বাংলাদেশের পর ভারতীয় রাজনীতিতে কি লন্ডন ষড়যন্ত্রের অনুপ্রবেশ ? পাশাপাশি দেশের তামাম রাজনৈতিক দলগুলোর দক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল কংগ্রেসী উদ্যোগ।শেখ হাসিনা সরকার ফেলতে বাংলাদেশের জামাত ও বিএনপি যে ভাবে ষড়যন্ত্রের স্বর্গ ভূমি হিসাবে লন্ডনকে ব্যবহার করেছিল তেমনি ভাবে কংগ্রেসও লন্ডনকে ব্যবহার করল। অভিযোগ, কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বাল সহ এক বিরাট স্বার্থান্বেষী মহল দেশের নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা নষ্টের জন্য নীল নক্সা তৈরি করেছে । কারণ কংগ্রেসের সামনে তো কোনও বিকল্প পথ নেই। গত পাঁচ বছরে কংগ্রেস দেশের মন্দির মসজিদে ঘুরেছেন। রাহুল গান্ধী দেশকে জানিয়েছেন , তিনি হিন্দু। রাহুল গান্ধী থেকে দেশের প্রতিটি লোকসভা আসনে দাঁড়ানো কংগ্রেসী প্রার্থীরা মানুষের অভাব অভিযোগ শোনেন নি। আসলে তারা ভাবেন, কংগ্রেস হল একটা করে খাওয়ার সংগঠন। অথচ কংগ্রেসের পেট থেকে জন্ম নেওয়া তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিটা পার্বন , উতসবকে ঘিরে জন সংযোগে নেমে মানুষের পাশে থাকে। মানুষের মন জয়ে তৃণমূলের বিকল্প তৃণমূলই।
গত ৩১ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার নির্বাচনের আগে লন্ডনে বসে দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই যোগের অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছিল।হাসিনা সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর প্রথম শুভেচ্ছা দেওয়া নরেন্দ্র মোদীর ওপর আর্ন্তজাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশের রোষ তৈরি হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছে আইএসআইয়ের লন্ডন মডিউল। গত পাঁচ বছর আগের ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে কেন লোকসভা ভোটের সিজনকে বেছে নেওয়া হল ? আর ইভিএম হ্যাকের কথা জানতে পারায় খুন হতে গৌরি লঙ্কেশকে। ভারতীয় ভোটারদের নির্বোধ ভেবে এই খেলো যুক্তির চাল দিয়ে কার্যত গনতন্ত্রকে ধর্ষণ করলেন কপিল সিব্বাল।
ইভিএম হ্যাকের সময় তো সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশ উপস্হিত ছিলেন না। দাবি করা হচ্ছে, গল্প শুনে প্রতিবেদন করতে রাজি হয়েছিলেন । অর্থাত, মৃত মানুষটি জানতেন বলেই মরতেই হয়েছে। জবানবন্দী হবে না।অতএব এই খেলো যুক্তি কতটা গ্রহন যোগ্য ? ভারতীয় গনতন্ত্রে সংবাদ মাধ্যমের কর্মী ,পুলিশ,আমলা ও ব্যবসায়ীরা তো হাজারো ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষি হন প্রতিদিন । তাহলে তো লাশের ঢিবি তৈরি হত দেশে। কারণ, দেশের কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির দলগুলো সরকারের চেয়ারে বসলেই দূ্র্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ধরুন, আমরা সবাই দেখি পুলিশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা তোলেন পন্যবাহী যানের থেকে। টাকা গুলো যিনি ভাগের ফান্ডে পৌঁছে দেন। এই যে চেইন সিস্টেম বিভিন্ন স্তরের মানুষ দেখেন এবং জানেন যারা কিনা পুলিশ নন। এরকম প্রতিটা ক্ষেত্রেই আছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইভিএম হ্যাক করেই ২০১৪ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর সেকথা জেনে ফেলাতেই চরম পরিনতি হয় বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডে ও সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের। এদিন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন মার্কিন প্রবাসী ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ সৈয়দ শুজা। হাতে-কলমে ইভিএম হ্যাক করার কৌশলও দেখান তিনি।
