যেভাবে আলু চাষ ও সংরক্ষণ করবেন - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 3 June 2019

যেভাবে আলু চাষ ও সংরক্ষণ করবেন

আলু একটি অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। সেই সাথে অর্থকরী ফসলও। খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার দিন দিন এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, বাজারে আলুর দাম কখনোই আর কম থাকছে না। সে জন্য প্রতি বছরই আলুর মৌসুম শুরুর আগে শুধু কৃষকরাই নয়, যারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত নন এমন অনেকেই আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কারণ আলু চাষে স্বল্প সময়ে লাভ বেশি।
কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ না রাখায় আলু চাষে অনেকেই কাঙিক্ষত ফল বা ফলন পান না। তখন বিভিন্ন জনকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করেন। তাই আলু চাষে নামার আগে থেকেই যদি কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় তাহলে আলুর কাঙিক্ষত ফলন পাওয়া সম্ভব।
বেলে বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে আলু ভালো হয়। সূর্যের আলো প্রচুর পড়ে এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি আলু চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। জমিতে পানি সেচ দেয়া ও পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্খা থাকাও প্রয়োজন। এ জন্য জমি সমতল করতে হয়। যেহেতু আলু মাটির নিচের ফসল, তাই জমি গভীর চাষ দিতে হয়। জমি চাষ দেয়ার পর ৭ থেকে ১৫ দিন রোদে ফেলে শুকিয়ে নিতে হয়। এতে মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন পোকা, পোকার কিড়া ও পুত্তলী এবং রোগজীবাণু রোদের আলো ও তাপের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়। আড়াআড়ি চাষ দিয়ে মাটি এমনভাবে চিকন ও ঝুরঝুরে করতে হয় যেন মাটির মধ্যে বাতাস চলাচল ভালোভাবে করতে পারে, যাতে আলুর টিউবার গঠন কাজটি সহজ হয়। চাষের শেষে জমির সব আগাছা ও আগের ফসলের অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করে দূরে কোথাও পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হয়।
তবে জমি তৈরির আগে মাটি শোধন করে নিতে পারলে ভালো হয়। এতে আলুর ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আগের বছর ঢলে পড়া রোগ হয়নি বা রোগ হয়েছে এমন যেকোনো জমিতেই মাটি শোধন করে নিতে হয়। শেষ চাষের আগে বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে চাষ দিয়ে সেচ দিতে হয়। ব্লিচিং পাউডার জমির মাটির সাথে মেশানোর পর জমিতে অবশ্যই জো অবস্থা থাকতে হয়। এভাবে ২৮ থেকে ৩০ দিন জমি ফেলে রাখতে হয়। এতে জমির মাটি শোধন হয় অর্থাৎ মাটির বিশেষ বিশেষ রোগ জীবাণু ধ্বংস হয় বা তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
জানা উৎস বা বিশ্বস্ত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আলুবীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ আলু যদি খারাপ হয় তাহলে আলু চাষের সব আয়োজনই বিফলে যেতে বাধ্য।
আলু রোপণের উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ পর্যন্ত। দিন পেছালে শীতে গাছের বৃদ্ধি কমে, গাছ খুব বেশি বড় হওয়ার আগেই টিউবার গঠন কাজ শুরু হয়ে যায়। এতে টিউবার সংখ্যা কমে যায়। শীতে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের টিউবার গঠন ভালো হয়।
আলু চাষে কম্পোস্ট সার ব্যবহার না করা ভালো। কারণ যেসব কম্পোস্টের উপাদান হিসেবে শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ বা গাছ-গাছড়ার বা যেকোনো জৈব জিনিসের পচনশীল অংশ ব্যবহার করা হয় সেসবের সাথে ঢলে পড়া রোগের রোগজীবাণু থাকতে পারে, যা এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য কম্পোস্টের পরিবর্তে ভালোভাবে পচানো শুকনো গোবর সারই জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা ভালো। আলু চাষে একর প্রতি ইউরিয়া ১১২ কেজি, টিএসপি ৭৫ কেজি, এমওপি ১১২ কেজি, জিপসাম ৪০ কেজি, জিংক সালফেট ৫ কেজি এবং বোরণ সার ৪ কেজি ব্যবহার করতে হয়। অর্ধেক ইউরিয়া, অর্ধেক এমওপি ও সম্পূর্ণ টিএসপি এক সাথে মিশিয়ে বীজ আলু বপনের পাশে সারের নালায় দিতে হয়। বাকি সার রোপণের ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। আর জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বোরণ সার শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়।
উপরি সার প্রয়োগের পর আলুর সারিতে বা গাছের গোড়ায় উঁচু করে (প্রায় ২০ সেন্টিমিটার) মাটি তুলে দিতে হয়। ভেলির গোড়া চওড়া রাখার জন্য ১৫ সেন্টিমিটার প্রস্খের ছোট কোদাল ব্যবহার করতে হয়। মাটি তোলার সময় লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোদালের সাথে প্রয়োগকৃত সার উঠে না আসে।
আলু চাষে সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোপণের সময় জমির জো অবস্খা থাকতে হয় এবং রোপণের পর ১ থেকে ২টি গাছ যখন মাটির ওপরে উঠে আসে তখন প্রথমবার সার উপরি প্রয়োগের পর একটি হালকা সেচ দিতে হয়। এটি সাধারণত রোপণের ৭ দিনের মধ্যে দিতে হয়। এবপর মাটির প্রকার ও প্রয়োজন অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হয়। তবে টিউবার গঠনের শুরুর সময় অর্থাৎ ৪০ থেকে ৪৫ দিনের সময় মাটিতে রস না থাকলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বা ফলন কমে যেতে পারে।
খাবার আলু ৯৮ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়। আর বীজ আলু ৭২ থেকে ৭৫ দিন পর গাছ তুলে রেখে ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে তুলতে হয়। জাত ভেদে বাংলাদেশে আলুর ফলন একর প্রতি ৭ থেকে ১০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাড়িতে আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি : দেশে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে; নষ্ট হচ্ছে। আলু প্রতি কেজি ৬ থেকে ৮ টাকা দরে কৃষকরা বিক্রি করছে। দেশে এবার প্রায় এক কোটি টনের মত আলু উৎপাদন হয়েছে। অথচ দেশে অবস্থিত মোট ৩৩৭টি হিমাগারের মোট ধারণ ক্ষমতা ২২ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদিত আলুর মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ আলু সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বছর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ আলু নষ্ট হয়।

প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস আলু সংরক্ষণ করতে হয়। হিমাগার ছাড়াও কৃষকরা নিজ বাড়িতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। হিমাগারের এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে ২৫ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়। কৃষকরা বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করলে খরচ পড়ে প্রতিবস্তা মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ জন্য কৃষকরা সহজেই বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন।


from ap bangla | অ্যানালিটিক্যাল প্রেস | Analytical Press | http://bit.ly/3109RKR

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad