১০ তম এবং ১২ তম পরীক্ষা প্রতিটি শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই শুরু হয় ক্যারিয়ারের সঠিক দিকনির্দেশনা, কিছু হয়ে নিজের বাবা-মায়ের নাম উঁচু করা। কিন্তু, পরীক্ষা এমন একটি শব্দ যেটি শুনলে বেশিরভাগ শিশুই নার্ভাস হয়ে যায়, উত্তেজনা ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতি তখনই আসে যখন শিশুরা শুরু থেকেই ঠিকমতো পড়াশোনা করে না। তারা পড়াশোনার জন্য কোনো সময়সূচি তৈরি করে না। এমতাবস্থায় অভিভাবকদের সন্তানকে সঠিক নির্দেশনা দিতে হবে। তাদের থেকে পরীক্ষার ভয় ও মানসিক চাপ দূর করতে হবে। বেশির ভাগ অভিভাবকই তাদের সন্তানের ওপর ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য চাপ দেন, এতেও সন্তানের ভেতরে উত্তেজনা বাড়ে। আপনিও যদি এটি করেন তবে এড়িয়ে যান। দশম, দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ডেটশীট এসেছে বা আসতে চলেছে, এই বিষয়টি মাথায় রেখে অভিভাবকদের উচিৎ তাদের সন্তানকে এইভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা। তাদের ভেতর থেকে ভয়, নার্ভাসনেস, স্ট্রেস, উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করুন।
১. শিশুর উপর খুব বেশি চাপ দেবেন না
আপনার সন্তানকে সব সময় পড়াশোনার জন্য চাপ দেবেন না। আপনার সন্তানকে সমর্থন করুন । আসুন কোন ধরনের প্রত্যাশা ছাড়াই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই। স্ট্রেস শুধুমাত্র অতিরিক্ত চাপ দিয়ে বৃদ্ধি পায়। এতে পরীক্ষার ফলাফলের পাশাপাশি শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রতিটি শিশুর বোঝার, শেখার এবং চিন্তা করার ক্ষমতা আলাদা। সমস্ত শিশু তাদের নিজস্ব গতিতে শেখে। এমতাবস্থায় অভিভাবকদের অতিরিক্ত চাপ তাদের পরীক্ষা নিয়ে আরও চিন্তিত করে তুলতে পারে। আপনার সন্তানের ক্ষমতা বিশ্বাস করুন।
২. সন্তানের সাথে কথা বলুন
আপনার সন্তান যদি পরীক্ষার চাপে থাকে, তাহলে সে বিষয়ে কথা বলুন। শিশুকে বুঝিয়ে বলুন যে এটি একটি খুব সাধারণ সমস্যা (পরীক্ষার চাপ), যা তারা পরীক্ষার সময়ও অনুভব করেছিল। শিশুর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার যে কোনো সম্ভাব্য প্রশ্ন বা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। কোনো বিষয়ে আপনার সন্তানের বোঝাপড়া, দৃষ্টিভঙ্গি সরাসরি ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন না, কখনো অবহেলা করবেন না। পরীক্ষার সময় আপনার এবং আপনার সন্তানের মধ্যে একটি সুস্থ কথোপকথন হওয়া উচিৎ। এটি করা শুধুমাত্র আপনার সন্তানকে অনুপ্রাণিত করবে না, তবে তার যুক্তি এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও উন্নত করবে।
৩. নিয়মিত তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিন
আপনার ব্যস্ততার সামনে আপনার সন্তানের পড়াশোনাকে অবহেলা করবেন না। আপনার শিশু কী পড়ছে, কখন, কীভাবে পড়ছে সেদিকেও মনোযোগ দিন। তাদের জন্য একটু সময় বের করুন। পরীক্ষা শুরুর ৪-৫ দিন আগে প্রস্তুতি নিলে শিশুর ওপর অনেক চাপ পড়বে। প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝার জন্য একটি টাইম টেবিল তৈরি করুন এবং পরীক্ষার দিন চাপ কমিয়ে দিন। আপনিও আপনার সন্তানের সাথে বসুন, একটি সময়সূচী তৈরি করুন যাতে তার পুনর্বিবেচনার জন্য যথেষ্ট সময় থাকে।
৪. শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিন
পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা হতে পারে। পরীক্ষার সময় আপনার শিশুর খাদ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। শিশুর খাদ্যতালিকায় যাতে প্রচুর পরিমাণে শুকনো ফল, তাজা ফল এবং সবুজ শাকসবজি থাকে তা নিশ্চিত করুন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে শিশু সুস্থ থাকবে। তার একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরীক্ষার সময় সে তার সেরাটা করতে পারবে।
৫. বিরতিও প্রয়োজনীয়
নিজেকে একটানা দীর্ঘ সময় অধ্যয়ন করতে দেবেন না। এতে শরীরের পাশাপাশি মনও ক্লান্ত হবে। শিশুকে পড়াশুনার মাঝে ছোট বিরতি নিতে উৎসাহিত করুন। পাওয়ার ন্যাপ নিতে পারেন। স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে পারেন। আপনি আপনার প্রিয় সঙ্গীত শুনতে পারেন. এতে তাদের মেজাজও সতেজ থাকবে এবং ধ্যান করে তারা আবার বসে পড়তে পারবেন।
৬. কখনও কারও সাথে তুলনা করবেন না
প্রায়শই বাবা-মায়ের অন্য ভাইবোন, বন্ধুদের সাথে তাকে তুলনা করার অভ্যাস থাকে। একটা কথা মনে রাখবেন, প্রত্যেক শিশুরই নিজস্ব সম্ভাবনা থাকে। যে শিশু ১০০ নম্বর আনে, সে সব জানে এমনটা জরুরি নয়। আপনার শিশু যে বিষয়েই পারদর্শী হোক না কেন, অন্য কোনো শিশুও এতে স্মার্ট নয়, তা হয় না। আপনার সন্তানের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ করবেন না। পরীক্ষায় আপনার সন্তানের স্কোর তার প্রকৃত সম্ভাবনাকে প্রতিফলিত নাও করতে পারে। এমতাবস্থায়, কখনই তার নম্বরের ভিত্তিতে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না বা তাকে তার বন্ধুদের সাথে তুলনা করবেন না। নেতিবাচক কথা বলা, অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা শিশুর পরীক্ষার পারফরম্যান্সের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একজন অভিভাবক হিসাবে এই টিপসগুলি অনুসরণ করুন, তারপর দেখুন কীভাবে আপনার সন্তান চাপ ছাড়াই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
No comments:
Post a Comment