আপনার সন্তান মাদকাসক্ত কি না কিভাবে বুঝবেন? - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 30 December 2021

আপনার সন্তান মাদকাসক্ত কি না কিভাবে বুঝবেন?



সন্তান লালন-পালন করা কোনও চ্যালেঞ্জের চেয়ে কম নয়।  শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের স্বভাব এবং আচরণের পরিবর্তন হয়।  এই পরিবর্তনগুলি এতই সহজ যে অভিভাবকরা সেগুলি বোঝেন না বা বয়ঃসন্ধির কারণ বিবেচনা করে নীরব থাকেন এবং এই লক্ষণগুলি উপেক্ষা করতে শুরু করেন।  কিন্তু অভিভাবকরা কি জানেন তাদের এই অবহেলা তাদের সন্তানদের মাদকের শিকার করে তুলছে।


জেনে নিন শিশুটি মাদকাসক্ত কিনা


কিশোর-কিশোরীরা তাদের বন্ধুদের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটায় স্কুল-কলেজ এবং কোচিং ক্লাসে।  তাদের সাথে সময় কাটানোর সময় অনেক সময় তারা ভুল সঙ্গতে পড়ে নেশা করতে শুরু করে, যা অভিভাবকরাও টের পান না।  এখানে আমরা এমন কিছু লক্ষণ দিচ্ছি, যেখান থেকে অভিভাবকরা অনুমান করতে পারেন তাদের সন্তান মাদকের খপ্পরে পড়ছে কি না।  


* শিশু স্কুল-কলেজ ও কোচিং ক্লাস শেষ হলে বাসায় না এসে এখানে-ওখানে গেলে।  


* যখন শিশুটি দেরি করে বাড়িতে আসতে শুরু করে।  


* যদি সে রাতে বন্ধুদের বাড়িতে থাকার জন্য বাবা-মাকে চাপ দিতে থাকে। 


 * শিশু যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পকেট মানি চাওয়া শুরু করে। 


 * যখন সে বেশিরভাগ সময় একা কাটাতে শুরু করে বা আপনার উপস্থিতি তাকে বিরক্ত করতে শুরু করে।  


* নেশার ক্ষেত্রে বাবা-মাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হন।  


* শিশু যখন হঠাৎ উঠে ঘরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে বাইরে যায়। 


 * যে শিশু আগে কখনও মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করেনি এবং এখন হঠাৎ করে চিউইংগাম, টফি, মৌরি, সবুজ এলাচ ইত্যাদি খেতে শুরু করে, তাহলে অভিভাবকদের উচিত নয় বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া।  হয়তো বাজে গন্ধ লুকানোর জন্য তাদের শিশু মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করছে।  


* শিশু স্কুল-কলেজ ইত্যাদি জায়গা থেকে আসার পর যদি তার মুখ থেকে মাউথ ফ্রেশনারের গন্ধ আসে, তাহলেও অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।  


* শিশু যখন দূর থেকে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে তার মানে শিশুটি আপনার কাছ থেকে মুখের দুর্গন্ধ লুকানোর চেষ্টা করছে।  


* শিশুর পকেট বা ব্যাগ থেকে ম্যাচ, লাইটার বা যেকোনো রোল্ড পেপার খুঁজে বের করতে হবে।  


* তার মুখ, বিশেষ করে তার চোখের দিকে ঘনিষ্ঠভাবে তাকান।  


* শিশু দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়লে বা তার খাবারের চেয়ে বেশি খাচ্ছে।  উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো শুধু একটি লক্ষণ, আপনার সন্তান যে মাদকের কবলে পড়েছে তা জরুরি নয়।  শিশুর কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জেনে এবং জিজ্ঞাসা করলেই যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছান। 


 

 বাবা-মা কীভাবে তদন্ত করবেন?


 * যদি আপনার সন্দেহ হয় যে আপনার সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, তাহলে প্রথমে তার বন্ধু ও শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন।  


* তাকে না জানিয়ে তার স্কুল, কলেজ এবং কোচিং সেন্টারে পৌঁছান।  


* শিশুটি যদি আপনাকে সেখানে দেখে তবে লুকিয়ে না থেকে তার সাথে কথা বলুন। 


 * এমন অজুহাত তৈরি করুন, যাতে সে বাস্তবতা না জানে।  


* তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ধরনের পোস্ট করেন সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। 


 * এখনকার শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, তাই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের উপর কড়া নজর রাখুন। 


 * যদি শিশু হোস্টেলে থাকে, তাহলে ওয়ার্ডেন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদিকে শিশুর কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। 


