাপিল অনুভব করতো, এখন সেটা আর হয় না। কারণ তার স্বাদ এবং রুচিও বদলে গেছে। স্বাভাবিক সেক্সে এখন তার আগ্রহ তৈরি হয় না। তার এখন লাগবে নতুন স্বাদ, নতুন অভিজ্ঞতা। এভাবেই অনেক লেসবিয়ানের উত্থান শুরু হয়। অনেকে জন্ম থেকেই লেসবিয়ান থাকে, কিন্তু বিকৃত পর্নো দেখাও লেসবিয়ান এবং গে রেশিও বাড়ানোর পেছনে বেশি দায়ী। 

** নিয়মিত পর্নো দেখলে মাস্টারভেশনও অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। অতিরিক্ত মাস্টারভেশনের ফলে অনেকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং পরবর্তীতে যৌন জীবনে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মাস্টারভেশনের সময় মূলত তাড়াহুড়ো করা হয় বাই চান্স যদি কেউ দেখে ফেলে বা বুঝে ফেলে। এভাবে দ্রুত অর্গাজম প্রাপ্তি থেকে ব্রেনের মধ্যে প্রোগ্রাম তৈরি হয়ে যায়। ব্রেন ধরে নেয় এরপর থেকে যখনই সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেবে, দ্রুত অর্গাজম দিতে হবে। 

তাই যারা মাত্রাতিরিক্ত মাস্টারভেশনে অভ্যস্ত, পরবর্তীতে কোনো নারীর সাথে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেয়ার সময় ব্রেন তখন তার সেক্সুয়াল অর্গান এবং ফিলিং সেই কমান্ড দেয় দ্রুত অর্গাজম প্রাপ্তির জন্য। এর মূল কারণ হলো আমাদের মাসল মেমোরি বা বডি মেমোরি। এই বডি মেমোরি বা মাসল মেমোরি যদি না থাকত তাহলে কেউ ড্রাইভ করতে পারতো না, গিটার বাজাতে পারতো না, মার্শাল আর্ট-জুডো-কারাতে এগুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে পারতো না। মাসল মেমোরির কারণেই মানুষ চিন্তা করার আগেই দৈহিক অভ্যস্ততার কারণে এগুলো করতে পারে। এটি রিফ্লেক্স অ্যাকশন হিসাবেও পরিচিত। মাস্টারভেশন করতে করতে আমাদের মাসলগুলোও দ্রুত নিঃশেষ হতে হবে এমন একটা টেনশন নিজের ভেতরে অটোম্যাটিক্যালি তৈরি করে নেয় এবং সেই একই প্রেসার স্ত্রীর সাথে মিলনের সময়ও কাজ করে। তবে দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার মূল কারণ শুধু এই রিফ্লেক্স অ্যাকশন বা বডি মেমোরি নয়, আরো একটি বড় সড় কারণ আছে। সেটি হলো ম্যাডোনা/হোর কমপ্লেক্সইস্যু। এই ম্যাডোনা/হোর কমপ্লেক্স ইস্যু নিয়ে লিখতে গেলে আরো একটি নোট লেখা যাবে। 


from ap bangla | অ্যানালিটিক্যাল প্রেস | Analytical Press | http://bit.ly/2IbJrNE

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad