জানেন কি, মানুষ মৃত্যুর ঘ্রাণ অনুভব করতে পারে? - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 8 March 2020

জানেন কি, মানুষ মৃত্যুর ঘ্রাণ অনুভব করতে পারে?





যখন কোন পশু মারা যায়, তখন তার শরীর থেকে একধরনের কটু গন্ধ বের হয়। এই গন্ধের কারণ হচ্ছে পিউট্রাসিন। মৃতদেহের টিস্যুর মধ্যে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ভেঙে যাওয়ার কারণে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে এই পিউট্রাসিন তৈরি হয়। নতুন একটি গবেষণা বলছে, এই ঘ্রাণ বুঝতে পারা মানেই আসন্ন মৃত্যু বা বিপদের বিষয়টি আঁচ করা।
ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের গবেষক ও মনোবিজ্ঞানী ড. আর্নড উইসম্যান এবং আরকানাস টেক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ড. ইলান শ্রিরা বলেন, ‘গবেষণার প্রথম ফলাফলে দেখা গেছে যে, নির্দিষ্ট রাসায়নিক যৌগ বা পিউট্রাসিন তৈরি হওয়া একধরনের হুমকির মতো। এ পর্যন্ত পাওয়া সব তথ্য-প্রমাণে দেখা যাচ্ছে যে, এই ধরনের সব রাসায়নিক সংকেত ঘামবাহিত।’
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেডিকেল ডেইলিকে ড. আর্নড ও ড. ইলান বলেন, ‘আমরা জানি না কেন আমরা অন্য কারও শরীরের গন্ধ পছন্দ বা অপছন্দ করি। ঘ্রাণ কীভাবে আমাদের আবেগ, কর্মকাণ্ড ও আচরণকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়েও আমরা তেমন কিছু জানি না। ঘ্রাণ যে ততটা ভয়াবহ হতে পারে, সে সম্পর্কে আমরা চিন্তাও করতে পারি না।’
যদিও পশুদের রাজ্যে, বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিই হল ঘ্রাণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পিউট্রাসিন একধরনের রাসায়নিক সংকেত দেয়, যা থেকে প্রাণি বুঝতে পারে যে, কোন এলাকা তাকে পরিত্যাগ করতে হবে বা এড়িয়ে চলতে হবে।

একইভাবে মানুষও বিপদ এড়িয়ে চলতে পারে। পিউট্রাসিন আমাদের সতর্ক করে, যেকোন বিপদ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে বা পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়, এমনভাবেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন গবেষকরা।
আগের বেশকিছু ঘ্রাণবিষয়ক গবেষণার ফলাফল থেকে আর্নড ও ইনার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন যে, পিউট্রাসিন কি মানুষের মধ্যে বিপদে পড়লে সতর্ক করে দেওয়ার আচরণ তৈরি করে?

এ জন্য তাঁরা কিছু পরীক্ষা করলেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা সজ্ঞানে বা আনমনে পিউট্রাসিনের বিষয়টি খোলাসা করেছে। অংশগ্রহণকারীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা দুই দলের মধ্যে তুলনা করেন। কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে তিন ধরনের ঘ্রাণের মধ্যে যে কোন একটি নিতে বলা হয়। এগুলো হল পিউট্রাসিন, অ্যামোনিয়া ও জল বা কোন গন্ধ ছাড়া। এরপর অংশগ্রহণকারীদের একটি বিদেশি শিক্ষার্থীর কথা পড়তে দেওয়া যায়। যেখানে ওই শিক্ষার্থী নিজেদের মূল্যবোধ ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করছে। পড়া শেষে অংশগ্রহণকারীদের ওই শিক্ষার্থী সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বলা হয়।
সে সময় দেখা যায়, যে শিক্ষার্থীরা অ্যামোনিয়া ও জলের গন্ধ নিয়েছে তাদের চেয়ে যারা পিউট্রাসিন গন্ধ নিয়েছে তারা অনেক বেশি বিদ্রোহী আচরণ করছে। এর থেকে বোঝা যায় যে, পিউট্রাসিনের জন্যই মানুষের মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেতনা তৈরি হয়।

গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা যেহেতু পিউট্রাসিনের গন্ধের সঙ্গে পরিচিত নয়, সে কারণে মৃত্যু বা বিপদের সঙ্গে এর সম্পর্ক আঁচ করতে পারেনি। তা ছাড়া গবেষণা চলাকালে তারা মস্তিষ্কের মাধ্যমে ঘ্রাণটি শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যখন সত্যিই মৃত্যু বা বিপদ আসবে, তখন মস্তিষ্কের চেয়ে নাক অনেক সক্রিয় হয়ে যায়। আর তখনই পিউট্রাসিনের ঘ্রাণ শনাক্ত করে যুদ্ধ অথবা পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হয়ে ওঠে মানুষ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad