চোখে দেখা যায় না, এই ভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে সামাজিক দায়িত্ববোধ: ইউরোপ থেকে লিখেছেন বিজ্ঞানী কনক রায় - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 28 March 2020

চোখে দেখা যায় না, এই ভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে সামাজিক দায়িত্ববোধ: ইউরোপ থেকে লিখেছেন বিজ্ঞানী কনক রায়




২৪ শে মার্চ আমার দেশে ফেরার টিকিট ছিল। একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় যোগ দেব ঠিক ছিল এপ্রিল মাস থেকেই। সব বদলে গেল নিমেষে। হঠাৎ খবর পেলাম ইউরোপের কোনও বিমান ভারতে ঢুকতে পারবে না। এদিকে ব্রিটেনের চেনা ছন্দ ও গতানুগতিক জীবনেও ইতিমধ্যে নেমে এসেছে লকডাউন।কবে দেশে ফিরতে পারবো,  কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে  এই নিয়ে অনিশ্চয়তা।


আমি থাকি অক্সফোর্ডের কাছেই একটি  ছোট্ট শহরে। এখানকার রাষ্ট্রীয় সিঙক্রোট্রনে ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা করছি। খুব সাজানো গোছানো এই শহরে এখন জনমানব শূন্য রাস্তাঘাট। বন্ধ দোকানপাট, রেস্তোরাঁ। উদ্বেগের সামগ্রিক অভিব্যক্তি এখন বিলেতের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম সবখানেই অবশ্য।


স্কুল-কলেজ গুলি আগে থেকেই ছুটি। যতটা সম্ভব বাড়ী থেকেই বা অনলাইনে ফোনের মাধ্যমে কাজকর্ম করার নির্দেশ এসেছে। একান্ত আবশ্যিক খাদ্যসামগ্রী, ওষুধপত্র কেনাকাটা বা দিনে একবার বাইরে হাঁটা ও জগিং এ ছাড় ২ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে।


এই পরিস্থিতিতে দেখলাম মানুষের মনের প্যানিক কতটা জোরালো। সুপার মার্কেট গুলি বারবার আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও সাহেব সুবোরা টয়লেট পেপার বান্ডিলের পর বান্ডিল কিনে সাফ করে দিয়েছে। অমিল নানা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী; হ্যান্ড  স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি।


সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে আশাব্যঞ্জক দিকগুলিও দেখছি। স্কুলগুলি যেমন ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ফ্রন্টলাইন স্টাফ ও শিশুদের জন্য দিনে খোলা। ঐভাবে তাদের খাবার ও দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে।সুপারমার্কেটগুলি বয়স্কদের জন্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জন্য পৃথক সময় দিয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করবার জন্য। অসংখ্য মানুষের ধন্যবাদবার্তা ও শুভেচ্ছাবার্তা  কুর্নিশ করছে এই দুঃসময়ে  যারা নিরলস কাজ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে। দিকে দিকে সমাজকর্মীরা হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে  সেলফ-আইসোলেশনে থাকা মানুষদের বাড়ীর বাইরে খাবার রেখে আসতে, মনের উদ্বেগ দূর করার জন্য ফোনে বা ভিডিও কলে পরামর্শ দিতে। এই প্রবৃত্তিগুলিই সমাজ ব্যবস্থার আকর। চোখে দেখা যায় না এই ভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে সামাজিক দায়িত্ববোধ, একাত্ববোধ, আগামী দিনগুলিতে যা বিশেষভাবে জরুরি। রামকৃষ্ণ মঠ  ও মিশনের অনুপ্রেরণা  সেই বৈদিক বাণীর মতো "আত্মন মোক্ষারথম  জগদ্ধিতায় চ" "নিজের মোক্ষ লাভ তথা জগতের কল্যাণ"  ..এই আমাদের পরামর্শ।



                                                                                             বিজ্ঞানী কনক রায়

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad