ইতালির গা ছমছমে ভূতুড়ে দ্বীপ পভেলিয়া - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 28 August 2019

ইতালির গা ছমছমে ভূতুড়ে দ্বীপ পভেলিয়া




দেবশ্রী মজুমদার:      ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে নেওয়া পভেলিয়া আইল্যান্ড এক আস্ত ভূতুড়ে দ্বীপ!  সভ্য সমাজের অনেকেই বলতে পারেন একবিংশ শতাব্দীতে ভূত! তাহলে ভূতরা কেমন আছেন? ইত্যাদি।       


কেউ একটু চড়িয়ে বলতে পারেন সাবধানের মার নেই। দাদা, ওখানে গেলে, হাতে একটা ডাণ্ডা নিয়ে যাবেন! তারপর ভবানী প্রসাদ মজুমদারের 'সাবধানে মার নেই' কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে উপদেশ দিয়ে বলবেন--  ভূত-টুত মানি নারে এই দ্যাখ ডাণ্ডা। তিন বার ঘোরালেই সব ঠাণ্ডা। / মেছো ভূত, গোছো ভূত, গোভূতের বাচ্চা/ ট্যাকে পুরে রেখে দিই, বাত মেরা সাচ্চা।----   কিন্তু এই ডাণ্ডা ওখানে কাজ দেবে কতটা, না গেলে বোঝা যাবে না।       



কারণ আরেক আমেরিকান কবি বলেছেন-- (দ্য ঘোস্টস সোয়ার্ম।) ভূত ভিড় করে আসে। (দেই স্পিক এজ ওয়ান পার্সন। )  তারা কথা বলে মানুষের মত।  (ইচ লভজ ইউ।) প্রত্যেকে তোমায় ভালোবাসে। (ইচ হ্যাজ লেফ্ট সামথিং আনডান।) প্রত্যেকেই অসম্পূর্ণ, অতৃপ্ত থেকে গেছে...         



 কিন্তু এই ভূত প্রেত কেন ওখানকার মানুষ বিশ্বাস করে? এই প্রশ্ন তাঁদের করলে একটাই উত্তর পাবেন--- কেন নয়! আমরা রোমক জাতি। লাতিন। ইটালিয়ান আমেরিগো ভেসপুচি আমেরিকা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। কারণ তিনি আবেগে পরিপূর্ণ ছিলেন। আমরা ইটালিয়ানরা তাই-ই।       



 উত্তর ইটালীতে পভেলিয়া আইল্যান্ড এক ভুতুড়ে দ্বীপ। লেগুনের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপ। একটা খাল এই দ্বীপকে দুভাগে ভাগ করেছে।         



৯ম শতাব্দীতে পেডুয়া ও এসটিরা বর্বরদের অত্যাচারে এই দ্বীপে আশ্রয় নেয়। ১৭৯৩ সালে এখানে প্লেগ মহামারী দেখা দেয়। বহু লোক মারা যান।           


কথিত, প্লেগের শিকারে ওখানে নাকি ১,৬০,০০০ অশরীরী আত্মা ঘুরে বেড়ায়। আকাশে বাতাসে নাকি কঙ্কাল ঘুরে বেড়ায়। তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যায়। প্রতি মূহুর্তে তাদের অস্তিত্ব অনুভব হয়। এখানে মানুষ খুব কষ্ট দেওয়া হতো। এখন একটা যুদ্ধের কেন্দ্র ছিল। সেখানে সৈন্যদের বন্দী করে পুড়িয়ে মারা হয়।         



আরও এক পরিচয় আছে। এই দ্বীপের। এখানে একজন সেইডস্ট বা নিষ্ঠুর ডাক্তার ছিলেন। যিনি রোগীকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পেতেন। রোগীদের উপর তিনি নাকি ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন।  তাঁর এই পরীক্ষা পদ্ধতির নাম ছিল লোবোটমি। আর এই চিকিৎসার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হতো, তা ছিল আরও ভয়ঙ্কর! তিনি ব্যবহার করতেন হাতুড়ি, কাঁটা, ড্রিল মেশিন, বাটালি ইত্যাদি। অর্থাৎ মস্তিষ্কের লোবা বলে একটা স্তর আছে, যেখানে ভাষায় ইনপুট ডেটা জমা হয়।




 সেখানে এই যন্ত্র গুলো দিয়ে কেটে অপারেশন করতেন। তাছাড়াও, হাসপাতালের বেল টাওয়ারে রোগীদের নিয়ে যেতেন। যেখানে তাদের জেগে থেকে ভূতের ভয়ে অপমৃত্যু বরণ ছাড়া কোন উপায় থাকতো না। ভূতের ভয়ে ওই চিকিৎসক নাকি পাগল হয়ে যান। পরিনামে ওই টাওয়ার থেকে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করেন। ১৯৬৯ সালে হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ওই দ্বীপে মানুষের কবর ছাড়া কিছু নেই। জনমানব শূন্য এই দ্বীপে বাতাস আজও ভারি হয়ে ওঠে মানুষের কান্নার আওয়াজে!       




 ২০১৪ সালে ইতালির সরকার এই দ্বীপকে ৯৯ বছরের জন্য লীজ নেয়। পরিত্যক্ত মেনট্যাল হসপিটালকে একটি হোটেল বানানোর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ভূতের আতঙ্কে সেটা করে উঠতে পারে নি কেউ।         



২০১৫ সালে এক প্রাইভেট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওখানে পার্ক বানানোর জন্য। সেটাও হয়ে ওঠে নি একই কারণে! এখনও পর্যন্ত মৃত্যুদীর্ণ হিসেবে পরিচিত ওই প্রেতদ্বীপ। প্রেত লোক! দিনের বেলায় ওই দ্বীপে পা রাখা গেলেও, সন্ধে নামার সাথে সাথে শুরু হয়ে ভূতের রাজত্ব! কান্না হাসি আর আর্তনাদ। বাতাসে ফিসফাস অশরীরীদের!       



এই গল্প ঘটনার আলো আঁধারি মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের-- ক্ষুধিত পাষাণের কাহিনী। যেখানে পুরো ইতিহাস নয়, ইতিহাসের মায়াজাল কথা বলে, আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়ে রাখে, জারিত করে। মনে হয়--- ''কল্পনালোকের ভেতরে আলোড়ন তোলে না-জানা কোনো কথামালা! মনে প্রশ্ন জাগে, কেন অদৃশ্য মানুষের চলাচলের আওয়াজ কানে আসে? কী খবর-বার্তা দিতে চায় বহুকাল আগে চলে-যাওয়া ওইসব মানুষ। তাদের যাপিতজীবনে কান্নার ধ্বনি কি আমাদের প্রজন্মের কানে কানে প্রবাহিত করতে চায় কোনো অদৃশ্য শক্তি?"     




 সেই মোহাবিষ্ট অবস্থা থেকে পাগলা মেহের আলি যদি চিৎকার করে বলে ওঠে: ‘তফাত যাও, তফাত যাও। সব ঝুট হ্যায়, সব ঝুট হ্যায়’। মনের কোণে জমে থাকা নির্জনে নিশ্চুপ অবিশ্বাস কি আরোও জোরালো দাবি করবে না? ওরা আছে! ওরা আছে!



পি/ব 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad