নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ওজন বেশি মানেই শরীরে অনেক রকম রোগ, যেমন: প্রেসার, ডায়বেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি বাসা বাধা|পুষ্টিবিদেরা তো বলে এক কেজিও ওজন বেশি রাখা যাবে না|আবার ওজন কম হলেও শরীর দুর্বল লাগবে, সহজেই অসুখ ধরবে ইত্যাদি| তাই কিভাবে আদর্শ শারীরিক ওজন অর্জন করা যায়, তার কিছু টিপস আপনাদের জন্য দিচ্ছি:
প্রথমেই জানুন আপনার আদর্শ ওজন কত?
লক্ষ্য স্থির করুন: আদর্শ ওজন কত হতে হবে জেনে লক্ষ্য স্থির করুন, পুষ্টিবিদের/ডাক্তারের/ফিটনেস ট্রেইনারের কাছ থেকে জানুন কত দিনে তা অর্জন করা সম্ভব| অনেকেই ভাবেন ৩ মাসে ২০/৩০ কেজি কমাবেন, তা সবার জন্য সম্ভব নাও হতে পারে|তাই হেলদি উপায়ে কিভাবে তা করা যায় তা জেনে ও বুঝে করুন|
ব্যালান্স ডায়েট করুনঃ
অনেকে মনে করেন ক্রাশ ডায়েট, ফলের ডায়েট, লেমন ডায়েট, ইত্যাদি আরো হরেক রকম শর্ট কাট পদ্ধতি অবলম্বন করবেন|কিন্তু এতে ওজন কমে সাময়িক ভাবে| আর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে –হজমের সমস্যা, চুল ঝরে যাওয়া, ত্বক নষ্ট হয়ে যাওয়া, দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়| এমনকি সেই হারানো ওজনও ফিরে আসে যখন আবার তিনি স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসেন|তাই আমি বলবো, ওজন কমানোর/বাড়ানোর জন্যে একজন ভালো পুষ্টিবিদের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই| কারণ আমাদের শরীরে সব ধরনের পুষ্টির দরকার প্রতিদিন|তাই আপনার ডায়েটে যেনো সব ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার থাকে তা লক্ষ্য রাখতে হবে|কারণ ওজন কমানো/বাড়ানো ছাড়াও, হেলদি বা ফিট স্বাস্থ্য পাওয়াও আপনার লক্ষ্য।
প্রতিদিন সঠিক সময়ে প্রতি বেলার খাবার খাওয়া:
প্রতিদিন দিনের অগ্রভাগে অধিকাংশ খাবার খাওয়া শেষ করুন| কোনো ভাবেই সকালের নাস্তা বাদ দিবেন না আর সারাদিনে অন্তত ৫ বেলা খাবার খাবেন| সকাল,দুপুর, রাতে ছাড়াও মাঝে দুই বেলা হালকা স্ন্যাক্স খেতে হবে|
ক্যালরি মেপে খাবার খাওয়া:
ওজন কমানোর জন্যে ফ্যাট, অতিরিক্ত ক্যালরি,শর্করা যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে| তার বদলে, আঁশ যুক্ত খাবার, যেমন: সবজি,শাক, ফল, লাল শর্করা, বাদাম, হেলদি ফ্যাট ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে| সেই সাথে, খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে টক দই, পনির, লো ফ্যাট দুধ ইত্যাদি| আপনার দৈনিক কত ক্যালরি দরকার তা জেনে খাবার গ্রহণ করুন| মনে রাখবেন, ওজন কমাতে দৈনিক ৫০০ ক্যালরি কম গ্রহণ করতে হবে| আর ওজন বাড়াতে হলে ৫০০ ক্যালরি বেশি খেতে হবে| তাই কোন খাদ্যে কত ক্যালরি তাও জানতে হবে|
ওজন কমাতে যে সব খাবার বাদ দিবেন:
চিনি ও চিনি যুক্ত মিষ্টি খাবার, ভাজা পোড়া, ফাস্ট ফুড ও রেস্টুরেন্টের খাবার পরিহার করতে হবে|কারণ এগুলোতে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে, যা ওজন বাড়ানোর কারণ, তাছাড়া এগুলোতে খাবারের পুষ্টিমানও কম থাকে বা থাকে না ওজন বাড়াতেও দরকার পুষ্টিকর ও হেলদি খাবার|
যে সব খাবার বেশি বেশি খাবেন:
সবজি, সালাদ আর ফল| এগুলো প্রতি বেলার খাবারে থাকা চাইই চাই| কাঁচা সবজি বা ফল ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে|
রান্নার পদ্ধতি হবে ভাজা, ভুনা নয়, গ্রিল, স্টিম, বেক, সিদ্ধ ইত্যাদি| ভাজা বা ভুনা খাবারে তেল বেশি থাকে, তাই ক্যালোরিও বেশি থাকে ফলে ওজন ঠিক মতো কমবে না যদি এই ভাবে রান্না করেন|
এক পরিবেশন কত টুকু তা প্রতিটি খাবারের জন্য জেনে খাওয়া: এক পরিবেশন শর্করা, সবজি, আমিষ, দুগ্ধজাত খাবার কত টুকু তা জানতে হবে|
ধৈর্য ধরুণ ও লেগে থাকা :
