নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন সক্রিয় হয়ে উঠছে প্রতারণা চক্র। এবারে বিজনেস অ্যাপের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় পাতা হচ্ছে ফাঁদ । এক সরকারি কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে দুষ্কৃতিরা এইভাবেই ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিল ৬৮ হাজার টাকা। মিঠুন চট্টোপাধ্যায় নামে পূর্ত দপ্তরের এক কন্ট্রাকটর হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার সেলে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন এ বিষয়ে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি দুষ্কৃতিদের।
হাওড়া ময়দানের রাজবল্লভ সাহা লেনের বাসিন্দা মিঠুন চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন সরকারি কন্ট্রাক্টর হিসাবে কাজ করেন। সম্প্রতি তিনি বেহালার পিকনিক গার্ডেন বাস স্ট্যান্ডের কাছে সি এন রায় হাউসিং স্টেটের বিভিন্ন ব্লকে বাড়ীর মেরামতি এবং পরিবর্তনের কাজের জন্য সরকারের থেকে বরাত পান। সেইমতো তিনি ওই কাজ শুরু করার চিন্তাভাবনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ শে আগস্ট সকালবেলায় ৫০০ বস্তা আলট্রাটেক সিমেন্টের জন্য বিজনেস অ্যাপ ইন্ডিয়ামার্ট-এ আবেদন করেন। সেদিন দুপুরবেলায় নিজেকে আলট্রাটেক কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ডিসংক আনন্দ নামে এক ব্যক্তি মিঠুন বাবুকে ফোন করে সিমেন্টের অর্ডার নিয়ে কথা বলেন। এরপর মিঠুন বাবু বস্তা প্রতি ২৭৫ টাকা হিসাবে ২৫০ বস্তা সিমেন্টের অর্ডার দেন। ডিসংক আনন্দ ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকার মধ্যে ফিফটি পার্সেন্ট তাকে অ্যাডভান্স হিসাবে পাঠাতে বলেন। তার কথামতো গত 25 শে আগস্ট সকাল বেলায় ওই কন্ট্রাক্টর হাওড়ার কানাডা ব্যাঙ্ক থেকে ৩৫ হাজার টাকা ওই সিমেন্ট কোম্পানির কাছে পাঠান। টাকা পৌঁছে যায় ইন্দুসিন্ড ব্যাঙ্কএর ওয়ার্ধা রোড ব্রাঞ্চ, নাগপুর, মহারাষ্ট্রতে। এই ঘটনার আধ ঘণ্টার মধ্যেই ওই সিমেন্ট কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হিসাবে পরিচয় দিয়ে রাম প্রকাশ নামে এক ব্যক্তি বাকি টাকা তার কাছ থেকে দাবী করেন। না হলে লরির চালান তৈরি হবে না, মাল পাঠানো কার্যত অসম্ভব বলে তাকে জানান। পরের দিন সিমেন্ট সাইটে পৌঁছে যাবে এই প্রতিশ্রুতি দিলে মিঠুন বাবু সেদিনই বিকেলে আরও ১৫ হাজার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে জমা করেন। কিন্তু তাতেও তারা মাল পাঠাতে অস্বীকার করেন। শেষমেষ রাম প্রকাশ জানায় অর্ডারের পুরো টাকাটা অর্থাৎ আরও ১৮ হাজার টাকা জমা করলে তবেই লরি চালকের মোবাইল নম্বর এবং রোড চালান দেওয়া হবে। উপায় না দেখে মিঠুন বাবু আরও ১৮ হাজার টাকা পরের দিন সকালে পাঠান। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী সন্ধ্যেবেলা সাইটে মাল না আসায় ওই ব্যবসায়ীর সন্দেহ হয়। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার যাবতীয় টাকা হেমলতা কুমারী নামে একজনের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, যিনি ওই সিমেন্ট কোম্পানির কেউ নয়। ওই ব্যাংক থেকেও তাকে জানানো হয় যে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে সেটা আলট্রাটেক কোম্পানির অ্যাকাউন্ট নয়।
প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি হাওড়া থানায় গত ২৮ শে আগস্ট লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার সেলের দ্বারস্থ হন। পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত দুষ্কৃতিদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনু,মান এর পিছনে আন্তঃরাজ্য সাইবার গ্যাং-এর হাত রয়েছে।
No comments:
Post a Comment