 * যদি বাবা-মায়ের সন্দেহ হয় যে তাদের সন্তান মাদকের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে, তাহলে তাকে বকাবকি না করে তাকে ভালোবেসে বুঝিয়ে দিন।


  * তাকে অনুভব করুন, 'আপনার তাকে প্রয়োজন, আপনি তাকে ভালবাসেন'। 


 * পিতামাতাদেরও বোঝা উচিৎ যে তারা বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তাদের অবশ্যই শিশুদের স্বাধীনতা দিতে হবে, তবে তাদের এই স্বাধীনতার অযাচিত সুবিধা নেওয়া উচিত নয়।  স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দিকেও কড়া নজর রাখুন।


যদি এই লক্ষণগুলি শিশুর মধ্যে দেখা যায়, তবে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিৎ


 এই উপসর্গগুলি মাথায় রেখে, অভিভাবকরা অনুমান করতে পারেন যে তাদের সন্তান মাদকাসক্ত হচ্ছে কিনা-


 * বিরক্তি, অস্থিরতা, নার্ভাসনেস, ঘাম এবং রাগ।  


* নিদ্রাহীনতা, শরীরে খিঁচুনি, তীব্র মাথাব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস।  


* হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন, ছোটখাটো বিষয়ে বিভ্রান্তি, মানসিক চাপ ইত্যাদি।  উপরের উপসর্গগুলো যদি শিশুর মধ্যে দেখা যায় তাহলে তার নেশার শিকার হওয়ার কথা নয়।  এই লক্ষণগুলো অন্য কোনো রোগেরও হতে পারে, তবে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।  



শিশুরা কেন মাদকের খপ্পরে পড়ে?



শিশু মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন- 


* অধিকাংশ শিশুই তাদের বন্ধুদের প্ররোচনায় মাদক সেবন শুরু করে।  শিশুটি যখন তার বন্ধুদের মাদক সেবন করতে দেখে তখন তার মনে মাদক পরীক্ষা করার কৌতূহল শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে সে মাদকের খপ্পরে পড়ে। 


 * শিশু যখন তার পরিবারের বড়কে নেশা করতে (ধূমপান বা মদ্যপান) করতে দেখে তখন তার মনে নেশার স্বাদ নেওয়ার ইচ্ছা জাগতে শুরু করে।  


* চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনও মাদকাসক্তিতে ফেঁসে যাওয়ার অন্যতম কারণ।  প্রকৃতপক্ষে, শিশুরা যখন চলচ্চিত্র এবং টিভি অভিনেতাদের নেশাগ্রস্ত হতে দেখে, তারাও তাদের অনুকরণ করার চেষ্টা করে।  


* কর্মজীবী ​​বাবা-মা হওয়ার কারণে শিশুদের সাথে মানসম্পন্ন সময় না কাটানো, পথনির্দেশ না করা, অযাচিত চাহিদা পূরণ না করা, বন্ধুদের প্রতি মনোযোগ না দেওয়া ইত্যাদি অনেক কারণ রয়েছে যার কারণে শিশুরা ভুল সঙ্গে পড়ে।  মাদকাসক্তিতে আটকে পড়া শিশুকে বাবা-মা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? 


 * শিশু মাদকাসক্ত হলে প্রথমে তাকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখান। 


 * তাকে বুঝিয়ে বলুন যে যখনই তার মন নেশা করতে চায়, তখনই সেখান থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্য কোথাও রাখার চেষ্টা করুন। 


 * শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের বন্ধুর বৃত্তও বাড়তে থাকে।  তাই খারাপ সঙ্গ এড়াতে তাকে না বলে তার বন্ধুদের প্রতি কড়া নজর রাখা জরুরি। 


 * মাদকাসক্তি থেকে বাঁচতে শিশুকে মাদকের কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত বলা জরুরি।  


* নেশার কারণে যার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে তার উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা কর।  


* অভিভাবকদেরও মনে রাখতে হবে যেন কখনওই শিশুদের কাছ থেকে নেশা না হয়।  


* বাড়িতে আসা পার্টি ও অতিথিদের সামনে নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিবেশন করবেন না।  


* সন্তানের সামনে কখনই নেশা করবেন না।  ফলে এসব নিয়ে তার মনে কৌতূহল বাড়তে থাকে। 


 * ঘরে ককটেল পার্টি থাকলে শিশুকে অন্যান্য খেলায় ব্যস্ত রাখুন।  


* শিশু নেশার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে সময় নষ্ট না করে কাউন্সেলর ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। 


 * পরিস্থিতি দিন দিন গুরুতর হলে শিশুকে নেশামুক্ত কেন্দ্রে নিয়ে যান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad