রাজনীতির ছাতা মাথায় দিয়ে মধ্যযুগীয় লাম্পট্য বর্বরতার জনপদে ফিরল দত্তপুকুর ? শিকার সেই মহিলারাই !!!
ববর্ষবরণের শেষ লগ্নে দুটি ঘটনায় একজনের মৃত্যু ও এক তরুণীর ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে গণধর্ষণের অভিযোগ। প্রশ্নের মুখে পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলের ভূমিকা। প্রশ্নের মুখে দত্তপুকুরের মহিলাদের নিরাপত্তা ? কখনও স্টেশনে মহিলাদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন মহিলারা। কখনও কটুক্তি শ্লীলতাহানির অভিযোগ তো কখনও গণধর্ষণের অভিযোগ । ৪৮ ঘন্টার এই পরিবেশ পরিস্থিতি কি করে তৈরি হল দত্তপুকুরে ?
বাসিন্দারা বলছেন, শাসক দলের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ছাতার তলায় থাকা যুবকরা পুলিশকে গ্রাহ্য করেনা। বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে মদ মাংসের পার্টি, জুয়া মদের ব্যবসা চলে রমরমিয়ে। ফলে পুলিশও বখাটে দুষ্কৃতীদের পারলে বস বলে ডাকে। কিছুই বলতে পারেননা। করতে পারেনা।
দত্তপুকুর এলাকায় বেশিরভাগ বাসিন্দারা হলেন ওপার বাংলা থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা। ফলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে বাসিন্দারা কেমন যেন বাঁকা নজরের শিকার হচ্ছে। উল্টোদিকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল শাসকের ছত্রছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীরা। শেষ সাত দিন ধরে চলছিল টিটকিরি আর চমকানির উড়ন্ত সংলাপ।
ফ্ল্যাশব্যাক : এই ঘটনা ঘটনার একদিন আগে হাসনাবাদগামী ট্রেনে দুই মহিলার মধ্যকার বচসা ঘিরে পরদিন দত্তপুকুর থানা এলাকার কাজিপাড়া স্টেশনে এসে একদল মহিলা স্টেশনে থাকা কিছু মহিলাদের ওপর চড়াও হয়। অভিযোগ বেছে বেছে মহিলাদের মারধর করে কাপড় ছিড়ে দেয়। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হতেই নামে র্যাফ পুলিশের বাহিনী। লাগানো হয় ধর্ম রাজনীতির রং।
পরদিনই একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যার জেরে বর্তমান দত্তপুকুর বাজার এলাকা একে বারে শুনশান। মোড়ে মোড়ে বসেছে পুলিশের টহল । দোকানপাট বন্ধ ।ঘটনাস্থলে 144ধারা জারি ।35 নম্বর জাতীয় সড়কে কোন সরকারি বেসরকারি বাস চলছে না। যাতায়াত বলতে হাতে গোনা ছোট ছোট গাড়ি। এলাকায় অশান্তির ভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়েছে বহু গ্রামবাসী। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। অভিযুক্তদের পলাতক। পুলিশ তাদের ধরতে তৎপর।
প্রসঙ্গত একটি খুনের অভিযোগকে ঘিরে বছরের শেষের দিন রাতে উত্তাল হয়ে ওঠে দত্তপুকুর । মৃত তিরিশ বছর বয়সী আশাদুলের বাড়ি দত্তপুকুর থানার নরসিংহ পুর মসজিদ পাড়া । অভিযোগ, দত্তপুকুর থানার দত্তপুকুর হাট এলাকায় একটি মেলা হচ্ছিল। গত সোমবার লোকনাথ মেলা মেলায় একটি মনোহারী দোকানের মালিক আশাদুলের সঙ্গে এক মহিলা ক্রেতার বচসা হয়। অভিযোগ ওই মহিলা ক্রেতাকে অশ্লীল কটুক্তি করে ওই দোকানদার।এতেই উত্তেজনা ছড়ায়। সাময়িক উত্তেজনা মিটলেও মঙ্গলবার তাকে স্থানীয় ছেলেরা ডেকে পাঠায় । ওদিন আশাদুল দোকান খোলে নি । স্থানীয় ক্লাব প্রগতি সংঘের সদস্যরা ওই যুবককে মারধোর করে ক্লাব ঘরে আটকে রাখে। মারধোরের কারনেই তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। পরে তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ।
