ঘরে ঘরে রাজনৈতিক শক্তি! ফলে পুলিশকে ধমকানি চমকানি শুরু হয়েছে - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 5 November 2021

ঘরে ঘরে রাজনৈতিক শক্তি! ফলে পুলিশকে ধমকানি চমকানি শুরু হয়েছে

 


রিভা মুখোপা | প্রেসকার্ড নিউজ |


বদলেছে চেনা সমাজ। রাগ, উত্তেজনা, না মানার অদম্য ইচ্ছা উগ্র ভাবে বেড়েছে। পুলিশকেও মানছে না রাস্তায়। পুলিশকে অনুনয় বিনয় করতে হচ্ছে কার্যত নত হয়ে। পরিণত পুলিশ সদস্যরা মেনে নিচ্ছেন। তরুণ ও অপরিণত পুলিশ বাহিনীর সদস্য কিংবা রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধি কখনও সখনও ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। 


পুজো পার্বনে আনন্দ করছেন নাগরিক সমাজ। আনন্দ করার নিরাপত্তা দিচ্ছেন পুলিশ সমাজ। এখানে কর্তব্য নাগরিক ও পুলিশ সমাজ উভয়ের। বেপরোয়া নাগরিক সমাজকে মাস্ক পরা কিংবা রাস্তায় নিয়ন্ত্রিত ড্রাইভিং মানাতে গেলেই রেগে পুলিশের ওপর চোটপাট এবং হুমকি ধেয়ে আসছে। মানবিকতা দেখিয়ে পুলিশ হজম করছেন মাত্রাতিরিক্ত। 


ছেলে মেয়েগুলোর বয়স এখনও ২০ পার হয়নি। চার মেয়ে তিন ছেলের বন্ধুদের মধ্যে দু জন মাস্ক পরেনি। মাস্ক না পরা ছেলে দুটি পুলিশের মানবিকতা নিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিতেই পুলিশ পাকড়াও করে। অতঃপর ঘন্টা দেড়েক পর ছাড়া পায়। থানা থেকে বের হওয়ার সময় প্রশ্ন ছিল ফাইন নিল? উত্তর এলো, যেখান থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ ছেড়েছে সেখানে পুলিশ গিয়ে ফাইন দেয়। একজনের এমন সোনার উত্তরে আরেক জন সোহাগা ঢেলে বলল, ধরার মজা পরে দেখাবো। 


২০ বছরের ছেলে মেয়েদের মুখে এমন উত্তরের নেপথ্যে রাজনৈতিক শক্তি তা বুঝতে কারও সমস্যা নেই। 


কালী পুজো ঘিরে পুলিশ শহরের মন্ডপে রাস্তায় সর্বত্রই পাহারা বসিয়েছে। এক হাজারের বেশি পুলিশ সিভিক ও নিরাপত্তায় পারদর্শী অন্য বাহিনী এবং সংস্থা থেকে কালীপুজোর শহর বারাসতকে মুড়ে ফেলেছে। 


শহরের মন্ডপ মুখো রাস্তা গুলো আটকে দিয়েছে দর্শনার্থীদের হেঁটে যাতায়াতের সুবিধার্থে। বাইক ছাড় বলতে সংবাদ মাধ্যম আর স্থানীয়দের। বাইরে থেকে আসা সব চাকার যান ছাড়াও আভ্যন্তরীণ যান টোটো, রিক্সা, ভ্যান ও সাইকেল সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত যাতায়াত বন্ধ পুজোর পাঁচ দিন। 


নিয়মটা নতুন নয়। নিয়মের বয়স শহরের প্রাচীন কালী পুজোর বয়সের সমান। এত বছরেও শহরের নাগরিকরা কিংবা কালী শহরে আসা দর্শনার্থীরা নিয়মের সাথে অভ্যস্ত হতে পারলেন না? প্রশ্ন এবং উত্তর দুটোই উদ্বেগের। 


রাজনৈতিক ক্ষমতা কি তবে ঘরে ঘরে ? নইলে পুলিশের ওপর সর্বত্রই এমন চোটপাট হয় না। এবার বারাসত পুলিশ, জেলার চারপাশের পুলিশ জেলা ছাড়াও বাঁকুড়া এবং হাওড়া থেকে পুলিশ এসেছেন নিরাপত্তা দিতে। নিরাপত্তায় থাকা সদস্যদের মধ্যে স্থানীয় সিভিক ছাড়া সবাই ভিন জেলার নাগরিক। ফলে বারাসতে এসে তাদের যে মান সম্মান এবং উর্দিকে অসম্মান করার মত গন ঘটনাকে অভিজ্ঞতার থলেতে ভরতে হল তাতে বারাসতের মান সম্মান থাকল কি ? ঘরে ঘরে রাজনৈতিক ক্ষমতায় শক্তিশালী হয়ে বিরোধীদের সাথে করা আচরণ কি তবে বারাসতের অভ্যেসে পরিণত হয়েছে? 


