চৌধুরী বাড়ির মা দুর্গা, এখানকার পুজোতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে কথা বলে ইতিহাস - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 5 October 2021

চৌধুরী বাড়ির মা দুর্গা, এখানকার পুজোতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে কথা বলে ইতিহাস


নিজস্ব প্রতিনিধি, আলিপুরদুয়ার: বাংলাদেশের আদিবাড়ির পুকুরের মাটিতে মৃন্ময়ির মূর্তি তৈরি হয়। ১১১ বছরের পুরনো বাংলাদেশে তৈরি কাঠামোতে এখনও পুজো হয়। এটাই এই চৌধুরী বাড়ির ঐতিহ্য। মুলত আলিপুরদুয়ারের চৌধুরি বাড়ির পুজো হলেও একেবারে বারোয়ারি পুজোর মতই এই পুজো হয়। এখানকার দ্বার সব সময় সকলের জন্য খোলা থাকে। আগে নানান অনুষ্ঠান হত দশ ভাইয়ের এই পুজোতে। বর্তমানে দশ ভাইয়ের চার জন মারা গিয়েছেন। বেঁচে আছেন ছয় ভাই। আর এই পুজোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে কথা বলে ইতিহাস। 

জমিদারী সত্ত্বা নিয়ে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন এই বংশের পূর্ব পুরুষরা। সেই সাথে স্থানান্তর হয়েছে দুর্গা পুজোও। সেদিক থেকে চৌধুরি বাড়ির দুর্গা পুজোর ইতিহাস ৩০০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কাঠামো এনে সেই একই কাঠামোতে দুর্গা পুজোর বয়সও ১১১ পেরিয়ে গেল। 


আলিপুরদুয়ার জেলার বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে চৌধুরি বাড়ির পুজো বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। চৌধুরীরা বরাবর কংগ্রেস দল করেন। আর সেই কারনে সস্ত্রীক বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় এই পুজোতে এসে আনন্দ করে গেছেন। আলিপুরদুয়ারের ভোলার ডাবরিতে চৌধুরী বাড়িতে ১১১ বছরের পুরনো একই কাঠামোতে দুর্গার প্রতিমা তৈরি হয়ে আসছে। তাদের নিজেদের পুকুরের মাটি দিয়ে মূর্তি গড়া হয়। পুকুরের মাছ দিয়ে দেবীর ভোগ দেওয়ার রীতি আজও রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের আদি বাড়ির পুকুর থেকে মাটি এনে প্রতিমা গড়া হয় । 


বাড়ির ছেলে অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক পুলিন চৌধুরী বলেন, " ১১১ বছর ধরে একই কাঠামোতে প্রতিমা গড়া হচ্ছে। পিতা মনমোহন চৌধুরী যে পুজো নতুন করে সূচনা করেছিলেন, তা আজও হয়ে আসছে।ময়মনসিংহ জেলার কাঁঠাল গ্রামে পুজো হয়েছে। তবে নবাব আলিবর্দির আমলেই পূর্বপুরুষরা এই পুজো শুরু করেন। সে হিসেব ধরলে তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে পারিবারিক পুজো করা হচ্ছে।" 


জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিনের পুজো হলেও একসময় তিন বছর ঘট পুজো হয়েছে। দেশ ভাগের পরেও পুজো বন্ধ হয়নি। ঠাকুরদা হরি নারায়ণ চৌধুরী ও পিতা মনমোহন চৌধুরীর হাত ধরে পুজো নতুন রূপ পায়। পিতা এবং দাদার মৃত্যু বছরেও পুজো থামেনি। সে সময় আত্মীয়রা পুজো করেছেন। দুর্গা পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে পুকুর পাড়ে গঙ্গা, ব্রহ্মা ও শীতলার পুজোও হয়ে থাকে এবং মন্দিরে দুর্গা এমনকি কালী পুজোও হয়ে থাকে এখানে। নবমীর দিন হয় আমিষ ভোগ। আগে একাধিক পাঁঠা বলি দেওয়ার রীতি ছিল, তবে বাড়ির মহিলারা বলি প্রথা বন্ধ করার অনুরোধ জানান এবং শেষ পর্যন্ত গুরুদেবের নির্দেশে বলি প্রথা উঠে যায়। আগে নবমীর দিন আমিষ ভোগ দেওয়া হতো। সেই রীতি মেনে নিজেদের পুকুর ও বাজার থেকে কেনা মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়।


একসময় পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কলকাতার নামকরা শিল্পীরাও এসেছেন। নাটক ছাড়া বিহারী সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানও হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে দূর-দূরান্তের আত্মীয়রা অনেকেই আসছেন না, স্থানীয় আত্মীয়রাই পুজোর দায়িত্ব রয়েছে। তবে পুজোর রীতি-নীতি, পরম্পরা একই রয়ে গিয়েছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad