জীবনের শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নিল সর্বনাশা আম্ফান - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 22 May 2020

জীবনের শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নিল সর্বনাশা আম্ফান




পেশায় মৎস্যজীবী পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর নামক এলাকায় বাসিন্দা সিদ্ধেশ্বর মাজি। তাজপুরে একটা ছোট হোটেলও রয়েছে তার। খুবই সামান্য আয়। স্বামী-স্ত্রী খেটে তার মধ্যেও সংসারটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যেন সব কেড়ে নিল।

প্রথম ধাক্কাটা এল মাস দুয়েক আগে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াল দেশ জুড়ে। বাদ পড়েনি এ রাজ্যও। লকডাউন চালু হল। ফলে পর্যটক আসাও বন্ধ হয়ে গেল। পর্যটক এলে আয় হয়, না হলে কোন আয় নেই। এমনটাই জানান সিদ্ধেশ্বর। কিন্তু তার মধ্যেও গড়িয়ে গড়িয়ে সংসারটা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জোর ধাক্কাটা এল বুধবার। সব গুঁড়িয়ে নিমেষে স্তব্ধ করে দিয়ে গেল আম্ফান। মাথার উপর ছাউনিটাও উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কঙ্কালসার অবস্থায় শুধু পড়ে রয়েছে বাঁশ! ভাঙা ঘরের মাঝে দাঁড়িয়েই হতাশ চোখে তাকিয়ে ছিলেন সিদ্ধেশ্বর মাজি।

বুধবার চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলির পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরেও ব্যাপক তাণ্ডব চালায় আম্ফান। সেই ঝড়েই সিদ্ধেশ্বরের উপার্জন, মাথা গোঁজার ঠাঁই সব উড়ে গেছে। কান্না ভেজা গলায় সিদ্ধেশ্বর বললেন, লকডাউনের জেরে খুব সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। সংসার চালানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম। গত দু'মাস ধরে কোন উপার্জন নেই। কিন্তু এবার মাথার ছাদটাও গেল। জানি না কী খাব। ঘুম উড়ে গেছে। দোকানেও কোন কিছু অবশিষ্ট নেই। আমরা না খেয়ে থাকতে পারব, কিন্তু কিভাবে অভুক্ত রাখব সন্তানদের?

সিদ্ধেশ্বরের স্ত্রী কল্পনাও এমন পরিস্থিতিতে মুষড়ে পড়েছেন। সন্তানদের কিভাবে খাবার জোটাবেন, কিভাবে সংসারটা চলবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তা করছেন। আর বলছেন, ঝড় আমাদের জীবনের সব কিছু নিঃশেষ করে দিয়ে গেল।

হোটেলটাকে আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে তুলতে বেশ কয়েক মাস আগে ব্যাংক থেকে লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সিদ্ধেশ্বর। তখনও করোনা বা লকডাউন পর্ব শুরু হয়নি। স্থানীয় কয়েক জনের কাছ থেকেও কিছু টাকা ধার করেছিলেন। ব্যাংকের কিছু টাকা শোধ করতে পেরেছেন। কিন্তু মার্চ থেকেই জীবনটা যেন বদলে গেছে সিদ্ধেশ্বরের। হোটেল খোলা নিষিদ্ধ ছিল লকডাউনের কারণে। ফলে সরকারের দেওয়া চাল, ডালের ওপরই ভরসা করে পেট চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এভাবে কতদিন?

একদিকে ব্যাংক ঋণ, তারপর ধার-দেনা, সন্তানদের কিভাবে খাওয়াবেন-বুধবারের পর থেকে এতগুলো চিন্তা যেন সব তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছিল সিদ্ধেশ্বরের। তার কঙ্কালসার বাড়ীটার মতোই বিধ্বস্ত সিদ্ধেশ্বর বলে ওঠেন, "আর বাঁচার কোন পথ দেখছি না। হয় বিষ খেতে হবে, না হলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে। মানসিক ও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আমি"।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad