প্রেস কার্ড নিউজ ডেস্ক ; বাঙ্গালীরা একটু খাদ্য রসিক। তার মধ্যে বাঙ্গালীদের ইলিশ হলেতো আর কোনও কথাই নেই। সর্ষে ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশ দোপেয়াজা, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ ভাজা, ভাপা ইলিশ, স্মোকড ইলিশ, ইলিশের মালাইকারী এমন নানা পদের খাবার জনপ্রিয়। এই ইলিশ কেবল খাবার খাবার পাতে নয়, সাহিত্যে এমনকি কূটনীতিতেও ইলিশ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে অনেকবারই।যেমন জুলাই মাসের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিধানসভায় অধিবেশনে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিস্তার জল না দেয়ায় ইলিশ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৭ সালে ইলিশ মাছ স্বীকৃতি পেয়েছে।
কিন্তু এত ভালোবাসার পরেও ইলিশের ভালো-মন্দ নিয়ে ধন্দে থাকেন কম বেশি সবাই। মানে কোন ইলিশ ভালো, কোন ইলিশের স্বাদ বেশী, কোন ইলিশ নদীর আর কোনটাই বা সমুদ্রের ইলিশ। নদীর ইলিশ বনাম সাগরের ইলিশ সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, ইলিশ সারা বছর সাগরে থাকে। শুধু ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। "দুইটি ইলিশই টর্পেডো আকারের। কিন্তু নদীর ইলিশ একটু বেঁটেখাটো হবে, আর সাগরের ইলিশ হবে সরু ও লম্বা।
সেই সঙ্গে নদীর ইলিশ বিশেষ করে পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ একটু বেশি উজ্জ্বল। নদীর ইলিশ চকচকে বেশি হবে, বেশি রুপালী হবে রং। সাগরের ইলিশ তুলনামূলক কম উজ্জ্বল।" এছাড়া নদীর ইলিশ বিশেষ করে পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার ইলিশ মাছের আকার হবে পটলের মতো অর্থাৎ মাথা আর লেজ সরু আর পেটটা মোটা হতে হবে। নদী আর সাগরের ইলিশ মাছের আসল পার্থক্য বোঝা যাবে খাওয়ার সময়। সাগর থেকে ইলিশ যখন ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে, তখন নদীর যে প্ল্যাংটন বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী খায় ইলিশ মাছ তার কারণে তার শরীর বেটে ও মোটা হয়।তার আকৃতিকে সাগরের ইলিশের চেয়ে আলাদা করে।
কোন ইলিশ বেশী স্বাদের?
ভোজন রসিক বাঙ্গালীরা মনে করেন, নদীর ইলিশ আর সাগরের ইলিশের মধ্যে স্বাদে অনেক পার্থক্য আছে। ইলিশ মাছ আকারে যত বড় হবে, তত তার স্বাদ বেশি হয়। "সমুদ্র থেকে ইলিশ নদীতে ঢোকার পরে নদীর স্রোতের বিপরীতে যখন চলে, সেসময় এদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হয়। এই ফ্যাট বা তেলের জন্যই ইলিশের স্বাদ হয়।" বর্ষাকালে পাওয়া ইলিশের স্বাদ বেশি হয়। বর্ষার মাঝামাঝি যখন, ইলশে গুড়ি বৃষ্টি হয়, সেই সময়ে নদীতে পাওয়া ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে বেশি।
লোনা জল ও মিঠা জলে বসবাসের কারণেও ইলিশের স্বাদে কিছুটা পার্থক্য হয়। আর সেক্ষেত্রে নদীর ইলিশের স্বাদই বেশি হয়। এছাড়া ডিম ছাড়ার আগ পর্যন্ত ইলিশের স্বাদ বেশি থাকে। ডিমওয়ালা ইলিশে মাছের পেটি পাতলা হয়ে যায়, এবং চর্বি কমে যায়। এ কারণে স্বাদ কমে যায়। ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারসহ নানা-দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ। পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় যে ধরণের খাবার খায় ইলিশ, এবং জলের প্রবাহের যে মাত্রা তার ফলে এর শরীরে উৎপন্ন হওয়া চর্বিই এর স্বাদ অন্য যেকোন জায়গার ইলিশের চেয়ে ভিন্ন করেছে। ইলিশ সমুদ্র থেকে এসে নদীতে ডিম ছাড়ার পর বাচ্চা ইলিশ আবার সমুদ্রে ফিরে যায়।
ডিমওয়ালা ইলিশ আর ডিমছাড়া ইলিশ কেমন করে চেনা যাবে?
ক্রেতা একটু অভিজ্ঞ না হলে মুশকিল। সাধারণত অগাস্ট মাসের পর থেকে শুরু হয় ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম, চলবে সেপ্টেম্বর অক্টোবর পর্যন্ত। "ডিমওয়ালা ইলিশের পেটমোটা হবে এবং এটা চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। এছাড়া ডিমওয়ালা ইলিশের পেট টিপলেই মাছের পায়ুর ছিদ্র দিয়ে ডিম বেরিয়ে আসবে। আর ডিম ছাড়া মাছের পেট আলগা বা ঢিলা থাকবে। ইলিশের খ্যাতি এর স্বাদের জন্যই। ফলে ছোট ইলিশ বা জাটকা কখনোই কেনা উচিত নয়। কারণ ওগুলোর স্বাদ হয় না। এছাড়া ইলিশ যদি দীর্ঘদিন কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে এর স্বাদ কমে যায়।
ইলিশ মাছের উপকারিতা কি?
ড. রহমান বলছিলেন "ইলিশ মাছে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। এই মাছ খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয়, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাক, এবং বাত বা আর্থারাইটিস কম হয়। ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারও কম হয়।
পি/ব
No comments:
Post a Comment