সন্তানের সার্বিক বিকাশের জন্য আধ্যাত্মিক অভিভাবকত্ব কী? - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 30 December 2021

সন্তানের সার্বিক বিকাশের জন্য আধ্যাত্মিক অভিভাবকত্ব কী?



একজন শিশুকে সফল মানুষ বানানোর আগে তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা দরকার, কারণ একজন ভালো মানুষ যেখানেই যায়, সে তার ভালো গুণগুলো দিয়ে সবাইকে নিজের করে তোলে, তাহলে তাকে সফল হতে কেউ আটকাতে পারবে না।  আধ্যাত্মিক অভিভাবকত্ব শিশুদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের একটি মহান মাধ্যম।  আপনিও আপনার সন্তানকে আধ্যাত্মিক অভিভাবকত্বের মাধ্যমে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।  এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, সন্তান যখন মাতৃগর্ভে থাকে, তখন মায়ের মনের অবস্থাও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে।  




তাই গর্ভাবস্থায় ভালো পরিবেশে থাকার মাধ্যমে, ভালো বই পড়া এবং ভালো চিন্তার মাধ্যমে মা নিজেই গর্ভের সন্তানকে ভালো মূল্য দিতে শুরু করতে পারেন।  আপনিও যখন অভিভাবক হওয়ার মন স্থির করবেন, তখন আপনার সন্তান মাতৃগর্ভে আসার সাথে সাথে তাকে ভাল মূল্যবোধ দেওয়া শুরু করুন।  






আগে নিজেকে বদলান: আপনি যদি আপনার সন্তানকে ভালো মূল্যবোধ দিতে চান, তাহলে প্রথমে আপনার খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন করুন, কারণ শিশু তার চারপাশে যা দেখে তাই করে।  যদি সে তার বাবা-মাকে সবসময় ঝগড়া-বিবাদ করতে দেখে, তাহলে তার আচরণও ঝগড়া ও নেতিবাচক হতে শুরু করে।  আপনি যদি চান আপনার সন্তান সত্যবাদী, সৎ, আত্মনির্ভরশীল, দয়ালু, প্রেমময়, আত্মবিশ্বাসী এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হোক, তাহলে আপনাকে প্রথমে এই গুণগুলো নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।  ভালোবাসার সাথে পদক্ষেপ নিন সাধারণত আমরা কোনো কিছু না মানার জন্য বা পীড়াপীড়ি করার জন্য শিশুকে তিরস্কার করি, কিন্তু এটি সন্তানের ওপর উল্টো প্রভাব ফেলে। 


 আমরা যখন উচ্চস্বরে কাঁদি, তখন শিশুটিও কাঁদতে থাকে এবং উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে।  এমতাবস্থায় আপনার রাগ সপ্তম আসমানে পৌছে যাওয়া স্পষ্ট, কিন্তু এই অবস্থায় রাগ কাজকে নষ্ট করে দিতে পারে।  তাই তাকে শান্ত মনে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে সে যা করছে তা ভুল।  তারপরও যদি সে আপনার কথা না শোনে, তাহলে কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হোন এবং তার সাথে কথা বলবেন না।  তোমাকে চুপ দেখে সেও চুপ হয়ে যাবে। 


আপনি যদি চান আপনার সন্তান ভবিষ্যতে সুশৃঙ্খল হয়ে উঠুক, তাহলে এখন থেকে তার অন্যায় দাবি মেনে নেওয়া বন্ধ করুন।  আমরা যখন কান্নাকাটি করি এবং ধুয়ে ফেলি, তখন আমরা প্রায়শই শিশুকে যা দাবি করে তার সবকিছুই দিয়ে থাকি, কিন্তু তা করে আমরা তার ভবিষ্যত নষ্ট করি।  এতে করে, বড় হওয়ার পরেও, সে তার দাবি মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং সে কখনই শৃঙ্খলা মেনে চলতে শিখতে পারবে না।  তাই সন্তানের অহেতুক চাওয়া-পাওয়াকে বকাঝকা করে নয়, ভালোবাসা দিয়ে না বলতে শিখুন।