যদিও পাল্টা অভিযোগে বলা হয়, মৃত যুবককে গনপিটুনির হাত ছিনিয়ে কয়েকজন বাসিন্দা স্থানীয় একটি ক্লাবে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। বাইরে তখন ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা চিৎকার করছিল। পুলিশের হাতে পড়া কিংবা গনপিটুনিতে মৃত্যুর ভয়ে নিজেই আত্মহত্যা করে।
ওইদিন বিকেলে ক্লাবঘর থেকে দেহ উদ্ধার হতেই শুরু হয় উত্তেজনা । রাস্তা অবরোধ , ক্লাব ভাঙচুর , টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয । এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতেই এলাকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন । লাল্টু বলে জনৈকের নেতৃত্বে আশাদুলের ঊপরে অত্যাচার হওয়ার অভিযোগ উঠছে । পরে অভিযূক্তরা গা ঢাকা দিলেও ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করে মৃত আশাদূলের আত্মীয় ও বন্ধুরা। পরে উত্তেজনার পারদ আরো চড়ে । চলে ভাংচুর অগ্নিসংযোগের তান্ডব।
অন্যদিকে একই সময়ে বর্ষ বরনের রাতেই বামনগাছিতে বছর পয়তিরিশের মহিলাকে গনধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন ।
অভিযোগ গণধর্ষণের । রাত বর্ষবরনের , ঘটনাস্থল সাড়ে চার বছর আগে কলেজ ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর নৃশংস খুনের সুবাদে খবরের শিরোনামে থাকা দত্তপুকুর থানার বামনগাছি কুলবেড়িয়া । বর্ষ বরণের রাতেই বনভোজন সেরে মদ্যপ অবস্থায় বছর পয়তিরিশের এক মহিলার বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে । মহিলার বাড়ি গাইঘাটা থানা এলাকার চাদপাড়া এলাকায়। বারাসত থেকে অনতিদূরে যশোর রোডের কাছে এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করার সুবাদে দত্তপুকুরের কুলবেড়িয়ায় ভাড়া থাকতেন নির্যাতিতা । বর্ষ বরণের রাতে চার থেকে পাঁচ যুবক মদ্যপ অবস্থায় মহিলার ভাড়া বাড়িতে যায় পাঁচ যুবক । বাড়ি ওয়ালা তরুণ দেবনাথ প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে বলে অভিযোগ । বাড়ি ওয়ালা কে মারধর করে মহিলার ঘরে ঢুকে মহিলাকে গণধর্ষণ করে। মহিলার চিতকার শুনে এলাকাবাসি তিনজনকে আটকে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেয় । দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে মহিলা ।
সেই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত তিন জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বাকীদের খোঁজ করছে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। তিন অভিযুক্ত যুবকের মধ্যে এক অভিযুক্ত বামুনগাছি সৌরভ হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলো । জেল থেকে বেরিয়ে এসে এরকম অসামাজিক কাজের সাথে ফের যুক্ত হয়। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে দত্তপুকুর থানা পুলিশ । দত্তপুকুর ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন যুবকের একজন মূল অভিযূক্ত রতন দাস (তোতা) । এ ছাড়াও গ্রেপ্তার হয় সৌগত সরকার, মৃণাল বিশ্বাস। এলাকাবাসীর বক্তব্য , তিনজনকে পুলিশ ধরে নি -ধরেছে স্থানীয় জনতা । এর পরে পুলিশ নতুন করে কিছুই করে উঠতে পারে নি ।অভিযোগ , পুলিশ প্রশাসন তথৈবচ । এবং সর্বোপরি খুন হওয়ার পরেও রেল লাইনে টুকরো টুকরো হওয়া প্রতিবাদী সৌরভের গ্রামে এখনও মহিলাদের নিরাপত্তা একদম শূন্য । প্রশ্ন , সৌরভের বলিদান কি দিয়েছে? বর্ষবরনের রাতে গণধর্ষণ পুরানো স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে ? মধ্যযুগীয় লাম্পট্য বর্বরতার জনপদে নাম লিখিয়েছে দত্তপুকুর ।
No comments:
Post a Comment