যে কোনও দেশের জন্য তার জাতীয় পতাকা তার গর্ব। দেশের প্রতিটি নাগরিক,সেনাবাহিনী এবং তার সরকার জাতীয় পতাকার সম্মানের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ করে। পতাকায় যে রঙগুলো দেখা যায়, তার প্রত্যেকটির অর্থ আছে।
আমাদের তেরঙা জাতীয় পতাকায় জাফরান রং যেমন সাহস ও ত্যাগের প্রতীক, তেমনি সাদা রং সত্য, শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক এবং সবুজ রংকে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একইভাবে বিভিন্ন দেশের পতাকার রঙের অর্থও আলাদা।
কিন্তু আপনি কি কখনও কোনও দেশের জাতীয় পতাকায় বেগুনি রঙ দেখেছেন? সম্ভবত আপনি এটি কখনও দেখেননি। কারণ পতাকার মধ্যে বেগুনি রঙ খুব বিরল। এর পেছনের কারণটা খুবই মজার, যা হয়তো আপনি জানেন না।
ওয়ার্ল্ডোমিটার ওয়েবসাইট অনুসারে, বিশ্বে ১৯৫ টি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২টি দেশ আছে যাদের জাতীয় পতাকায় বেগুনি রঙ আছে। পৃথিবীর বাকি কোনও দেশের পতাকায় বেগুনি রঙ নেই। এর পেছনের কারণটাও খুব মজার।
প্রকৃতপক্ষে, ১৮০০ এর দশক পর্যন্ত, বেগুনি রঙ তৈরি করা খুব কঠিন এবং ব্যয়বহুল ছিল। এজন্য রানী এলিজাবেথ ঘোষণা করেছিলেন যে রাজপরিবার ছাড়া কেউ বেগুনি রঙ পরতে পারবে না। এই কারণে, বেগুনি রঙ ব্যবহার করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
তখনকার দিনে লেবাননের ছোট সামুদ্রিক শামুক থেকে বেগুনি রঙ পাওয়া যেত, যা সংগ্রহ করা খুব কঠিন ছিল। এক গ্রাম বেগুনি রঙ তৈরি করতে ১০ হাজারেরও বেশি শামুক মারতে হতো,যেখান থেকে ওই রঙ পাওয়া যেতো। এরপর রঞ্জক বানাতেও প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো, যার ফলে রঞ্জকের দামও বেড়ে যায়। তখনকার দিনে ১ পাউন্ড বেগুনি রঞ্জক কিনতে খরচ হয়েছিল ৪১ লাখ টাকারও বেশি। এই কারণে দেশগুলো তাদের পতাকায় বেগুনি রঙ রাখাকে যথাযথ মনে করেনি।
যদিও ১৮৫৬ সালে, উইলিয়াম হেনরি পারকিন একটি সিন্থেটিক বেগুনি রঞ্জক তৈরিতে সফল হন, যার পরে এর দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু দেশগুলি বেগুনি রঙ বর্জন করাই সমীচীন মনে করেছিল।
যে দুই দেশের পতাকায় বেগুনি রঙ আছে, এবার সেই সব দেশের কথা বলি। প্রথম দেশ হল ডমিনিকা যার পতাকা ১৯৭৮ সালে গৃহীত হয়েছিল। দ্বিতীয় দেশ নিকারাগুয়া যার পতাকা ১৯০৮ সালে গৃহীত হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে সরকারী স্বীকৃতি পেয়েছিল। স্পেনের জাতীয় পতাকায়ও কিছুদিন বেগুনি রঙ দেখা গিয়েছিল।
No comments:
Post a Comment