প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ পৌঁছেছে রবীন্দ্র সদনে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রয়াত নেতার মরদেহ দুপুর ২টা পর্যন্ত সেখানে থাকবে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দল-মত নির্বিশেষে বহু মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা রবীন্দ্র সদনে জড়ো হয়েছেন।
কালী পুজোর রাতেই ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয় রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২২ মিনিটে এসএসকেএমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। সেইসঙ্গেই শোকে ডুবেছে গোটা রাজনৈতিক মহল।
১৯৭১ সালে বালিগঞ্জ থেকে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। পরের বছর ফের নির্বাচন। ১৯৭২ সালে দ্বিতীয় বারও বালিগঞ্জ থেকে বিধায়ক হন এবং সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রীসভায় তথ্য সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন। ২৫ বছর বয়সে সর্ব কনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন তিনি। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান, রাজ্যের মন্ত্রী-দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন তাঁর।
বিরোধী দল হোক বা শাসক দল রাজ্য রাজনীতিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে উপেক্ষা করা অসম্ভব ছিল। কলকাতার মেয়র হিসেবে প্রথমবারের মতো সুব্রত মুখোপাধ্যায় একথা আরও পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। এমনকি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও সুব্রতর প্রশংসা করতে বাধ্য হন।
অনেকেই স্বীকার করেন, মাত্র পাঁচ বছর মেয়র হিসেবে সুব্রত মুখোপাধ্যায় কলকাতার চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। তিনি শুধু কলকাতার চেহারাই পাল্টে দেননি, কলকাতা পৌরসভার কর্মসংস্কৃতিও বদলে দিয়েছেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্ভবত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছ থেকে কলকাতার মেয়র হিসেবে তাঁর যোগ্যতার সবচেয়ে বড় সনদ পেয়েছিলেন।
লেক গার্ডেনস ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিলতার কারণে আটকে ছিল সে সময়, সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে সমস্যার সমাধান করেছিলেন। ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের সময়, সুব্রত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রশংসা পেয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যা করতে পারেননি তা করেছেন সুব্রত।
মেয়র হিসাবে সুব্রত মুখার্জি ইএম বাইপাসে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলকাতা গেট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে প্রকল্পটি এগোয়নি। সুব্রত মুখোপাধ্যায় মাত্র পাঁচ বছর মেয়র হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সেই সময় দেখিয়েছিলেন প্রশাসক হিসেবে তিনি কতটা দক্ষ। পরে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হিসাবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও সেই ছাপ রেখে গেছেন।
তবে শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রশংসাই পাননি, প্রয়াত জ্যোতি বসুও সুব্রতকে খুব পছন্দ করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একাধিকবার একথা স্বীকার করেছেন।
No comments:
Post a Comment