আজ ঐতিহাসিক মে' দিবস - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 1 May 2020

আজ ঐতিহাসিক মে' দিবস

download+%25283%2529



ঐতিহাসিক মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। এ দিবসটি প্রতিষ্ঠার জন্যে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্ত ঝরাতে হয়েছে। কারণ তখন শ্রমিকদের কাজের সময় সীমা নির্দিষ্ট ছিল না। উদয়াস্ত শ্রমিকদের কাজ করতে হতো। ১৮ থেকে ২০ ঘণ্ট পর্যন্ত শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হতো। কাজের সময় সীমা নির্ধারণের দাবি ক্রমশ আন্দোলনের রুপ নেয়।

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের মে দিবসের সাথে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৮৬ সালের এদিনে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো নগরীর ’হে’ মার্কেটের বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকরা মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। আগষ্ট স্পিজ জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয় এবং ১১ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে পরে আরও ছ’জন মারা যায়। পুলিশ বাহিনীও ওই শ্রমিক সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালালে ১১ জন শ্রমিক মারা যায়। পুলিশ হত্যা মামলায় আগষ্ট স্পিজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুই লিং নামে একজন শ্রমিক একদিন আগেই কারাগারে আত্মহত্যা করেন, অন্যজনের ১৫ বছর কারাদন্ড- হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের আগে আগষ্ট স্পিজ বলেছিলেন, ’আজ আমাদের এই ফাঁসি, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে’। এভাবে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘন্টা কাজ করার দাবি স্বীকৃতি পায়।

শ্রমিকরা জীবন দিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। জীবন দিয়ে কাজের আট ঘণ্টা সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল। মূলত, ১৮৮৬ সালের মে মাসেই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম সার্থক রুপ পরিগ্রহ করে। তাই বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ শ্রদ্ধাভরে অধিকার আন্দোলনের দিবস হিসেবে পালন করে। পহেলা মে’কে শ্রমিকদের জীবন উৎসর্গে অবশেষে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে প্রতি বছর ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি ও কর্মজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক আন্দোলন ও আত্মাহুতিকে এদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

১৮৯০ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান বিশ্বে ট্রেড ইউনিয়নগুলো মুক্তবাজার অর্থনীতির পাশাপাশি মুক্ত শ্রমবাজার, মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহের পাশাপাশি শ্রমিকদের অবাধ চলাচলের ন্যায় নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করছে। পশুর মতো পরিশ্রম করে শ্রমিকরা প্রাসাদ গড়ে তোলে। শ্রমিকদের শ্রমের ফলেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা, সম্পদের পাহাড়। কিন্তু কোনও কালেই তাদের শ্রমে গড়া সম্পদ ভোগ করতে পারে না। অষ্টাদশ শতাব্দিতে (১৮৩০-৪৭) পশ্চিম ইউরোপে ট্রেড ইউনিয়নের গোড়া পত্তন হয়। ১৮৩৬ সালে এ আন্দোলন আন্তর্জাতিক রুপ নেয়। মে মাস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের মাস হিসেবে। ভাগ্যবঞ্চিত মানুষের মনে এ দিনটি পেরণা যুগিয়ে আসছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশে দিবসটি পালিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এ দিবসটি পালিত হয় না।

যে উন্নয়নে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষা হবে, সেই কাজে শ্রমজীবী মানুষ তার সর্বস্ব দিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। শ্রমিকদর ন্যায্য অধিকার প্রদানের মাধ্যমে শিল্প বিকাশ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমেই জাতীয় অর্থনীতি সুদৃঢ় হবে। তবেই শিল্প, শ্রমিক, দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হবে।


No comments:

Post a Comment

Post Top Ad