নিজস্ব প্রতিনিধি, উত্তর ২৪ পরগনা: দুর্ভোগে মহিলা ঢাকি শিল্পীরা। করোনার ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট না থাকলে বায়না পাচ্ছে না মহিলা ঢাকি শিল্পীরা।
ঢাকের বাজনা বলে দেয় পুজো আসছে, প্রতিবছর এই সময় পুজোর কয়েক মাস আগে থেকে ঢাকি পাড়ায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবছর ঢাকি পাড়া থেকে ঢাকের বাজনা ভেসে আসলেও শিল্পীদের মনে সেই আনন্দ আর নেই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা থানার লক্ষ্মীপুর মাঠপাড়া গ্রামের সন্তোষ দাস ৭ বছর আগে নিজের হাতে ২৫ জন মহিলাকে নিয়ে তৈরি করেন প্রতিভা সম্প্রদায় মহিলা ঢাকি। পিপাসা বৈরাগা ,দীপালি দাস, চন্দনা দাস, তৃপ্তি দাস- এদের নিয়ে এগিয়ে চলছেন সন্তোষ বাবু।
লক্ষ্মীপুর মাঠ পাড়া গ্রামে শতাধিক ঢাকি পরিবারের বাস। বংশ পরম্পরায় এই গ্রামের শিল্পীরা ঢাক বাজান। গত কয়েক বছর ধরে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে মহিলারা দল তৈরি করে পুরুষদের সাথে ঢাক বাজাচ্ছেন। পুজো কমিটি গুলোর কাছে মহিলা ঢাকি দলের চাহিদা বেশি থাকায় বেশ ভালো টাকা রোজগার করছিলেন মহিলা ঢাকি শিল্পীরা। গত কয়েক বছরে পুজোর সময় রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যে ও বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল মহিলা ঢাকি দলের শিল্পীরা। কিন্তু গত ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন তারা।
অন্যান্য বছর রথ যাত্রার পরেই পুজো কমিটি গুলো বায়না করতো। কিন্তু এই দুবছর এখনও পর্যন্ত কোনও বায়না হয়নি কোনও ঢাকি দলের। অনেক সময় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়তো মহিলা ঢাকি দলের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য এক হাজার টাকা প্রতিমাসে ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। তাই অনেক শিল্পী আজ সম্মানের সাথে শিল্প সত্তাকে বজায় রেখেছেন। কিন্তু গত বছর থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠান বন্ধ। অন্যদিকে পুজোর বায়না আসেনি, কারণ বলছে করোনা ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট লাগবে তাই সমস্যায় পড়েছেন মহিলা ঢাকি দলের শিল্পীরা। তারা চাইছেন সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই সমস্ত শিল্পীদের করোনা ভ্যাকসিন করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিক, আর এই সব দুঃস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়াক। অনেক শিল্পীদের তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরে কার্ড না থাকায় তারা সেই ভাতা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাই সরকারের কাছে আবাদেন রাখে মহিলা ঢাকি শিল্পীরা।
অনেকে ঢাক বাজানো পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন মহিলারা। সংসার বাঁচাতে কেউবা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করছেন। আবার অনেকে সেলাই বা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করছেন। পিপাসা বৈরাগী বলেন, করোনার কারনে ২০২০ সাল থেকে কোন রকম বায়না আসছে না এবং টাকাও পাচ্ছি না। সেই কারণে আমি সেলাই করার কাজ করছি বাড়ি বসে আর এই বছর শোনা যাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট না থাকলে কোন পূজা কমিটি ডাকবে না। তা হলে কি করবো আমরা!' চন্দনা দাস বলেন, 'আমার বাড়ির পরিস্থিতি খুব ভালো না। পরিবারে আমি বাবা, মা, আর ছোট একটা ভাই। বাবা অসুস্থ, তাই কাজ করতে পারে না। মা দর্জির কাজ করতেন তাই দিয়ে সংসার কোন রকমভাবে চলছিলো।আর আমি সংসারের অভাব দেখে পড়াশুনার ফাঁকে এই ঢাক শিল্পর সাথে যুক্ত হয় ভালো টাকা উপার্জন করছিলাম। কিন্তু ২০২০ সালের করোনার জন্য সেই কোন বায়না আসছে না। তাই বাড়ি বসে সেলাইয়ের কাজ করে দিনযাপন চলছে কোনরকমে।' কবে সুদিন ফিরবে সেদিকে তাকিয়ে মহিলা ঢাকি শিল্পীরা।
No comments:
Post a Comment