হুগলি :মহিলাদের ফটো শুট করে মোটা টাকা উপার্জনের টোপ দিয়ে গহনা লুটের অভিযোগে গ্রেফতার এক প্রতারক। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম কৃষ্ণ ঘোষ। বাড়ি শিলিগুড়ির ভক্তিনগর এলাকায়। তিনি চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি আবাসনে দু'বছর ধরে ভাড়া থাকছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণ ঘোষ নিজের ফেসবুক পেজে রীতিমত বিজ্ঞানপন দিয়েছিল। বলেছিল, বিভিন্ন ধরনের ফটোশুটের রেট বিভিন্ন রকম। শাড়ি, সালোয়ার, বিকিনি বোল্ড, ব্রাইডাল ফটোশুটে যারা আগ্রহী তারা যোগাযোগ করতে পারেন। একবার ফটোশুটে সর্বাধিক আঠেরো হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয় বলে অভিযুক্ত ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়ার এহেন বিজ্ঞাপন দেখে অনেক মহিলাই উৎসাহী হয়ে প্রতারকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি মহিলাদের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে ফটো শুটের নামে তাদের আনা গহনা পড়তে বলত। এরপর ফটো শুট হয়ে গেলে সেই গহনার ব্যাগ বাইরে একটি স্কুটিতে রেখে আসতে বলত। একই সঙ্গে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করতে করতে প্রতারক স্কুটি সহ মহিলাদের গহনা নিয়ে চম্পট দিত। একই সঙ্গে অভিযুক্ত তার মোবাইলের সুইচ অফ করে দিত। চারমাস আগে ব্যান্ডেলের এক মহিলা চুঁচুড়া থানায় এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি জানান, তার গহনা লুট হয়েছে। পুলিশ তখন অভিযুক্তের নাগাল পায়নি।
শনিবার দুই যুবতী চুঁচুড়া থানায় ওই একই ধরনের গহনা লুটের অভিযোগ করেন। ওই মহিলাদের বাড়ি বাগুইহাটি এলাকায়। তাদের অভিযোগ, ফেসবুকের মাধ্যমে তারা ফটোশুটের কথা জানতে পারেন। ফটো শুট করার পরই অভিযুক্ত তাদের গহনা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন।
নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এই কাজে একটি স্কুটি ব্যবহার করত অভিযুক্ত, যেটি তার বান্ধবীর। অভিযুক্তের ফোনের টাওয়ার লোকেশান ট্র্যাক করে পুলিশ। চুঁচুড়ার একটি শপিং মলের সিসি টিভি থেকে কৃষ্ণ ঘোষের ছবি সংগ্রহ করে পুলিশ। ফোনের টাওয়ার লোকেশান করে যে আবাসনে অভিযুক্ত থাকতো সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পারে ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতিয়েও মহিলাদের জালে ফেলত সে। ফোটো শুটের নামে অর্থের টোপ দিত। পোলবার একটি হোটেলে ঘর ভাড়া নিয়ে ছবি শুট করত। ব্রাইডাল শুটের নামে বোল্ড ফটো শুট করত। এসবের পিছনে ব্ল্যাকমেল রয়েছে কিনা? সেটাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
অনেক মহিলারাই ব্রাইডাল শুট করতে চায়। কারন, গহনা পরে সুন্দর করে সেজে ছবি তোলা যায়। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাত অভিযুক্ত। ব্রাইডাল শুটের শর্ত ছিল গহনা পরে অথবা সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। তদন্তকারীরা জানতে পারে সম্প্রতি একটি বেসরকারী স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় গহনা বন্দক রেখে টাকা তুলেছে কৃষ্ণ। তার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা। শিলিগুড়িতে কৃষ্ণ ঘোষের নামে কোনও অভিযোগ আছে কিনা, কেন দুবছর আগে সেখান থেকে চলে আসে তা জানতে শিলিগুড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেরটের পুলিশ কর্তারা।
কতজন মহিলা তার ফাঁদে পরেছে তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বোল্ড ফটো নীল সাইটে ছাড়া হত কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রবিবার ধৃতকে চুঁচুড়া আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাকে সাত দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment