মুম্বাই শহরে সে পা রেখেছিল একটি চাকরির খোঁজে, কিন্তু আচমকাই সুযোগ এসে গিয়েছিল সিনেমায় অভিনয় করার। সিনেমার নাম মৃগয়া। আর প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত, পেয়ে গেলেন জাতীয় পুরষ্কার। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, গায়ের রঙ কালো থাকায় বলিউড তাকে আর সুযোগ দিতে চাইল না। ক্ষিদে ভরা পেট নিয়ে ছেলেতা ঘুরে বেড়াত সমস্ত স্টুডিওতে। সেই সময় একজন সাংবাদিক জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত ছেলেটিকে স্টুডিওর বাইরে ঘুরতে দেখে তার সাক্ষাৎকার নিতে চান। কিন্তু ছেলেটির স্পষ্ট উত্তর, যদি সেই সাংবাদিক তাকে ভরপেট খাবার খাওয়ায়, তবেই সে সাক্ষাৎকার দেবে। এমনই ছিল ছেলেটির শুরুর দিনগুলো। কয়েকদিন আগে সেইসব দিনের কথা মনে করে ছেলেটি বলেন, 'আমি কোনও দিন স্বপ্ন দেখা থামাইনি। আমি যখন প্রথম মুম্বাইতে আসি, তখন আমার কোনও থাকার জায়গা ছিল না। আশ্রয়ের খোঁজে কখনও কোন বিল্ডিংয়ের ছাদ বা জলের ট্যাঙ্কের ওপর লুকিয়ে ঘুমিয়ে নিতাম। যাতে সিকিউরিটি গারড আমাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের না করে দেয়। প্রথমের দিনগুলোতে আমি আমার গায়ের রঙের জন্য রিজেক্ট হয়ে যেতাম। অনেক হিরো তাদের হিরোইনকে আমার সাথে কাজ করতে বারণ করে দিত। তখন সিদ্ধান্ত নিই, আমি আমার নাচের প্রতিভাকে কাজে লাগাবো, যাতে লোক আমার গায়ের রঙ নয়, নাচের স্টেপের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।'
এই স্বপ্ন দেখার জেদের জন্যই এরপর একদিন ছেলেটির নাম উঠল লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। এক বছরে ১৯ টি সিনেমা দেওয়া অভিনেতা হিসেবে মিঠুন চক্রবর্তী নামটা খোদাই হয়ে গেল ইতিহাসের পাতায়। সেই কালো, রোগা ছেলেটাই হয়ে উঠল অন্যতম সফল নায়ক। বলিউডের ডিস্কো ডান্সার, ডান্স ডান্স, কসম প্যায়দা করনে ওয়ালি থেকে শুরু করে টলিউডের অন্যায় অবিচার, ফাটাকেষ্ট সিরিজ, তিতলি বা তাহাদের কথা কমার্শিয়াল থেকে আর্ট হাউস সব ধরণের সিনেমাতেই নিজের দক্ষতার ছাপ রাখলেন তিনি। অর্জন করলেন তিন তিনটে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড।
একদিন এক বিল্ডিংয়ের ১৫ তলায় (টপ ফ্লোর) দাঁড়িয়ে থেকে এক ভদ্রলোক নিচের গ্যারেজটা দেখছিলেন। সেই সময় তার ছেলে পাশে এসে দাঁড়াতে উনি জিজ্ঞেস করলেন ওই গ্যারেজটা থেকে এই ১৫ তলায় উঠে আসতে তোর কতটা সময় লাগল? ছেলেটি বলল, 'লিফটে এলাম, তাই মিনিট চারেক।' তখন ভদ্রলোক জবাব দিলেন, "এইটুকু উপরে উঠতে আমাকে, মানে মিঠুন চক্রবর্তীকে মুখে রক্ত তুলে ১৫ টা বছর পরিশ্রম করতে হয়েছে, জানিস!"
এটাই মিঠুন চক্রবর্তী, ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অদম্য লড়াই ও অবিস্মরনীয় রূপকথার কারিগর। তাই আমরা যারা নিয়মিত হারের সম্মুখীন হচ্ছি, তারা যেন সবসময় মিঠুন চক্রবর্তীর এই লড়াইয়ের কথা যেন মনে রাখি। আজ আমরা জেরে গেলেও নিরন্তন ও নিরলস পরিশ্রম আমাদের একদিন ঠিক জিতিয়ে দেবে। আমরা জিতবই।
No comments:
Post a Comment