নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যপালকে এড়িয়ে ফের নয়া সিদ্ধান্ত কলকাতা পুরসভায়। এবার কর মুকুবের জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করল না প্রশাসক মন্ডলী। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ঠেলে দেওয়া হল রাজ্য সরকারের কোর্টে, যা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
করোনার জেরে মার্চ মাস থেকে সেভাবে আদায় হয়নি রাজস্ব। তাই বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে এবার কর মুকুবের কথা ভাবছে কলকাতা পুরসভা। অন্তত এমনটাই আভাস পাওয়া গিয়েছে পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রসাশক ফিরহাদ হাকিমের কথায়। সেক্ষেত্রে সম্পত্তি কর আদায়ের জন্য ১০০ শতাংশ সুদ এবং জরিমানা মুকুব করার কথা ভাবছে কলকাতা পুরসভা। যদিও কর মুকুবের সিদ্ধান্ত কিছু নতুন নয় কলকাতা পুরসভায়। এর আগেও সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও শোভন চট্টোপাধ্যায়রা মেয়র থাকাকালীন কর মুকুবের পথে হেঁটেছিল পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রত্যেকবারই অর্ডিন্যান্স এনেছিল পুর কর্তৃপক্ষ। রাজ্যপালের কাছে তা পাঠিয়ে তাঁর সন্মতিসূচক ভাবে তাঁর সাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বাধীন কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী আর সে পথে হাঁটলেন না। কর মুকুব বিষয়ক প্রস্তাবে সিলমোহরের জন্য এবার তা সরাসরি পাঠানো হল নবান্নে।
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার বকেয়া আদায় বাকি রয়ে গিয়েছে ২৫০০ কোটি টাকা। এই বকেয়া পুরকর আদায়ের জন্য করের ওপর কতটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে বা সুদ কতটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। এতদিন পর্যন্ত শহরের কোন করদাতার কর বকেয়া থাকলে সুদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। জরিমানার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেত ৯৯ শতাংশ। তবে এই ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা ছিল শুধুমাত্র কলকাতা পুরসভার মেয়রের। বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই এই সুদ এবং জরিমানা ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে কলকাতা পুরসভা।
সূত্রের খবর, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৩১মার্চ পর্যন্ত যে সমস্ত করদাতার কর বকেয়া রয়েছে তাদের ব্যাপক হারে জরিমানা এবং সুদ ছাড়ার কথা চিন্তা ভাবনা করছে পুরকর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে অনুমতি চেয়ে পুর নগরোন্নয়ন দফতর একটি চিঠিও লিখেছেন পুর প্রশাসক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অতীন ঘোষ। পুরসূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষ চাইছে যদি এই স্কিম চালুর অনুমতি দেয় পুর নগরোন্নয়ন দফতর। সেক্ষেত্রে নতুন নিয়মে প্রথম ৬ মাসের মধ্যেই যে সমস্ত করদাতারা আবেদন জানাবেন কর জমা দেওয়ার জন্য, তাদের জরিমানা এবং সুদ ১০০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হতে পারে নতুন নিয়মে। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে যে সমস্ত করদাতারা আবেদন জানাবেন কর জমা দেওয়ার জন্য, তাদের জরিমানা ৯৯ শতাংশ এবং সুদ ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
তবে এই নতুন নিয়ম লাগু হবে কিনা তা নির্ভর করছে রাজ্য পুরনগরোন্নয়ন দফতরের ছাড়পত্রের উপর। ফলে গোটা বিষয়টিতে রাজ্যপালের আর কোনও ভূমিকাই থাকছে না। আর এই ঘটনাই ফের আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক কার্যত এখনও সুস্থ হয়নি, অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিকবিদদের।
No comments:
Post a Comment