নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিজেপির ওপর আস্থা হারাচ্ছে পুরুলিয়া। ফলে মমতা ব্যানার্জীর মিছিলে ভীড় বেড়েছে। মমতা ব্যানার্জীর মিছিল দেখতে এবং পাশে থাকতে হাজির হলেন খোদ পুরুলিয়া টাউনের তৃণমূল বিরোধী শিবিরের বহু মানুষ। পুরুলিয়া জেলায় নয়টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে পুরুলিয়া টাউনে সব থেকে বেশি তৃণমূল বিরোধী ভোটারের বাস। সোমবার বিকেলে মমতা ব্যানার্জীর মিছিলে সেই পুরুলিয়া টাউনের লোকের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতন, যা দেখে চমকে ওঠেন খোদ সাংবাদিক মহল। সাংবাদিক মহলের প্রশ্ন, কি এমন ঘটল যে পুরুলিয়া টাউনের বাসিন্দারা মমতা ব্যানার্জীর মিছিলে ভিড়লেন?
প্রেসকার্ড নিউজের টিম পুরুলিয়া টাউনের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানতে পারে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুরুলিয়া জেলায় একটা পূর্ণ ও দুটি আংশিক লোকসভা আসনে মোট নয়টি বিধানসভা কেন্দ্র আছে। ছয় মাস আগের লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ার নয়টি বিধানসভার আটটিতে বিজেপি জেতে একটিতে তৃণমূল জেতে। বর্তমানে সাতটি তৃণমূলের দখলে আর দুটি কংগ্রেসের।
মমতা ব্যানার্জীর মিছিলে আসারা জানাচ্ছেন, লোকসভা ভোটে জেতার পর বিজেপি নেতৃত্ব পুরুলিয়াকে নার্সিং করতে পারেনি। উল্টে বিজেপি নেতারা নিজেদের ভোটে জেতার আগেই এখন থেকেই নিজেদের বিধায়ক চেয়ারম্যান ভাবতে শুরু করেছে। জনগনের সাথে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। বিজেপির সংগঠনেও বিবাদ বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুন। ফলে মমতা ব্যানার্জীই পুরুলিয়ার তৃণমূল বিরোধীদের কাছে শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে।
মমতা ব্যানার্জীকে দেখতে এবং ছবি তুলতে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেদের অসংখ্য ভোটাররা রাস্তার পাশে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি অসংখ্য তৃণমূল বিরোধী ভোটাররা মমতা ব্যানার্জীর মিছিলে অংশ নিয়ে লম্বা করেছেন মিছিল।
পুরুলিয়া জেলায় বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের বসবাস নেই বললেই চলে। নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে বিপক্ষের অংশ অর্ধেক। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী আন্দোলনের মিছিলে নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে তেমন আগ্রহী মানুষের সংখ্যা খুব কম হলেও বিজেপি বিরোধী সংখ্যা ছিল বেশি।
নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতা করার জন্য মমতা ব্যানার্জীকে বেগম বলে সামাজিক মাধ্যমে কটুক্তি করে তৃণমূলকে মুসলিমদের দল আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করেন একদল নেটিজেন। হিন্দু অধ্যুষিত জেলা পুরুলিয়ায় মমতা ব্যানার্জীর মিছিলের ভিড় কেমন হয় তা ছিল অ্যাসিড টেস্টের মতন। কারণ, ১১ সালের পরিবর্তনে হিন্দু অধ্যুষিত জেলা থেকে তৃণমূলের জেতার সাফল্য ছিল বেশি। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতন জেলাগুলোতে তৃণমূলের জয়ের পারদ ছিল চড়া। তেমনই মালদা মুর্শিদাবাদের মতন মুসলিম অধ্যুষিত জেলায় বাম কংগ্রেসের জয়ের পারদ ছিল চড়া। মমতা ব্যানার্জী নানা প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হলেও মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা এলাকাগুলো থেকে সাফল্য আসেনি সেভাবে। তবে পঞ্চায়েত ভোটের পর ছবি যায় পাল্টে। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বিজেপি। হিন্দু অধ্যুষিত তথা গ্রামীণ এলাকার লোকসভা থেকে জিতে বিজেপি পৌঁছায় ১৮ তে।
তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে মিশ্র জনবসতি এলাকায়। লোকসভা ভোটে সোজাসুজি মেরুকরণ দেখা গেছে। মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা মমতা ব্যানার্জির ওপর আস্থা রেখেছে।
মেরুকরণের এই রাজনীতির টেবিলে পুরুলিয়া ছিল তৃণমূল সম্পর্কে হিন্দু ভোটারদের মানসিকতা বোঝা। এই পরখ করার খেলায় তৃণমূল জিতল, যদিও কৃতিত্ব বিজেপির। এই দাবি করেছেন সোমবারের মিছিলে অংশ নেওয়ারা।
মমতা ব্যানার্জীর মিছিলে অংশ নেওয়া আদিবাসী সমাজ থেকে সবাই বিজেপির সংগঠন ও নেতৃত্বকে অচল আখ্যা দিয়ে বলেছেন কেন্দ্রে যেমন বিজেপির বিকল্প তৃণমূল নয়, তেমনই রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি নয়।
আবার কিছু মানুষ বলেছেন, দিদিকে দেখতে এসেছি। হাতের সামনে দেখার সুযোগ পেয়েছি তো। দিদির মত নেতৃত্ব বাংলায় তো আর নেই কেউ। বিজেপির ওপর লোকসভায় তার আগে পঞ্চায়েতে আস্থা রেখে ভোট দিয়েছিলাম। বিজেপি নেতৃত্ব মানুষের আস্থাকে সম্মান জানাতে পারেনি। রাজ্য থেকে জেলা হয়ে মন্ডল পর্যন্ত বিজেপির যে সংগঠন নেতৃত্ব তারা বামেদের মতন। তৃণমূলের থেকে খারাপ। তৃণমূলই মন্দের ভালো। তৃণমূলের বিকল্প এখন ফাঁকা। যাবো কোথায় ?
No comments:
Post a Comment