নিজস্ব প্রতিনিধি, আলিপুরদুয়ার: আকাশে বাতাসে যেন পুজো পুজো গন্ধ। নদীর ধারে কাশফুলের মেলা জানান দিচ্ছে মায়ের আগণের সময় নিকটেই। আর দুর্গা পুজো মানেই এক রাশ আনন্দ। ঢাকের ঢ্যাং কুড়াকুড় বাদ্যি। পুজো মানেই ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ! শারদোৎসবের সঙ্গে ঢাক যেন অপরিহার্য। প্রতি বছর তাই পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন ঢাকি পাড়ায় শুরু হয়ে যেত তুমুল ব্যস্ততা। দিনরাত চলত ঢাকের মহড়া। আর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বায়না করতে আসেন অনেকেই। ঢাকি পাড়ায় পুজোর প্রস্তুতি দেখে মেতে ওঠে কচিকাচারাও। কিন্তু করোনা ঢাকি পাড়ার চেনা ছবিটা পাল্টে দিয়েছে গত দুবছর ধরে। উৎসবের আমেজের বদলে বিষন্নতার ছোঁয়া ঢাকিদের মনে।
হাতে মাত্র আর দিন কয়েক। তারপরেই আপামর বাঙালি মেতে উঠবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোয়। কিন্তু এই উৎসবের আবহে মন খারাপ ঢাক শিল্পীদের। বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে এখনও অনেক শিল্পীই ডাক পাননি। এবারের পুজোতে ঢাক শিল্পীদের ডাক আসবে কি না সেই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বর হাজরা পাড়া এলাকার ঢাকি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের।
প্রতিবছর এই সময়ে পুজোর কয়েক মাস আগে সংশ্লিষ্ট ব্লকের জটেশ্বর হাজরা পাড়ায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবছর ঢাকি পাড়া থেকে ঢাকের বাজনা ভেসে আসলেও শিল্পীদের মনে নেই সেই আনন্দ। জানা গিয়েছে, এলাকার ঢাক শিল্পীরা বংশপরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে আসছেন। এক কথায় ঢাক বাজানো হচ্ছে তাদের প্রধান জীবিকা। প্রতি বছর পুজোর সময় দূরদূরান্ত থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজানোর জন্য ডাক আসে। কিন্তু করোনা অতিমারীর কারণে প্রভাব পড়েছে তাঁদের পেশায়।
তারা জানান, অন্যান্য বছর বিশ্বকর্মা পুজোর আগে দুর্গা পুজো কমিটি গুলো বায়না করতে আসত কিন্তু এবছর এখনও পর্যন্ত কোনও বায়না হয়নি ঢাকিদের কাছে। তাই এবছর তাঁরা ঘোর আশঙ্কাতে রয়েছে আদৌ তাঁদের ডাক আসবে তো!
জটেশ্বর হাজরা পাড়ার বাসিন্দা জয়দীপ হাজরা বলেন, " দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজিয়ে সংসার চলে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনও টিকা পাননি। টিকা না মেলায় পুজোর বরাতও আসছে না। শেষ পর্যন্ত কি হবে জানি না।" এলাকার আরও একজন ঢাকি দুলু হাজরা বলেন, "দুর্গা পুজোর অপেক্ষায় থাকি সারা বছর, কারণ এই সময়ে আমাদের চাহিদা থাকে বেশি। উপার্জনও হয় ভালো। কিন্তু এই বছর অনেক শিল্পীই এখনও পর্যন্ত ডাক পাইনি।"
তবে নমো নমো করে হলেও পুজোর আয়োজন শুরু হয়েছে। শেষ মুহূর্তে হয়তো মা দুর্গার কৃপাদৃষ্টি তাঁদের উপর পড়বে। এই আশা নিয়ে বেঁচে ঢাকিরা।
No comments:
Post a Comment