নথিপত্র এবং পুরানো বইগুলি বলে যে আকবর মুঘলদের সময় দীপাবলি উদযাপন শুরু করেছিলেন। যা তখন থেকে মুঘল সম্রাটরা অব্যাহত রেখেছিলেন। দীপাবলিতে আকাশ প্রদীপ জ্বালাতেন আকবর।
মুঘল আমলে ভারতে আসা ইংরেজ পরিব্রাজক অ্যান্ড্রু তার দিল্লির জাকাউল্লাহ গ্রন্থে সে সময়ের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে মুঘল সম্রাটদের দুর্গেও দীপাবলির প্রস্তুতি জোরেশোরে করা হয়েছিল। মিষ্টি তৈরির জন্য গ্রাম থেকে দেশি ঘি আনা হতো। রাজপ্রাসাদের ভিতর থেকে বাইরে ও চারপাশের স্থানগুলো আলোকিত করা হত।
মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে (১৫৫৬ সাল থেকে) আগ্রা থেকে দীপাবলি উদযাপন শুরু হয়। একই সময়ে শাহজাহানও সমান উৎসাহে আলোর এই উৎসব পালন করেন। সেই সময় শুরু হয় 'আকাশ দিয়া'।
আকবরের আমলে লাল কেল্লার খুঁটিতে একটি বিশাল ৪০ গজ উঁচু বাতি স্থাপন করা হয়েছিল। যেটা দীপাবলির রাতে জ্বলত। যার আলো লাল কেল্লা থেকে চাঁদনী চক পর্যন্ত যেত। এই বাতিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০০ কেজির বেশি তুলা, সরিষার তেল। প্রদীপে তুলা ও তেল ঢালার জন্য একটি বড় মই ব্যবহার করা হত।
মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের আমলে প্রাসাদে লক্ষ্মীপূজা হতো। কলামিস্ট (পর্যালোচক) ফিরোজ বখত আহমেদ লিখেছেন যে পূজার সামগ্রী চাঁদনী চকের কাটরা নীল থেকে নেওয়া হয়েছিল।
ফিরোজ লিখেছেন, জামা মসজিদের পিছনের এলাকা পাইওয়ালান থেকে দীপাবলির আতশবাজি আসত। শাহজাহানের সময় রাণী, রাজকন্যা, রাজকুমারীরা কুতুব মিনারে দীপাবলির আতশবাজি দেখতে যেতেন।
১৮৮৫ সালের বাজমে আখিরে মুন্সি ফয়জুদ্দিন লাল কেল্লায় দীপাবলি উদযাপনের কথা উল্লেখ করেছেন। ফয়জুদ্দিন তার জীবনের বহু বছর মির্জা ইলাহী বক্সের সেবক হিসেবে কাটিয়েছেন। বইটিতে তিনি দীপাবলি উদযাপনকে 'প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় দিয়া' বলে বর্ণনা করেছেন।
এ সময় কেউ রাজপ্রাসাদের বাইরে আসতে পারতো না, ভেতরেও আসতে পারতো না। তারপরও দীপাবলি উপলক্ষে কালো জাদুর আশঙ্কা ছিল। ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত বজম-ই-আখির গ্রন্থে মুন্সি ফয়জুদ্দিন দেহলভী মুঘল আমলেও দীপাবলির দিনে তন্ত্র সাধনার কথা উল্লেখ করেছেন। এটি এড়াতে দীপাবলির দিন কোনও কর্মচারীকে প্রাসাদ চত্বরের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি।
'তৃতীয় দিয়া' অর্থাৎ বদি দীপাবলির দিনে সম্রাটকে সোনা ও রৌপ্য দিয়ে ওজন করা হয়েছিল। তারপর সেই সোনা ও রৌপ্য মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হল। এছাড়া সম্রাটের পক্ষ থেকে সাদাকা হিসেবে একটি কালো মহিষ, কালো কম্বল, সরিষার তেল, সতাঞ্জাও গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
সম্রাট প্রাসাদকে আলোকিত করার নির্দেশ দিতেন। নাটক, ছোট মাটির ঘর/খেলনা আর আখের দাসী ঘরে ঘরে যেত। সম্রাট-শেহজাদীর তৈরি ছোট ছোট মাটির ঘরগুলো খেলনায় ভরা ছিল। তারপর তাদের সামনে প্রতিটি প্রদীপ জ্বালানো হয়। সেখানে একটি লাইটিং পোস্টও ছিল। যার ওপর বাদ্যযন্ত্র, শেহনাই, ঢোল ইত্যাদি রাখা হতো। যা উদযাপন শুরু হলে বাজানো হয়েছিল। শেহনাই নওবত নামক ঢোল বাজাতেন, যা রাজকীয় নওবত খান্নায় বাজানো হত।
No comments:
Post a Comment