লোকসভা নির্বাচনের মুখে তাঁর এই দাবি রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে। শুজার দাবি, ইভিএম হ্যাক হওয়ায় ফলেই ২০১৪-র নির্বাচনে ২০১টি আসনে হেরেছিল কংগ্রেস। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে শুজা বলেন, বিজেপি সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডে ইভিএম হ্যাকের কথা জেনে গিয়েছিলেন এবং সেকথা প্রকাশ্যে আনারও সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তাই পরিকল্পনা মাফিক ভাবেই সরকার গঠনের দিন কয়েকের মধ্যেই খুন করা হয় তাঁকে। গোপীনাথ মুন্ডের পাশাপাশি গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর পেছনেও রয়েছে একই কারন। শুজার দাবি,সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশও এই খবর প্রকাশ করতে রাজি হয়েছিলেন আর সেই কারণেই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় তাঁকে।
অর্থাত, হ্যাক করেই বিপুল জয় । সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যে ভোটে তো হ্যাঁক নয় পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত পদ্ধতিতে ভোট করে জিততে পারত বিজেপি। তাহলে তৃণমূলের মত সমালোচনার মুখে পড়তে হত ।ঠিক কথা।হ্যাক পন্থাতেও গেলো না কেন্দ্রে এবং তিন রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি। ইউপিএ এক এবং দুই সরকারের পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতির পর ফের কংগ্রেস জিতবে এই স্বপ্ন ছাগলও দেখে কিনা গবেষণার বিষয়। মানুষের মত দান কতটা পরিবর্তন তা পরিস্কার অটল সরকারের উদাহরণ।উন্নয়নের ওপর ভরসা করে যদি ভোটের হার জিত নির্ধারন হয় তাহলে এনডিএ সরকার দুই হত। কিছুদিন আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বললেন, দেশের জন্য ভাবতেন , কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীদের তালিকার প্রথম তিনে অটল বিহারী থাকবেন।তাহলে তিনি হারলেন কেন ? আসলে উন্নয়ন নয় মগজ ধোলাইয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ভারতীয় গনতন্ত্রের জনগন।এই অভিশাপ থেকে মুক্তি নয় বরং বেঁধে রেখে জাত পাতের সংকীর্ণ তোষণ রাজনীতি করণ করে খুশি করার চেষ্টা চলছে । দেশবাসী যখন সচেতন হবে তখন ,কংগ্রেসকে বেঁধে রেখে কান ধরে বলতে পারে , যাও পাকিস্তান থেকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর কারণ ও পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট নিয়ে এসো। দেশটাকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে কোটি মানুষকে পৈতৃক ভিটে ছাড়া করে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ বানিয়ে নেক্যামোর খেসারতে পড়ে নিঃস্ব পরিবারের সদস্যরা যখন ক্ষতিপূরণ হিসাবে গান্ধী পরিবারকে ফুটপাথে বাস করতে বাধ্য করার আন্দোলন করবে।ফেরত চাইবে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন । জাতীর মোহ কাটছে। আধুনিক প্রজন্ম ঘরে কংগ্রেসী ও বাম বাবা মা পিসিদের পরিস্কার বলছে, তোমরা ভুল বহন করেছ এতদিন। কংগ্রেস হল দেশের অভিশাপ। এভাবেই তৈরি হচ্ছে এক নতুন সমাজ। দিন দিন বাড়ছে সেই সমাজের সদস্য।
দেশ ও রাজ্যগুলির সাংবাদিকরা তো নেতাদের প্রতিক্রিয়া নেওয়ার সাংবাদিকতা করে। কংগ্রেস , বিজেপি নেতারা গদগদ হয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন করেন, তো তোমাদের কাছে কি খবর ? হালে বামেরা হয়ত করেন । তৃণমূলের এমন প্রশ্নের দরকার হয় না। একারনেই সব ধরণের রাজনীতিতে কংগ্রেস বিজেপির গ্রহণ যোগ্যতা কমেছে। বিশ্বায়ানের যুগে আঞ্চলিকতা প্রাধান্য পাচ্ছে এ কারণেই।
আর প্রান্তিক প্রতিনিধিরা , পছন্দের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রতিবেদন করেন। ফলে মানুষের ইচ্ছে, পছন্দ ,চাহিদা সামনে আসে না। মানুষ এখন সামাজিক মাধ্যম পেয়ে পাত্তা দিচ্ছে না সংবাদকে। বাংলার শেষ বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেওয়া রাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমের কথা গায়ে মাখেনি ভোটাররা।জাগরণের এই সলতে পাকানোর কাজ শুরু করল বাঙালী।
@সত্যজিত চক্রবর্তী
etisatyajit@gmail.com
মতামত : লেখকের নিজস্ব।
No comments:
Post a Comment