আজ পৃথিবী ব্যাপী করোনা ভীতিতে রাজা-প্রজা, ডাক্তার, শিক্ষক সবাই। তবে আলাদা করে দাম্পত্য কেন, প্রয়োজন আছে কি? উত্তর হল, অবশ্যই আছে। কারণ আমরা সবাই সবার যার যার গৃহে অবস্থান করছি। আজকাল একত্রে আমরা খুব কম সময় একই জায়গায় অবস্থান করি, তাও আবার নিজের বাড়ীতে ।
এখানে দেখতে হবে কারও কিন্তু ইচ্ছা করে থাকতে যে খুব আনন্দ হচ্ছে তা না। প্রাকৃতিক কারণে ইচ্ছা বা প্রয়োজনের বিরুদ্ধে আমরা সবাই বাড়ীতে আছি। বাড়ীতে থেকে কি করছি? প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্লাটফর্মে আছি। চারপাশে কি হচ্ছে, কোথায় কোথায় করোনা রোগী কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, আমাদের কাছে এল কিনা, বাড়ীতে কারা আসছেন, তারা কি পরিষ্কার হয়ে আসছেন কিনা, বাড়ীতে কোন কোন জায়গা পরিষ্কারের প্রয়োজন, বিল্ডিংয়ে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা, দরজায় কে এল, লিফ্ট এ আগে কে গেছে, ময়লা কি করে নিয়েছে, বাড়ী সব সময় পরিষ্কার করতে হবে, সব মিলিয়ে মানসিক রোগ হওয়ার উপক্রম ।
অন্য দিকে প্রায় বাড়ীতে কাজের লোককে নিষেধ করা হয়েছে । কাজের লোকেরও পরিবার আছে, আছে করোনার ভয়। সবচেয়ে বড় ভয় আমরা ঠিক মতো আছি কিনা। এলাকায় নতুন করোনা ভাইরাস বহনকারী কেউ আসলো কিনা বা ওরা কি করছে, এই আতংক মহামারী করোনার জন্য । পরিবারের সবাই সেলফ ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাচ্ছে বা যেতে হচ্ছে। পরিবারে প্রতিটা মানুষ বাড়ীর কিছু না কিছু কাজ করছেই ।
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা, পরিবারের কর্তা বা কর্তী যিনি এখনও অফিস থেকে ছুটি পাননি। হয়তো ডাক্তার বা ব্যাংকার যারা এই মুহূর্তে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের লাইফ রিস্ক কিন্তু তাদের দায়িত্ব পালনে দৃঢ় আছেন তারা, নিজের ক্যারিয়ার আর পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে। ছুটিতে আছেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আর বিদেশি বিনিয়োগ বা আমদানি-রপ্তানি নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা। দুশ্চিন্তায় আছেন কোম্পানি থাকবে কিনা? সব কিছুর দাম বাড়ছে, স্বল্প আয়ের সংসার চালানো যাবে কিনা?
তাই দাম্পত্য জীবন নিয়ে আলোচনা অবশ্যই করতে হবে । এখানে দুটো দিক আছে - একদিকে দুশ্চিন্তা, অন্যদিকে অনিশ্চয়তা; স্বাভাবিকভাবেই যা মনের উপর দাগ ফেলে। আরও অনেক দিক আছে, একদিকে বাড়ীর গৃহকর্মীর সাহায্যের কেউ নেই। অন্যদিকে সব কাজের চাপ একহাতে। এমন দুঃসময় বলে কয়ে আসে না।
সময় সবার খারাপ যাচ্ছে। তাই আপনার সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ আপনার পারিবারিক শান্তিতে অনেক বড় ভূমিকা এনে দেবে। একজন অন্যকে তার মতো করে বুঝবার চেষ্টা করুন। একজন রাগ হলে অন্যজন চুপ করে থাকুন। তার কোন ব্যাপারে কষ্ট হচ্ছে, তা জানতে চেষ্টা করুন। এই সময় রাগ করে বাড়ী ছাড়া ঠিক হবে না। তেমন সময় হলে বউকে কাজে একটু সাহায্য করলেও দেখবেন আপনার নিজের ভালো লাগছে।
সময়ের এই বিপর্যয় অবস্থায় সঙ্গীর খুব কাছের বন্ধু হয়ে যান, সমস্যা গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন -এইতো সময় পরিবার আর কাছের লোকজনকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসার আর পারিবারিক কিছু সময় কাটানোর।

No comments:
Post a Comment