অনেক সময় ওজন কমতে কমতে তা থেমে যায়|হয়তো আপনার কাংখিত ওজনে না এসেই| তখন একটু ধৈর্য ধারণ করে হাল না ছেড়ে অন্য উপায়ে চেষ্টা করতে হবে| হতে পারে সেটা খাওয়ার মেনু বদলিয়ে বা নতুন কোনো হেলদি খাবার যোগ করে বা কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়ে বা ব্যায়ামের রুটিনে বদলে বা লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এনে|এভাবে আপনার লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে চলুন|
নিজেকে খাবারের সামনে সংযত করা:
লোভনীয় খাবার দেখলে খেতে তো ইচ্ছা করবেই, কিন্তু তাই বলে কি আপনার ডায়েট নষ্ট করবেন? আপনি যদি সত্যই ওজন কমিয়ে আদর্শ ওজনে আসতে চান, তবে আপনাকে মুখ বন্ধ করে লোভ সামলে খাবার খেতে হবে| অল্প ক্ষুধা রেখে খাবার টেবিল থেকে উঠে যাওয়া, দাওয়াতে কম খাওয়া, খাবার শুরুর আগে পানি বা সালাদ খাওয়া হতে পারে নিজেকে সংযত করার উদাহরণ|
ক্ষুধা লাগলেই খাবার খান ও একটু ক্ষুধা রেখে খাওয়া বন্ধ করুন, যদি ওজন কমাতে চান|আর বাড়াতে চাইলে একটু বেশি বেশি খান, তবে তা হতে হবে হেলদি খাবার|
আঁশ বা শর্করা জাতীও খাবার গ্রহণ করুন:
সাদা শর্করা, যেমন: লাল চাল, লাল আটা ইত্যাদিতে আছে অনেক পুষ্টি, এগুলোতে অনেক আঁশ থাকার কারণে, অনেক সময় লাগে হজম হতে, ফলে ক্ষুধা কম লাগে|আর সাদা শর্করা হজম হতে কম সময় লাগে এবং তা শরীরের ইনসুলিন হরমন বাড়িয়ে দেয়| ফলে একটু পরেই ক্ষুধা বোধ হয়|
প্রচুরজল পান করা ও কোমল পানীয় বর্জন করা:
ওজন কমাতে জল অনেক ভালো কাজ করে| এক গ্লাস কোমল পানীয়তে থাকে ১০ চা চামচ চিনি, যা ওজন বাড়ায়| তাছাড়া এতে কোনো পুষ্টিও নেই|
নিয়মিত ব্যায়াম,করা বা জিমে যাওয়া:
অনেকে মনে করেন শুধু মাত্র ডায়েট করলেই ওজন কমবে বা বাড়বে বা নিয়ন্ত্রণে থাকবে|কিন্তু এটা ভুল ধারণা|ব্যায়ামের ফলে ক্যালরি বার্ন হয়, মেটাবলিসম বাড়ে, ফিটনেস বাড়ে, বডি শেপ হয়, মাসেল গঠন হয়| হাঁটা ছাড়াও জগিং, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বাইরে খেলাধুলা করা ইত্যাদি কার্ডিও ব্যায়াম হতে পারে ক্যালরি বার্ন করার ভালো উপায়|
শরীরটাকে সচল রাখুন:
আমার অনেকেই হয়তো সারাদিন তেমন কাজ কর্ম করি না| চেষ্টা করুন নিজের কাজ নিজে করতে বা ঘরের কিছু কাজ কর্ম করতে বা হেটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে|এক নাগাড়ে এক ঘন্টার বেশি বসে থাকবেন না|কাজ করতে করতে বা পড়াশুনা করতে করতে একটু উঠে হেঁটে বা অন্য পরিশ্রমের কাজ করে আসুন|দেখবেন নিজেকে অনেক কর্মঠ মনে হচ্ছে|
ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়াম করুন:
এই ধরনের ব্যায়ামে ছেলেদের মাসেল বাড়ে বা বিল্ড হয়| মেয়েদেরও মাসেল অনেক সুন্দর শেপ হয়|সেই সাথে ওজন ও ফ্যাট তো কমেই|যাদের ওজন বাড়ানো দরকার, তারাও এই ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন–মাসেল ও সাইজ বাড়ানোর জন্য|
ধীরে ধীরে ব্যায়াম বাড়ান:
ব্যায়াম শুরুর দিকে হবে একরকম, কিছু দিন পর আবার অন্য রকম|তাই মাঝে মাঝে পরিবর্তন আনুন|সে জন্য ফিটনেস ট্রেইনারএর কাছ থেকে জানুন কিভাবে তা করবেন|চেষ্টা করুন সব ধরনের ব্যায়াম—কার্ডিও,স্ট্রেন্থ, ফ্লেক্সিবিলিটি করতে|
হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলুন:
আমি মনে করি এটি আপনার আদর্শ ওজনে আসার অন্যতম উপায়| আপনি যদি রাত জাগেন, সকালের নাস্তা না খান, ধুমপান করেন, ঠিক সময় মতো খাবার না খান তবে তা কখনই সম্ভব হবে না|
আপনার উন্নতি লক্ষ্য করুন ও লিখে রাখুন:
আপনার ওজন কত বাড়লো বা কমলো তা তারিখ অনুযায়ী মাসে বা সপ্তাহে হিসাব করে আপনার ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন|আপনার খাবার ও ব্যায়াম ঠিক আছে কিনা তা খেয়াল করুন|সপ্তাহে একদিন ওজন নিতে পারেন| আর শরীরের মাপও নিতে পারেন মাঝে মাঝে|
আদর্শ ওজনে না এসেই ডায়েটে চিটিং করবেন না:
কেউ কেউ কয়েক কেজি ওজন কমিয়েই ডায়েটে চিটিং করেন| আপনি হয়তো সপ্তাহে এক দুই দিন আপনার প্রিয় খাবার. যেমন: মিষ্টি, আইসক্রিম খেতে পারেন|কিন্তু প্রতিদিন প্রতিবেলা তা খাবেন না|তবে এই ধরনের খাবারের লো ফ্যাট বা লো ক্যালরি সংস্করণ খেতে পারেন, মাঝে মাঝে অল্প পরিমানে|
পি/ব
No comments:
Post a Comment