সৌমিতা চক্রবর্তী: বাবা পুলিশ। দুই গুণধর ছেলে ধরাকে সরা জ্ঞান করত না। কটুক্তির প্রতিবাদীকারীর হাতের কব্জি কেটে নেয়। পুলিশ মহলে প্রভাব খাঁটিয়ে আদালত থেকে জামিন পেলেও শেষ রক্ষা হল না। দুই দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল আলিপুরদুয়ার অতিরিক্ত জেলা আদালত।
শনিবার আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জর্জ, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট - ১ শ্রীমতি সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে চলা এই মামলার রায় ঘোষণা হয়। দুই দোষীর নাম হকি দাস এবং রকি দাস। সম্পর্কে তারা দুই ভাই এবং তাদের বাবা পুলিশে চাকরি করতেন বলেই খবর।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১১ সালের ৮ই ডিসেম্বর। অভিযোগ, ঐদিন হকি দাস ও রকি দাস মাঝ রাস্তায় এক যুবতীকে কটুক্তি করে। ঘটনাটি বেশি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যেতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু সেনগুপ্ত সাহস করে প্রতিবাদ করেন। সেই থেকেই শুরু হয় বচসা। মাঝে কিছুক্ষণের জন্য ঝামেলা থামলেও রাত প্রায় ১১ থেকে সাড়ে ১১ টা নাগাদ হকি ও রকি প্রতিবাদকারী মিঠু বাবুকে ডেকে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তার ওপর হামলা করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেয় মিঠু বাবুর হাতের কব্জি। আহত অবস্থায় তখনই তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পালিয়ে যায় দুই ভাই।
পুলিশ সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার থেকে পালিয়ে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে গাঁ ঢাকা দেয় দুই দোষী। পুলিশ মোবাইল ট্র্যাক করে প্রায় দেড় মাস পর উত্তর প্রদেশ পুলিশের সাহায্যে দোষী দুই ভাইকে গ্রেফতার করে। দোষীরা পরে জামিনে ছাড়া পেলেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১১ সালের সেই ঘটনায় অবশেষে ২০২১ সালের, ১৬ই জুলাই বিচারপতি শ্রীমতি সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন, আইপিসি ধারা ৩৪১, ধারা ৩২৬ ও ধারা ৩০৭ অনুযায়ী।
শনিবার এই দোষীদের সাজা ঘোষণা করেন বিচারপতি। তাতে ৩৪১ ধারা অনুযায়ী দোষীদের এক মাস, ৩২৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩০৭ ধারা অনুযায়ী দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা দিতে না পারলে অপরাধীদের অতিরিক্ত আরও ছয় মাস সংশোধনাগারে কাটাতে হবে বলে রায় দেন বিচারক।
তবে প্রতিবাদকারী মিঠু সেনগুপ্ত অপরাধীদের এই সাজার কথা শুনে যেতে পারলেন না। জানা যায় গত দেড় বছর আগে, কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment