রাজ্য সরকার আজও অধিগ্রহণ করতে পারেনি মাত্র কয়েক লক্ষ টাকার জন্য, তাই প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী তথা ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের বাড়ি ও সংগীত চর্চা কেন্দ্র পড়ে রয়েছে অবহেলায়। একসময় কাজী নজরুল ইসলাম গান লিখেছেন, সংগীত চর্চা করেছেন এই চর্চা কেন্দ্রে এসেই। তবে আজ এখানে কেবল জঙ্গলে ভরা। রাজ্যে বাম আমল থেকেই শুরু করে তৃণমূল সরকারের আমলেও ভাওয়াইয়া সম্রাটের স্মৃতির প্রতি অবহেলার ছবিটা এতটুকু বদলায়নি। বর্তমানে রাজার শহর কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ভাওয়াইয়া সম্রাটের বাড়ি ও সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র।
কোচবিহার শহর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বলরামপুর গ্রাম। এখানেই একসময় বসবাস করতেন আব্বাস উদ্দিন আহমেদ। এখানেই ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর জাদু' কন্ঠে পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, গজল লক্ষ লক্ষ শ্রোতার মন আজও ভরিয়ে তোলে। তবে ভাওয়াইয়াতেই তিনি গানের দুনিয়াকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেন। তিনি ভাওয়াইয়া সম্রাট ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল। সেই থেকেই সঙ্গীত চর্চা সাধনার জায়গায় পৌঁছে যায়। কালের প্রবাহে দেশের সীমানা পেরিয়ে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে গানের দুনিয়ায়।
কিন্তু প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর জন্মভিটে, সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র আজও সরকারি সংরক্ষণের আওতায় আসেনি। তার বাড়ি এবং সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্রটির প্রায় ভগ্ন দশা। সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্রটি দেখলেই মনে হবে, এটি ভেঙে পড়তে পারে যেকোনও সময়ে। আর তার বাড়িটিও সম্পূর্ণ ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে।
একাধিক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র ও বাড়িটি যে জমিতে রয়েছে তার মালিক স্থানীয় এক পরিবারই। তারা নিজেরাই নিজেদের মত করে আগলে রেখে দিয়েছে। তবে কতদিন থাকবে, সে নিয়ে নানান প্রশ্ন গ্রামবাসীদের মনে। ওই পরিবারের এক সদস্য চিরঞ্জিৎ সরকার বলেন, "জমি কেনার জন্য অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। এমনকি বাম আমলে জেলাশাসকের দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে সমস্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছি, ওখানে প্রায় ৮ কাঠা জমি আছে। জমির বাজার মূল্য যা রয়েছে, তা দিলেই আমরা দিয়ে দেব। পরে অবশ্য আর কিছুই হয়নি।"
কোচবিহারের বর্তমান সময়ের ভাওয়াইয়া সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বলেন, 'কত ইতিহাস রয়েছে এই জিনিসগুলোর। আমি নিজে বেশ কয়েকবার এই বাড়ি, সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র রক্ষা করার চেষ্টা করেছি, তবে কিছুই হল না।' আক্ষেপ করে তিনি জানান, "প্রায় দু'বছর আগে ৮ কাঠা জমি কেনার জন্য কমিটি করা হয়েছিল। তবে জমির দাম ৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।" সরকারের কাছে তাঁর আবেদন জমিটি নিয়ে, সংগীত সম্রাটের বাড়ি ও সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্রটি সংরক্ষণ করা হোক।'
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, 'বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও এই কাজটি সম্পন্ন করা যায়নি। কালী পুজোর পরেই যাদের অধীনে জমি রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ভাওয়াইয়া সম্রাটের বাড়ি ও সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র অধিগ্রহণ করে এবং এগুলো সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও প্রাক্তন মন্ত্রী জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment