নিজস্ব প্রতিনিধি,পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা টাউনের উত্তরে ফাঁকা মাঠের মাঝে একটু উঁচু ঢিবির ওপর ঔপনিবেশিক সময়ের সাক্ষীবহনকারী এক অখ্যাত ফাঁসির মঞ্চ! সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের এক শাসনযন্ত্র। একটু তত্ত্বতালাশ করলে জানা যায় ,এটি নীলবিদ্রোহের (১৮৫৯-৬০) সমসাময়িক। আবার মতান্তরে চুয়াড় বিদ্রোহ (১৭৭১-১৮০৯) দমনের উদ্দেশ্য সৃষ্ট। এর সময়কালের প্রামাণ্য দলিল কোন ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে পাওয়া যাবে জানা নেই।
এই জায়গাটার ধারে পাশে কোন বড়ো জনবসতি এলাকা নেই। ফাঁকা মাঠের মাঝখানে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে একটু উঁচু ঢিবির ওপর এই মঞ্চ। চারপাশে চাষের জমি। বেশ কিছুটা দূরে একটা জলাশয় বা পুকুর রয়েছে। স্থানীয় মানুষেরা ওর পাড়ে শীতের সময় বনভোজন আসেন। এই ফাঁসি-ডাঙা চত্বরে অবশ্য চড়ুইভাতি করতে কাওকে দেখা যায় না। আসে মলিনবেশে কিছু গ্রাম্য কচি-কাঁচা, আর চাষের মাঝে একটু জিরিয়ে নিতে কিছু চাষী। কাঁচা রাস্তাটা মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে গেছে রাস্তার দুপাশে কিছু তালগাছ আর মঞ্চের চারপাশে ছিল বেশ কিছু শাল গাছ। চারিপাশে শুধু ঝিঁঝিঁর ডাক আর অদ্ভুত এক নীরবতা। এই জায়গাটার পর্যটন মানচিত্রে সেভাবে উল্লেখও নেই।
আশেপাশের জমিতে চাষ করা একজন জানালেন, ওখানে রিক্রিয়েশনাল পার্ক হবে। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রশাসনের যখন নজর পড়েছে তখন এর উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। এলাকাবাসীর শুধু এটুকুই চাওয়া ছিল, জায়গায়টার স্থান মাহাত্ম্য যাতে অটুট রাখা হয়। কারণ, ফাঁসি-মঞ্চকে কেন্দ্র করে যদি পার্ক গড়ে ওঠে সেখানে আমার স্বাধীন দেশের ইতিহাস-সচেতন নাগরিক যে কোন সম্মাননা রেখে যাবেন প্রতিনিয়ত তাল, শাল সব উন্নয়নের যজ্ঞে আহুতি পড়েছে। চারপাশে পাঁচিল ফাঁসিডাঙা যখন শুধুই ডাঙা ছিল, পার্ক নয়। দেরিতে হলেও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নতুন রূপে নতুন করে সেজে উঠেছে ফাঁসিডাঙা।
No comments:
Post a Comment