MISS BANGLA লোগোর মানে-না বুঝে গায়ে চড়ে টি-শার্ট, তার পরে.. - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 30 April 2019

MISS BANGLA লোগোর মানে-না বুঝে গায়ে চড়ে টি-শার্ট, তার পরে..

images+%25286%2529
যদি মনে করেন, এই ‘টি’-বাজবৃন্দ নেহাতই আনপড়, ভুল করবেন। এদের একটা বড় অংশ কলেজ-ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ‘শিক্ষা’-র বহর দেখে চমকে যাবেন না। পিকচার আভি বাকি হ্যায়।

কেতোপাগলা এমনিতে শান্ত। কেবল খিদে পেলে ওর কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। ভরপেট খেয়ে কেতো নিমগাছতলায় একটা দিব্য ঘুম দেয়। নিমফল টুপটাপ ঝরে পড়ে ওর মাথায়, গায়ে। পাড়ার ছেলেপিলেরা গুলতানি করে, কেতো নাকি ‘হেব্বি শিকখিতো’, কেবল পম্পাদি বিয়ে করতে রাজি হল না বলেই নাকি কেতো...।

এইভাবে কেতোপাগলা একদিন মিথ হয়ে ওঠে। পাড়ার সদ্য দাড়ি-গজানো ছেলেটি, যে কি না ‘অন্য রকম’ হওয়ার সাধনা সবে শুরু করেছে, কেতোকে ইকুয়েট করতে শুরু করেছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘উত্তরের ব্যালকনি’ গল্পের পাগলটির সঙ্গে। পাড়ায় সদ্য বিয়ে হয়ে আসা ছিমছাম তরুণীটিও কনভিনসড হয় কেতোর অনন্যতায়। কেতো একদিন মিথে পরিণত হয়।

এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু কেতোর এই মিথাচ্ছন্নতা এক লহমায় ভেঙে গেল সেই দিন, যে দিন মহল্লাশুদ্ধ লোক অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল, কেতোর পরিধানে চিরাচরিত কেলেঝুল শার্টটির বদলে শোভা পাচ্ছে একখানি লেডিজ টি-শার্ট, আর তার বক্ষে লিখিত রয়েছে এই ক’টি কথা— ‘ইফ ইউ থিংক আই অ্যাম সেক্সি, দেন...’। সামাজিক মার্জিনের একবারে বাইরে বাসরত কেতোপাগলা ক্রস-ড্রেসার কি না, তা নিয়ে জল্পনা হতেই পারত। কিন্তু কেতোর রোম্যান্টিক ভাবমূর্তিতে ওই টি-শার্ট এমন বারিসিঞ্চন করে রাখল যে, অনাগত ভবিষ্যতে কেতোর ইমেজ উদ্ধার আর সম্ভব হল না।

কেতোর মতো সবাই নয়। মার্জিনের বাইরে থেকে সাবভার্সনের চেষ্টা করা যতটা সহজ, সামাজিক লক্ষ্ণণরেখার ভিতরে বসে ততটা সম্ভব নয়। অথচ সামাজিক স্থিতিকে ঘেঁটে ঘ করে দেওয়ার একটা ইচ্ছে কম-বেশি সকলেরই রয়েছে। এই ইচ্ছেটাকেই মূলধন বানিয়ে ব্যবসা করে টি-শার্ট কোম্পানিরা। করে তো করে। তাদের কাজ তারা করে। আমি, তুমি, রামা কৈর্বত্য, রহিম শেখের দলের যা কাজ, তা-ই করি। সেগুলো কিনে পরি। এই উৎপাদন ও ভোক্তাজগতের মধ্যে সেতুসম্ভাবনা মাঝে মাঝেই টাল খায় ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে। খাওয়ারই কথা। এখানে ‘ফানি’ বা ‘নটি’ টি-শার্টের যে টার্গেট ভোক্তাজগৎ, সেটা মোটেও স্পষ্ট নয়। একেই এ দেশের সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত অভিধানে ‘ড্রেস সেন্স’ শব্দবন্ধটি তেমন একটা অস্তিত্বসম্পন্ন নয়, তার উপরে গরিব-গুর্বো দিন এনে দিন হজম করা হাভাতের দল ‘পরা’ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামানোর সময় পায় কি?

জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী ধাবাটিতে যদি দেখেন চুলায় কয়লা দেওয়া-ছেলেটি ‘লেট মি ফিল লাইক আ মিলিওনিয়ার’ লেখা টি-শার্ট পরে কাজ করছে অথবা কলকাতা শহরের ঝাঁ ঝাঁ রোদের দুপুরে এক তোম্বামুখো গুঁফো পুঙ্গব ‘আই লাভ মাই হাজব্যান্ড’ বুকে সেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবে কি অবাক হন আপনি? হন না, তার কারণ, দেশটা ইন্ডিয়া। স্লামডগ থেকে কড়োরপতি— এখানে আপনি মর্জির মালিক।  সবটা আবার যে মর্জি নির্ধারণ করে, এমন নয়। হিড়িক আর হুজুগও একটা ব্যাপার এ দেশে। কয়েক বছর আগে, বাম জমানার শেষ দিকে এ রাজ্যে সিপিএম-এর ভাবমূর্তিতে পুলটিশ লাগানোর অভিপ্রায়ে কি না কে জানে, চে গেভারার ছবি-সম্বলিত ‘টি’ পরিধানের একটা ট্রেন্ড দেখা দিয়েছিল।

পরিধানকারীদের অধিকাংশের জানা ছিল না, ব্যক্তিটি কে। জিগ্যেস করলে প্রায়শই উত্তর পাওয়া যেত— ‘‘হল্লার স্মোক করত... মরে গেছে।’’ একই ব্যাপার বব মার্লিকে নিয়ে। নাড়ু-হারু-পঞ্চা মার্লির ছবিকে বক্ষলগ্ন করে ঘুরে বেড়ায়। যদি প্রশ্ন করা যায়, ইনি কে, উত্তর পাওয়া যায়— ‘‘হেভি গাঁজা খেত, জানো না বস্!’’ একই ভাবে কার্ট কোবেইন ‘‘পাতাখোর’’, জন লেনন ‘‘মাল খেয়ে মরে গেছে’’-তে পরিণত। যদি মনে করেন, এই ‘টি’-বাজবৃন্দ নেহাতই আনপড়, ভুল করবেন। এদের একটা বড় অংশ কলেজ-ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ‘শিক্ষা’-র বহর দেখে চমকে যাবেন না। পিকচার আভি বাকি হ্যায়।

পাড়ার পাঁচু গায়ে ‘অ্যাডিডাস’-লেখা গেঞ্জি পরলে সেটা আর অ্যাডিডাস থাকে না, ‘আদি দাস’ হয়ে যায়— কথাটা কে যেন বলেছিলেন। এই আপ্তবাক্যটির সূত্র ধরেই বলা যায়, টি শার্ট যে সর্বদাই টি শার্ট, তা কিন্তু নয়। পরিধানকারী-ভেদে তা কখনও কখনও ‘গেঞ্জি’ হয়ে যায়। এই রূপান্তরণ অনুযায়ী তার লোগো বদলায়, আবার বদলায় না। এই অনির্দেশ্য অনিশ্চয়তায় লিওনেল মেসির বল লাথানোর ছবি সেঁটে বসে চা-ওলা হারুর ভুঁড়িতে। মিনিবাসের হেল্পার জগা বাসের বডি থাবড়ায়, ‘‘চল ঠিগা’’ বলে আর তার ঘেমো পেট চুলকায়, পেটে অনন্য পোজ-এ মারাদোনা তাঁর উত্থিত পদ নিয়ে ফাঁপরে পড়েন।

তখন সভ্যতায় ‘টি শার্ট’ বলে কিছুই নেই। এ পৃথিবী তখন গেঞ্জিময়।  সব থেকে ঘোটালা ছোটদের নিয়ে। ‘পর রুচি পরনা’-প্রবাদটি তাদের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে সত্য। বাপ-মা’র কেয়ারে যদি তিন বছরের মেয়েটি ‘বোঝে না সে বোঝে না’-লেখা ‘টি’ পরে ঘুরে বেড়ায়, কী বলার থাকে? যদি হামা-টানা ফোকলার গায়ে ‘আই অ্যাম টু হর্নি’ দেখে স্তম্ভিত হবেন কি না, ভাবেন, তবে জানবেন এটা একান্তভাবে‌ই কালের দোয। পশ্চিম গোলার্ধে আবশ্য ছোটদের এই ধরনের টি শার্ট পরিয়ে বাপ-মা দেদার মজা পান। তার পরে সেই বিচিত্র-ছানার ছবি ফেসবুকে আপলোড করে ডবল মজা লোটেন। এর মধ্যে শিশু-অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারটা যে কেন নজরে আসে না, সেটাও ভাবার।


from মিস বাংলা http://bit.ly/2GVmSxy

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad