ফেসবুকে পোস্ট, নিছকই আনন্দ, না কোনও বিপদকে আমন্ত্রণ জানানো!

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ   ফেসবুক আমাদের জীবনে কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে!!!

আজকের আমরা, সবাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছি। আজ আমরা উন্নত। আর আমাদের এই উন্নত জীবনে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক। কোনও কিছু হলেই আমরা ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস আপডেট করে দিই,বা কোনও ছবি আপলোড করি। তা সে কোনও আনন্দের বিষয় হোক,বা দুঃখের।

যেমন ধরুন ঘরে ভালো কিছু পদ রান্না হল, সেটা বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে ছবি তুলে পোস্ট করে দিলেন। বন্ধু-বান্ধব বা অন্যান্য পরিচিতরা বেশ খুশি হল, প্রশংসাও করলো। আপনিও বেশ নিজেকে নিয়ে একটু গর্বিত হলেন, এতগুলো লাইক ও কমেন্টের বন্যা বয়ে গেল কিনা! এবার সেই লোভনীয় পদটি দেখে কোন বন্ধু যদি সত্যি সত্যি ঘরে এসে উপস্থিত হয়, আর খাবারটি শেষ হয়ে থাকে, তখন কি করবেন, ভেবে দেখেছেন! তখন মনে হবে এটা বুঝি পোস্ট না করলেই ভালো হত! তাই এমন পোস্ট করার আগে একটু বেশি না হয় করে রাখবেন। যাই হোক এটা একটা মজার বিষয়।

কিন্তু ভাবুন তো, ঘরের কোনও সদস্য মারা গেছেন, সেটাও আবার কেউ পোস্ট করে দিচ্ছেন, তাতে আবার লোকে লাইক ও দিচ্ছে। অথচ এটা কি কাম্য বলুন তো! আর এই কথাটি আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার পরিচিত একজন সম্মানিত ব্যক্তি (নামটা গোপন থাকল না হয়) তাঁর বাবা মারা গেছেন, তিনি সেই ছবির সামনে সেলফি তুলে পোস্ট করে দিলেন, তাতে আবার লাইকও পড়েছে ভালোই। তাহলে ওনার এই মানসিকতাকে কি বলা উচিৎ বলুন তো! এইসব কি না করলেই নয়! এটা করে কি নিজের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেওয়া হল না, আপনারাই বলুন।

এছাড়াও আমরা এমন অনেক কিছু শেয়ার করে থাকি ফেসবুকে, যার সুযোগ অন্য এক তৃতীয় ব্যক্তি নেয়। এই ধরুন অনেকেই কোথাও ঘুরতে গেলে সেটা পোস্ট করে দেন, "আমি বা আমরা এখানে যাচ্ছি"-এটা যে কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে, আপনি ভাবতেও পারছেন না। আবার এই ফেসবুকে কিছু লিংকে ক্লিক করলে আপনার গোপন ঊনবিংশ চলে যেতে পারে দুস্কৃতিদের হাতে।

আবার এই যোগাযোগ মাধ্যমের হাত ধরে কেউ প্রেমে পড়েন, কেউ বা পরকীয়ায় জড়ান। কেউ বা সুখের লালসায় নাহলে প্রেমের তাড়নায় ঘর ছাড়েন। কিন্তু ভেবে দেখুন একবার কতগুলো প্রেম স্থায়ীত্ব পায়, সফল হয়!

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই এমন প্রতারণার ঘটনা চোখে পড়ে। টিভি চ্যানেল গুলোতেও এমনই সব ঘটনা সামনে আসে। অথচ বিভিন্ন ক্রাইম সিরিয়ালের মধ্যে দিয়ে আমাদের বারবার সচেতন করা হয়। বোঝানো হয়, কি করা উচিৎ, আর কি নয়। কিন্তু আমরা তো মদন গোপাল! বুঝেও কিছু বুঝতে চাই না। তবে অপরাধীরা কিন্তু খুব বুদ্ধিমান। তারা তাদের ভুলগুলো ঠিক শুধরে নেয়।

আপনারা ভাবছেন আমি ফেসবুক বিদ্বেষী কথাবার্তা বলছি। তা কিন্তু নয়। আমি নিজেও এর ব্যবহার করি। আপনাদের ও না বলছি না। এর অনেক ভালো দিকও আছে। এই ফেসবুকই দূরের মানুষকে কাছে রাখে। আমরা কত রকম ভালো জিনিস শিখতে পারি এর থেকে। নতুন নতুন পরিচিতি হয়।

অতএব এই উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমটিকে বন্ধুর মত করে রাখুন, একে অপরাধী করে তুলবেন না। মনে রাখবেন, প্রযুক্তি সবসময় আমাদের ভালোর জন্যই তৈরি করা হয়, কিন্তু আমরাই একে নিজেদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে ফেলি।