৭২ বছর পরও জিম্মি স্বাধীনতা? - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 4 December 2019

৭২ বছর পরও জিম্মি স্বাধীনতা?




নিজস্ব প্রতিবেদনঃ
আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আজ ৭২ বছর হয়ে গেল। ১৫ ই আগস্ট এলেই ঘটা করে পালন করি স্বাধীনতা দিবস। একবার বুকে হাতে রেখে বলুন তো, প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হতে পেরেছি কি? সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মের নামে গোঁড়ামি, মারামারি, হিংসা, খুনোখুনি ইত্যাদি সব কিছু প্রতিদিন একটু একটু করে ঘুন ধরার মত করে শেষ করে দিচ্ছে আমাদের সমাজ। তবে আজ এসব কথা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আমি এমন একটি সমস্যার কথা বলছি, যা শোনামাত্র শরীর মনে শিহরণ জাগে, এক অজানা ভয় জাঁকিয়ে বসে মনে। হ্যাঁ বলছি ধর্ষণের কথা। কঠিন মহামারী, যা আমাদের দেশে ভীষণ ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা কারও নিস্তার নেই।

ঘরে, বাইরে সর্বক্ষণ কিছু লালসাময় চক্ষু আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিন এই ভয়ানক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে কোনও না কোনও নারী। হোক না সে কোলের শিশু, তবুও তো সে কন্যা, তার ক্ষুদে শরীরটার স্বাদ না পেলেই যে নয়! - এমনই মানসিকতা রাখা মানুষেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদেরই মাঝে। তাই আমাদের সকলকে খুব বেশি সচেতন হয়ে উঠতে হবে।

বিশেষ করে শিশু কন্যার প্রতি একটু সজাগ দৃষ্টি অবশ্যই রাখবেন। কোন আত্মীয় পরিজনের কাছে তাকে ছেড়ে দেবেন না, মনে রাখবেন অনেক সময় শুরুটা এখান থেকেই হয়। শিশু যদি বিশেষ কাউকে দেখে ভয় পায়, জড়োসড়ো হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে বৈকি! এরপর যখন সে স্কুল যাবে, তাকে ধীরে ধীরে ভালো ও খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দিন। তার সরলতার সুযোগ যেন কেউ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে যতটা সম্ভব তাকে বোঝাতে হবে। খেয়াল অবশ্যই রাখবেন, যদি শিশু কোনও বিশেষ শিক্ষক বা অন্য পরিচিত কাউকে দেখলে বা তার নাম শুনলে ভয়ে শিউরে উঠছে কিনা! তেমন হলে খোঁজ খবর নিন। শিশু যদি স্কুল যাওয়ার সময় বায়না করে, বা অন্য যে কারও কাছে যেতে আপত্তি জানায়, তবে সেটা শুধু তার বাহানা বা দুষ্টুমি ভেবে এড়িয়ে যাবেন না, বরং সচেতন হয়ে বিষয়টির গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সন্দেহজনক কিছু আভাস পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। আমি বলব, কন্যা সন্তানকে নাচ, গান, আবৃত্তি ক্লাসের পাশাপাশি সেল্ফ ডিফেন্স শেখানোর ক্লাসেও ভর্তি করুন। আজকের সমাজে নিরাপদ থাকতে হলে এই শিক্ষা তাকে প্রতি পদক্ষেপে সাহায্য করবে।

তবে একটা কথা মনে রাখবেন, কেবল কন্যা শিশুই নয়, পুত্র সন্তানও কিন্তু হতে পারে যৌন হয়রানির শিকার। সে সম্পর্কেও  সাবধান হতে হবে। ছোট থেকে তাদেরও অবশ্যই শেখান কিভাবে কার সাথে কি আচরণ করা উচিৎ।

মনে রাখবেন সমাজ এক দিনে পরিবর্তন হয় না, আর আপনার বা আমার একার পক্ষে সমাজ বদলে ফেলার ক্ষমতা টুকু নেই। আমরা যতই নারী স্বাধীনতা নিয়ে গলা ফাটাই  না কেন, নারী-পুরুষ সমান বলি না কেন, যতই নিজেদের আধুনিক বলি না কেন, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, মেয়েদের জন্য সমাজ কখনও বদলে যায় না। আর নির্ভয়া, প্রিয়াঙ্কা বা আসিফার সাথে ঘটে যাওয়া নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনা গুলি বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কতটা হিংস্রতায় ভরে গেছে আমাদের সমাজ।ধর্ষন ছাড়াও ঘটছে নিত্য যৌন হয়রানির মত ঘটনা। বাস, ট্রাম, ট্রেন, মেট্রো কোনও জায়গাই বাদ নেই। আর এক শ্রেণির লোক রয়েছে, যারা এসবের জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে চলেছেন।  তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন একটাই- উত্তেজক পোশাক পড়লেই যদি যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হতে হয়, তবে বলতে পারেন, কোলের শিশুরা বা বৃদ্ধারা কেন এই জঘন্য ঘটনার শিকার হয়? আসলে সবটাই মন মস্তিষ্কের ব্যপার। বিকৃত মানসিকতার ফল এসব।

তাই মেয়েদের পোশাককে অযথা দায়ী করে এই সমস্যাটা ঝেঁড়ে ফেলার চেষ্টা না হয়, নাই করলাম আমরা। সকলে মিলে একটু ভালো চেষ্টা করা যেতেই পারে, আর শুরুটা হোক নিজের ঘরের থেকে। ঘরের মেয়েকে শেখানোর পাশাপাশি ঘরের ছেলেটিকেও শেখান মেয়েদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিৎ, আর এটা ছোটবেলা থেকেই করতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন যেন প্রয়োজনের সময় সব কিছু উল্টে পাল্টে যায়। হয়তো আমাদের সচেতনতায় কিছু খামতি রয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের সচেতন প্রয়াসই হয়তো ধর্ষণ নামক এই ব্যাধির একমাত্র ওষুধ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad