আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই পড়তির দিকে। গত এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর থেকে তা আরো ভয়াবহ হচ্ছিল। অর্থনীতির এই মন্দার প্রভাব কর্মক্ষেত্রেও পড়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছিল। অবশেষে দেখা গেল সেটাই বাস্তব। গত ২ মাসে সারা দেশে কাজ হারিয়েছেন ২ কোটি ২৭ লক্ষ মানুষ। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’ সংস্থার প্রধান তথা সিইও মহেশ ব্যাস এই তথ্য জানিয়েছেন।
সংস্থার প্রধান তথা সিইও মহেশ ব্যাসের কথায়, ‘‘এদেশে মোট চাকরির সংখ্যা ৪০ কোটি। তাঁদের মধ্যে ২.২৭ কোটি মানুষ গত দু’মাসে বেকার হয়ে গিয়েছেন। যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, তাঁরা চেষ্টা করেও নতুন কাজ পাচ্ছেন না।’’ অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের স্থায়ী চাকরির ক্ষেত্রে বিপদটা আরও বেশি বলেই জানাচ্ছেন তিনি। অত্যন্ত নিরাশাব্যঞ্জক কথা হলো, এক বছরের আগে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন মহেশ।
তবে বিশেষজ্ঞরা আবার অন্য কথা বলছেন। পরিস্থিতি বদলাবে বলেই আশাবাদী তাঁরা। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশ জুড়ে চলছে সম্পূর্ণ ও আংশিক লকডাউন। ফলপ্রসূ হচ্ছে অনেকটাই। সংক্রমণ অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। বহু রাজ্যই এরপর ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলতে শুরু করবে। যার ফলে সামগ্রিক ভাবে পরিস্থিতি শোধরাতে শুরু করবে। এর ইতিবাচক প্রভাব কর্মক্ষেত্রেও পড়বে।
গত বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে থাকে। বহু মানুষ কাজ হারান। কমে যায় উপার্জন। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’র এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৯৭ শতাংশ পরিবারেই মাসিক রোজগারের পরিমাণ আগের থেকে কমে গিয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ পরিবারের উপরে এই সমীক্ষা চালানো হয়। তার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সেই পরিবারগুলির উপার্জন আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের লকডাউনের সময় এদেশের বেকারত্বের হার পৌঁছেছিল রেকর্ড উচ্চতায়। ২৩.৫ শতাংশে। সেই ধাক্কা সামলে উঠে ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ায় পরিস্থিতি শোধরানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল দেশ। কিন্তু এবারের দ্বিতীয় ঢেউ এসে ফের কর্মক্ষেত্রের পরিস্থিতিও ভয়াবহ করে তোলে।
শহরে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোভিড সংকটের দ্বৈত প্রভাব পড়ছে। একদিকে, পরিযায়ী- শ্রমিকদের ঘরে ফেরার কারণে কাজকর্ম কমছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে, উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেন না। অটো ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কোম্পানি তাদের উৎপাদন ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের মতো দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর্বেও সম্প্রতি কর্মসংস্থানহীনতার হার বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে শহরে কর্মসংস্থান কমেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন অর্থাৎ আইএলও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ তে ভারতে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৭.১১ শতাংশ, যা গত তিন দশকে সর্বনিম্ন। লকডাউনের কারণে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞার কারণে শহরে বেকারত্বের হার বাড়ছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার শুরুর দিকের পর বেকারত্বের হারে বৃদ্ধি হয়েছে। ২৩ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে এই হার ১৪.৭৩ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। এর আগে ৪ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে এই হার ছিল ৮.১৬ শতাংশ। এই সময়ে গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার ৮.৫৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩.৫২ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। ১৬ শেষ হওয়া সপ্তাহে তা আরও একটি বেড়ে হয় ১৪.৩৪ শতাংশ।
No comments:
Post a Comment