  ভালবাসার সাথে ব্যাখ্যা করলে, তিনি আপনার সমস্ত কথা শুনবেন এবং আপনার সঠিক নির্দেশনা দিয়ে তিনি সঠিক এবং ভুল বুঝতে পারবেন।  সন্তানের গুণাবলীকে চিনুন প্রতিটি শিশুই তার নিজের দিক থেকে বিশেষ।  এটা সম্ভব যে আপনার প্রতিবেশীর সন্তান পড়াশোনায় পারদর্শী হবে এবং আপনার সন্তান খেলাধুলায় পারদর্শী হবে।  এমতাবস্থায় কম নম্বর পাওয়ায় তাকে অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করে তার আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করবেন না, বরং খেলাধুলায় পদক জিতে তার প্রশংসা করুন।  আপনি তাকে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বলতে পারেন, কিন্তু ভুল করেও বলবেন না যে অমুক ছেলে আপনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান।  এতে করে শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে এবং তার মধ্যে হীনমন্যতাও থাকতে পারে। 



 সিদ্ধান্ত নেওয়া শেখান: শিশুকে সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি তাকে তার নিজের ইচ্ছায় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে দেবেন না।  এটি করার মাধ্যমে আপনি তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারেন।  আপনি যদি চান আপনার সন্তান ভবিষ্যতে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবে, তাহলে এখন থেকে তাকে নিজের ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে দিন, যেমন বন্ধু নির্বাচন করা, ছুটির পরিকল্পনা করা ইত্যাদি।  শিশুকে তার নিজের পথে যেতে দিন।  এতে তাকে শুধু স্বাবলম্বী করা হবে না, তার সৃজনশীলতাও বাড়বে।  


একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন অভিভাবকরা যাই বলুক না কেন তা শিশুদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।  তাই শিশুকে কিছু বলার সময় মনে রাখবেন আপনার কথা যেন তার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।  নিজের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস বাড়তে হবে, অন্যের প্রতি তার সহানুভূতি থাকতে হবে, তাকে নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে এবং বুদ্ধিমানের সাথে যেকোনও কিছু বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে।  


 শিশু যত্ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়


লালন-পালন শিশুর আচার-আচরণ ও চিন্তা-ভাবনার ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে।  শিশু যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে তার প্রভাব ভবিষ্যতেও পড়ে।  তাই সন্তানের লালন-পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ের প্রতি অভিভাবকদের মনোযোগ দেওয়া জরুরি।  কিভাবে অভিভাবকত্ব একটি সন্তানের ভবিষ্যতে প্রভাবিত করে?  আসুন, জেনে নিন: 


*    শৈশব থেকেই যদি তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, তাহলে সে অন্যের সমালোচনা করতে শেখে।


  * যদি সে ছোটবেলা থেকেই ঘরে ঝগড়া-বিবাদ দেখে তাহলে সেও মারামারি করতে শেখে।  যদি তাকে অল্প বয়স থেকেই কোনো ধরনের ভয়ের সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে সে বড় হওয়ার পর সবসময়ই শঙ্কিত বা চিন্তিত থাকে। 


 *    যদি তাকে ঘরে-বাইরে সব সময় ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়, তাহলে সে লাজুক বা লাজুক হয়ে যায়। 


 *    শিশু যদি এমন পরিবেশে বড় হয়ে থাকে যেখানে তাকে হিংসার অনুভূতির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে সে বড় হয়ে শত্রুতা শিখে।  


*    শিশু প্রথম থেকেই উৎসাহ পায় তাহলে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।  


*    শিশু যদি তার পিতামাতাকে অনেক কষ্ট করতে দেখে তবে সে ধৈর্য ও সহনশীলতা শেখে।  


*    শিশু যদি প্রথম থেকেই প্রশংসা পায়, তাহলে বড় হয়ে সেও অন্যের প্রশংসা করতে শেখে।  


*    শিশুটি যদি তার বাড়ির আশেপাশে সততা দেখে তবে সে সত্যটি শিখেছে। 


 *    শিশু যদি নিরাপদ পরিবেশে থাকে, তাহলে সে নিজেকে এবং অন্যকে বিশ্বাস করতে শেখে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad