আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে যে বহু বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ঝগড়া-বিবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন। এই মানুষগুলোর কারণেই দেশের গঙ্গা-যমুনি সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা অটুট রয়েছে। আজ আমরা আপনাকে এমনই এক ব্যক্তির সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি যিনি মুসলিম ধর্মের অনুসারী কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু দেবীর মূর্তি তৈরি করছেন। শুধু তাই নয়, তিনি সব সময় মানুষকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের শিক্ষা দেন।
দাসপুর গ্রামটি বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকায় অবস্থিত। ৬১ বছর বয়সী ইসমাইল তার স্ত্রী ও ৫ মেয়ে নিয়ে এই গ্রামেই থাকেন। গ্রামের যেকোনও নাগরিককে দীপাবলির সময় মা কালীর মূর্তি কিনতে হয়, তখন সে ইসমাইলের কাছে আসে কারণ ইসমাইল মূর্তি তৈরির কাজ করে এবং গত ৪০ বছর ধরে মা কালীর মূর্তি তৈরি করছেন তিনি। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন ইসমাইলের স্ত্রী ও তার মেয়েরা। ইসমাইল গ্রাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য বিখ্যাত। গ্রামে এই অনুভূতি বাড়াতে পরিবারের সঙ্গে কাজ করেন ইসমাইল।
ইসমাইল জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি মা কালীর মূর্তি তৈরি করে আসছেন। শুধু তার গ্রামের মানুষই নয়, অন্যান্য গ্রামের মানুষও তার কাছে আসেন দেবীর মূর্তি কিনতে। কালী পুজোর আগে তাদের কাজ অনেক বেড়ে যায়। তিনি মা কালীর মূর্তি বানাতে ভালোবাসেন, তাই মূর্তি তৈরি হলে খুব খুশি হন। ইসমাইল বিশ্বাস করেন যে তিনি দরিদ্র কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তার পরিবারের ভালো যত্ন নিতে সক্ষম। এটি শুধুমাত্র মা কালীর আশীর্বাদে ঘটছে।
তিনি বিশ্বাস করেন যে তার পরিবারের উপর ঈশ্বর এবং আল্লাহর হাত রয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা বীরেন্দ্র রায় বলেন, "গ্রামের প্যান্ডেলে শুধু ইসমাইলের হাতে তৈরি মূর্তি বসানো হয় তা সবাই জানে। এখানকার মানুষ ইসমাইলের কাজ খুব পছন্দ করে এবং মানুষ তার শিল্পের প্রতি অনুরাগী।"
No comments:
Post a Comment