দেবশ্রী মজুমদার, বীরভূম, ৩১ অক্টোবরঃ বীরভূমের মোরগ্রামের কাছেই বাহার নগর। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলগ্রাম জেলার কাতরাসু গ্রাম থেকে বীরভূম সীমান্তবর্তী বাহার নগর গ্রামের দূরত্ব অনেক! অকুতস্থল থেকে ২০ কিমি দূরে শিরনপুরা। সেখানেই কাজ করত বাহার নগরের আরও চারজন বাঙালি। তাদের কি হল এই চিন্তায় ঘুম নেই পরিবারের লোকজনদের! ভূস্বর্গের আতঙ্ক তাকে অনেকটাই কাছে এনে দিয়েছে বাহার নগরের এই গরিব গুর্বো মানুষগুলোর কাছে! এই গ্রামের আরও চারটি পরিবার তাই আতঙ্কে প্রহর গুনছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, দেশের প্রধান মন্ত্রীর কাছে তাদের আবেদন, আমাদের কারো বাবা, কারো ভাই, কারো সোহরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন! লাশ নয়, জীবিত ফিরিয়ে দিন!
বুধবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে এই পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হয় কাশ্মীরের একটি পোস্টপেড নাম্বার থেকে। সেখানে বেশি কিছু কথা হয় নি পরিবারের সাথে। বাসিরুল সেখের মা নুরন্নেহার বিবি বলেন খুব কম কথা হয়েছে। কেবল বল্লে , “ মা আমি কোন রকমে বেঁচে আছি। বাঁচবার তো কথায় লই। যারা এসেছিল সব মারা গেছে”। বাহার নগরের বাবু সরকার কাশ্মীরেই। তাঁর স্ত্রী সোনালী বিবি ও চার মেয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িতে রান্নাবাড়া বন্ধ টিভিতে কাশ্মীরের এই হত্যার খবর শুনে। চার মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে শেফালি বিবি বলেন, আমাদের সাথে আব্বা বেশি কিছু কথা বলেন নি। শুধু বলেছেন, আব্বা ভালো আছেন। শীঘ্র বাড়ি ফিরবেন। অন্যদিকে, বাক্কার সেখের স্ত্রী নুরবানু বিবি এক মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে দুঃশ্চিন্তার প্রহর কাটাচ্ছে। আবেরি বিবির সাথে ফোনে কথা হতে হতেই স্ত্রী নুরবানু ফোন ধরে শুধু একটাই কাতর আকুতি, আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন!
দক্ষিণ কাশ্মীরে কুলগ্রামে এক বাড়িতে ঢুকে এলোপাথারি গুলিতে পাঁচ তরতাজা বাঙালি নিহত হওয়ার পর থেকেই এই পরিস্থিতি । কাশ্মীরের কুলগাঁও জেলায় সানোয়ার সেখ বাড়িতে আপেলের বাগানে ২০ বছর ধরে কাজ করছে নুরসেলাম সেখ। বুধবার সানোয়ার সেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০ কিমি দূরে কুলগ্রাম জেলার কাতরাসুতে এই ঘটনা ঘটেছে। ওদের কথা বলতে পারবো না। নুরসেলাম আমার দোস্ত, ভাই। ২০ বছর ধরে এখানে কাজ করছে। বাড়ি যায়। আবার আসে”। প্রথমে সানোয়ার ভাই বলেন, বেলা ১টা নাগাদ নুরসেলামের সাথে কথা বলিয়ে দেবেন। ফের কথার মাঝেই বলেন, ওকে জম্মু যাওয়ার বাসে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’তিন দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাবে। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেল এব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন।
বাহার নগরের বাসিন্দা লাড্ডু সেখ বলেন, কোন দিকে কোন উপায় পাচ্ছি না, তখন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি সামিরুল ইসলাম। সামিরুল সেখ বলেন, আমরা কাশ্মীরের প্রশাসনের সাথে কথা বলে যেটুকু জেনেছি। ওই চারজন শ্রমিকদের নিরাপত্তার কারণে পুলিশ তাদের নিরাপদ স্থানে রেখেছে। আমরা যোগাযোগ রাখছি। আরও কোন বাঙালি শ্রমিক ওখানে আছে কিনা সেটা দেখছি। তবে আমরা ওই পরিবারের সদস্যদের নিরাপদভাবে বাংলায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রফিক সেখ (২৮), কামরুদ্দিন সেখ (৩০), মুরসালিন সেখ (৩০), নইমুদ্দিন সেখ (২৮), এবং রফিকুল সেখ (৩০) যেভাবে অকালে প্রাণ হারালেন, তারপর থেকেই ওখানে বাঙালি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। অন্যদিকে, বাকি পরিবারের কাছে পাওয়া কাশ্মীরের আরোও কয়েকটি ফোন নম্বরে ফোন করলে, একজন ফোন ধরে নি। অন্যজন ফোন করার জন্য রেগে যান!
পি/ব
No comments:
Post a Comment