দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট, ১২ অক্টোবর: শিক্ষক দম্পতি ও তার শিশু খুনের ঘটনার শিকড় বীরভূমে। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, শিক্ষক দম্পত্তি খুনের মাষ্টার মাইন্ড সৌভিক বনিক। তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছে মুর্শিদাবাদ পুলিশ ও সিআইডি। তাই সৌভিকের খোঁজে হন্য হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে পুলিশ। তবে সৌভিক যে একাধিক মহিলার সঙ্গে ভাব জমিয়ে প্রতারণার ব্যবসা করত তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সেই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন শিক্ষক ও তার স্ত্রী বিউটি। সৌভিকের বাড়ি বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণীগ্রাম গ্যাস অফিস গলি। বাবা বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার।
দীর্ঘদিন থেকেই ছলেবলে মহিলাদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ব্যবসার নামে মোটা টাকা হাতিয়ে ব্ল্যাক মেইল করত সে। কেউ কেউ টাকা চাইতে গেলে হুমকির মুখেও পড়তে হত। তার এই প্রতারণার কথা পরিবারের অনেকেই জানত বলে দাবি প্রতারিতদের দাবি। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, নিহত শিক্ষক পরিবারের সঙ্গে একইভাবে ভাব জমিয়েছিল সৌভিক। তার প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে জিয়াগঞ্জে মোটা অঙ্কের সুদে টাকা নিয়ে সৌভিককে দিয়েছিল শিক্ষক দম্পত্তি। এই থেকে তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার।
বিউটির সঙ্গে সম্পর্কও গড়ে তুলতে শুরু করেছিল। এমনকি বিভিন্ন ভাবে মোটা অঙ্কের টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিউটির নামে রামপুরহাট মহকুমার বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কে খাতা খুলিয়ে মোটা টাকা ঋণ করিয়েছিল সৌভিক। সেই টাকা পরিশোধ নিয়েই শুরু হয় অশান্তি। শুধু ওই শিক্ষক দম্পতির কাছ থেকেই নয়, রামপুরহাট পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তার পাড়ায় তিনটি পরিবারের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যবসার নামে নিয়েছিল সে। সেই টাকা আদায়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও চলছে। প্রতারিত এক গৃহবধূ জানান, তার কাছ থেকে কয়েকবারে প্রায় দশ লক্ষ টাকা নিয়েছিল সে। জানিয়েছিল সাগরদিঘিতে জলের ফ্যাক্টরি করবে।
অধিকাংশ টাকা নগদে দেওয়া হয়েছিল। কিছু টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সেই টাকা চাইতে গেলে তার বাবাও ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বলত। ওর চারিপাশে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা থাকায় টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। ফলে টাকা আদায় করতে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। মামলা করা হয় হাইকোর্টে। মিষ্টিভাষী সৌভিককে দেখে সে একজন প্রতারক কেউ ভাববে না। ফলে অনেকেই তার খপ্পরে পড়ে। এরকম বেশ কিছু তথ্য তদন্তকারি অফিসারদের হাতে এসেছে। তাই সৌভিকের খোঁজে শুক্রবার বিকেলে রামপুরহাটের বাড়িতে আসে লালবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বরুণ বৈদ্য।
সেখানে তার খোঁজ না পেয়ে সন্ধ্যার দিকে সিউড়িতে জাতীয় সড়কের ধারে তার ভাড়া বাড়িতে যায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশ তার বাড়িতে পৌঁছেছে খবর পেয়েই সে গা ঢাকা দেয়। দুটি বাড়ি থেকেই পুলিশ বেশ কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। সূত্রের খবর শুক্রবার রাতেই পুলিশ সৌভিককে আটক করে। আটক করা হয়েছে নিহত শিক্ষকের বাবা অমর পালকেও। অবশ্য অমর পালের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মনোরমা পাল বলেন, “স্বামী অসুস্থ রয়েছে। তবে তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না”। পুলিশ এখনো পর্যন্ত আটক করার কথা সরকারিভাবে স্বীকার করছে না।
পি/ব
No comments:
Post a Comment