নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: করোনার পরিস্থিতির মাঝেই আগামী ১৭ এপ্রিল (শনিবার) শুরু হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভার নির্বাচনের পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ ।এই দফায় রাজ্যের মোট ৪৫ টি আসনে ভোট নেওয়া হবে,এরমধ্যে উত্তরবঙ্গের ১৩ টি ও দক্ষিণবঙ্গের ৩২ টি আসন রয়েছে।দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনায় ১৬টি, নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানে প্রত্যেকটিকে ৮টি করে আসনে ভোট নেওয়া হবে, অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে জলপাইগুড়িতে ৭টি, দার্জিলিং’এ ৫টি, কালিম্পং’এ ১টি আসনে ভোট নেওয়া হবে।
ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে মোট ১.১৩ কোটি, ৩৪২ জন ভোটারের। অন্যতম প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন শিলিগুড়ি কেন্দ্রে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিআইএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য, দমদম কেন্দ্রে রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী তৃণমূলের প্রার্থী ব্রাত্য বসু, রাজারহাট-গোপালপুর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য, ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী গায়িকা অদিতি মুন্সি, কামারহাটি কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র, বরানগর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়, এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী পার্নো মিত্র, বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেতা দীপক (চিরঞ্জিত) চক্রবর্তী, বিধাননগর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু, মধ্যমগ্রাম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী রাজশ্রী রাজবংশী, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বার্মা প্রমুখ।
পঞ্চম দফায় উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে ভোটের প্রধান ইস্যু হতে চলেছে চা-বাগান ও এই কাজে যুক্ত কৃষকদের কম মজুরি সহ নানা সমস্যা, অন্যদিকে বর্ধমান শহর ও গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজ সম্পর্কিত ইস্যুই বড় হতে চলেছে। কৃষকদের কাছে টানতে বিজেপির তরফে প্রধানমন্ত্রী কিশান সম্মান নিধি ও তৃণমূলের তরফে কৃষক বন্ধু সম্মান প্রকল্পের সুবিধার কথা ঘোষনা করেছে। পঞ্চম দফার আসনগুলিতে লড়াই মূলত ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপির মধ্যে।
তবে কিছু আসনে শক্ত লড়াই দিতে পারে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীরাও।নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বুধবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই সমস্ত কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, দলের সভাপতি জে.পি.নাড্ডা, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী-এই ছিল বিজেপির স্টার ক্যাম্পেনার।
তৃণমূলের তরফে স্টার ক্যাম্পেটনারদের মধ্যে ছিলেন মমতা ব্যনার্জি ও সাংসদ অভিষেক ব্যনার্জি, অভিনেত্রী জয়া বচ্চন ও টালিগঞ্জের একঝাঁক তারকা। আর প্রথম চার দফায় নির্বাচনী প্রচারণায় রাজ্যে না আসলে পঞ্চম দফার ভোটের আগে একেবারে শেষ মুহুর্তে দাজিলিং জেলায় সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সমর্থনে বাংলায় এসেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।
গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় কোচবিহার জেলার শীতলকুচিতে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে পঞ্চম দফায় অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে ৮৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ভোট শুরু হবে সকাল ৭ টা থেকে, কোনরকম বিরতি ছাড়াই চলবে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত। ৪৫ টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য ১৫,৭৮৯ টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পঞ্চম দফায় যে ৪৫ টি কেন্দ্রে ভোট হতে চলেছে, ২০১৯ সালের লোকসভার নিরিখে ওই সব কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে অনেক ভাল জায়গায় অবস্থান করছে বিজেপি। তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে আছে গেরুয়া শিবির। যদিও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৩২ টি আসন পেয়েছিল, বাম-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে ছিল ১০ টি আসন, বিজেপি একটি আসনেও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি।
রাজ্যের ২৯৪ টি আসনের মধ্যে আগামী ২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় ৪৩ টি আসনে, ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় ৩৬ টি আসনে, ২৯ এপ্রিল অষ্টম ও শেষ দফায় ৩৫ টি আসনে ভোট নেওয়া হবে।তবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে লাফিয়ে বাড়ছে তা নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কারণ নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বা মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা জমায়েতে অংশ নিচ্ছেন তা রীতিমতো আতঙ্কের।
এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক’ এবং জঙ্গিপুরের আরএসপি প্রার্থী প্রদীপ নন্দীর মৃত্যু হওয়ার খবরে উদ্বেগ চরম মাত্রায় পৌঁছয়। এমন এক পরিস্থিতিতে শেষ তিন দফার ভোটগ্রহণ একটি মাত্র দফায় করা যায় কি না তা নিয়ে শুক্রবার দুপুরেই নির্বাচন কমিশনের আহ্বান একটি সর্বদল বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের তরফে তাদের মতামত জানানো হয় নির্বাচন কমিশনকে। যদিও ওই বৈঠকে দফা কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন।
বদলে জানানো হয় কোভিড স্বাস্থ্য বিধি মেনেই প্রচারণার কাজ চলছে। ভার্চুয়াল প্রচারণার সম্ভাবনাও খারিজ করে দিয়েছে কমিশন।
ভোট গণনা আগামী ২ মে। ওইদিন অসম, কেরল, তামিলনাড়ুর– ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল পডুচেরিতেও বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে।
No comments:
Post a Comment