দিন কুড়ি আগে দুর্গা পুজোর নবমীর রাতে পথ চলতি যুবকের সাথে এক বাইক আরোহীর মৃদু ধাক্কা লাগে। শুরু হয় উভয় তরফের বাদানুবাদ। হঠাৎ দেখা গেল বাইক আরোহীর সাথে থাকা দুটি মেয়ে তেড়ে গেল উল্টো দিকের ছেলেদের দিকে। শুরু হল চড় থাপ্পড়। উদোম খিস্তি। মেয়ে দুজনের মধ্যে একজন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। আরেক জন বছর ২২- এর সদ্য বিবাহিতা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা মেয়েটি অবশ্য বছর তিন হল জুটিয়ে নিয়েছে জীবন সাথী। 


পাড়ায় মেয়ে দুটির উগ্রতার ভিডিও দেখাতেই সকলেই হতবাক। জোরে গলায় কথা না বলা মেয়ের উগ্রতা এবং চিৎকার করে উদোম খিস্তি, মারধর করার পরও উল্টে ছেলেদের বিরুদ্ধে গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগের ঘটনা দেখে পাড়ার লোকেরা চমকে গিয়েছিল। অবশ্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলেই সেদিন হতবাক হয়ে পড়েন। আক্রান্ত ছেলেটি অবশ্য বলছিল, মেয়ে বলে ছাড় কেন পাবে? আমাদের জন্য কি কোনও আইন নেই ? 


উপস্থিত মানুষই মানুষের পাশে নেই তো আইন কি করে থাকবে। বিচার কি করে এগোবে সঠিক পথে? মানুষ নিয়েই তো আইন এবং বিচার। উপস্থিত মানুষ যদি মানুষ হতেন তাহলে মেয়ে দুটি ওভাবে পারত না চারটে ছেলেকে পেটাতে। খিস্তি দিতে। তেড়ে যেতে। 


লক্ষাধিক টাকার বাইক চালানোর আর্থিক সক্ষমতা পরিবারের সদস্যদের বস্তিবাসী বললে অসহায় করা হবে অর্থনীতির মান দন্ডকে। হেও করা হবে পৌরসভা এলাকাকে। 


অর্থনীতি দুর্বল হলে এক ধরণের অবক্ষয়। তেমনই শক্তিশালী হলে আরেক ধরনের অবক্ষয়। শক্তিশালী অর্থনীতির সাথে একচেটিয়া রাজনৈতিক শক্তির পরাক্রমশালীতাই এই অবক্ষয়ের মূল কারণ। ঘরে ঘরে রাজনীতিকে এতটা শক্তিশালী করার সুফলের ওজনের থেকে কুফলের ওজন ঢের বেশি এবং সমাজের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা রাস্তায় আইন শৃংখলা সামলানো নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা বুঝতে পারছেন। 


বুঝে কি হবে? তারাও অসহায়। রাজনৈতিক শক্তি ঘরে ঘরে তো। ওই ঘর থেকেই তো পুলিশ সদস্যরা এসেছেন। ফলে রাজনৈতিক পোষ্য কিংবা রাজনীতির ছা পোষারা মেনে নিচ্ছে সব কিছুই। বাকিদেরও মানতে বাধ্য করছে। ফলে আইনজীবীর স্ত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশের দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে, কি করবেন আপনি? আমার স্বামী আইনজীবী। আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না। ওই যে ঘরে ঘরে রাজনৈতিক শক্তি। আইনজীবী তো শাসক দলের আইনজীবী সেলের সদস্য। 


হঠাৎ বদলেছে নাকি এই সমাজ। বদলে তৈরি হল কবে? সময় লেগেছে তো! আসলে আমি আপনি সমাজের রাগ-দ্বেষ-হিংসা কখনও নোটিশ করিনি। রাজনৈতিক কাপড় চোখে পরে ধৃতরাষ্ট্র সেজেছি। এদিকে সমাজ বদলেছে। বদলায়নি কেবল সেজে থাকা ধৃতরাষ্ট্ররা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad