খুনির পর্দা ফাঁস করল এক জোড়া খালি চায়ের কাপ - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 9 September 2021

খুনির পর্দা ফাঁস করল এক জোড়া খালি চায়ের কাপ


প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: কথায় বলে, খুনি যতই চালাক হোক না কেন, কিছু না কিছু প্রমাণ সে ঠিকই রেখে যায়। কখনও কখনও তো এমন হয় যে, ছয় মাসের পরিকল্পনাও ছয় মিনিটে ধরা পড়ে। কর্ণাটকের এক এনআরআই মহিলার খুনের কাহিনীও ঠিক এরকমই।


কর্ণাটকের উডুপি জেলায়, এক মহিলা বিশালা গনিগা সকালে ব্যাঙ্কে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ব্যাংকে পৌঁছাননি বা বাড়ি ফিরে আসেননি। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর, পরিবারের সদস্যরা যখন মহিলার স্বামীর ফ্ল্যাটে পৌঁছান, সেখানে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।


বিশালা গনিগা দুবাইতে তার সন্তান এবং স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। তাঁর স্বামী সেখানে কাজ করতেন। মহিলাটি তার বাপের বাড়ি এসেছিলেন। একদিন তিনি তার স্বামীর কোন কাজে ব্যাংকে যান। কিন্তু এরপর তাকে আর জীবিত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। উদ্ধার হয় তার মরদেহ। পুলিশ যখন তদন্তের জন্য পৌঁছায়, তখন ঘটনাস্থল থেকে অনেক কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।


পুলিশ ফ্ল্যাট থেকে দুটি খালি চায়ের কাপ পায় এবং তারা দেখেন, সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। শুরুতে, এই মামলাটি কেবল একটি ডাকাতি বলে মনে হয়েছিল। যহেতু তাঁর স্বামী দুবাইতে ছিল, তাই প্রথমে পুলিশ কিছু বুঝতে পারছিল না। কিন্তু খালি দুটি কাপ দেখে এটা স্পষ্ট যে বাড়িতে যে কেউ এসেছিল, সে বিশালার পরিচিত একজন, নাহলে সে কেন চা বানিয়ে দিতে!


এরপরই পুলিশ অন্ধকারে তীর ছুঁড়তে শুরু করে। বিশালার স্বামীও তাঁর শেষকৃত্যের জন্য এদেশে এসেছিলেন। স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার কথায় যথেষ্ট অসঙ্গতি ধরা পড়ে। পুলিশের তীরও সঠিক নিশানায় লাগে। এরপর বিশালার স্বামী রামকৃষ্ণের মোবাইলের কল ডিটেইলস বের করে পুলিশ। দেখা যায়, যেদিন বিশালাকে খুন করা হয়েছিল, সেদিন রামকৃষ্ণ গোরখপুরের একটি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ কল করেছিল। পুলিশের এটা বুঝতে বাকি থাকে না যে, সেদিন বিশালা ব্যাঙ্কে না গিয়ে স্বামীর ডাকেই ঐ ফ্ল্যাটে ছুটে গিয়েছিলেন। এরপর পুলিশ তাঁর স্বামীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে কঠিন ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপরাধ স্বীকার করে নেয়।


তার স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, রামকৃষ্ণ ছয় মাস আগে পরিবার নিয়ে দুবাই থেকে ভারতে এসেছিল। সে তার স্ত্রীকে সন্দেহ করত। তাই স্ত্রী বিশালাকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সে। জানা যায়, গোরখপুরের এক সুপারি কিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে খুনের চুক্তি হয়। দুই লক্ষ টাকা অগ্রিম হিসেবেও দেওয়া হয়েছিল। এই সময় সে তার স্ত্রীর সঙ্গে ওই সুপারি কিলারের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাকে বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। এমনকি কোনও অসুবিধা হলে তাকে ফোন করার কথাও বলে স্ত্রী বিশালাকে।


এই ঘটনার পর পুরো পরিবার দুবাই চলে যায়। ছয় মাস পর বিশালা ভারতে ফিরে আসেন। ঘটনার দিন যখন বিশালা ব্যাংকে যাওয়ার জন্য বাইরে যান, তখন তাঁর স্বামী ফোন করে বলে, 'বন্ধু আসছে, ফ্ল্যাটে চলে যাও।' বিশালা ব্যাংকে না গিয়ে ফ্ল্যাটে পৌঁছে যায়, যেখানে আগে থেকেই দুই সুপারি কিলার পৌঁছে গিয়েছিল। এই সব কিছু থেকে অজ্ঞাত বিশালা স্বামীর বন্ধু ভেবে তাদের চা বানিয়ে দেয়। এর পরেই, সুপারি কিলার দুজন বিশালকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। তারপর দুজনেই বাড়িতে রাখা জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়, যাতে ব্যাপারটা ডাকাতি বলে মনে হয়। কিন্তু তারা একটি ভুল করে, তা হল চায়ের কাপ সরিয়ে দিতে ভুলে যায় এবং এই চায়ের কাপই খুনের রহস্যের সমাধান করে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad