প্রাচীন রীতি মেনে আজও পুরুষরাই মহিলা বেশে করেন দেবী বরণ - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 15 November 2021

প্রাচীন রীতি মেনে আজও পুরুষরাই মহিলা বেশে করেন দেবী বরণ



এগারো জন মহিলা ঘোমটা পরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বরণ করছেন, উলু আর শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠছে ঠাকুর দালান, আর এই বরণ দেখতে করোনা বিধি না মেনেই উপচে পড়ল ভিড়।


ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায় জগদ্ধাত্রী পুজোয় অংশ নিলেও দশমীর বরণে মেয়েরা থাকে না। যুগযুগ ধরে এই রীতিই চলে আসছে তেঁতুলতলার পুজোয়। নবমী পুজো আর দশমীর বরণ অনুষ্ঠান দেখতে বহু মানুষ হাজির হন। সেখানে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পরার মত।


শুনেছেন এতদিন দেখা হয়নি। এবারই প্রথম জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বরণ করছেন পুরুষরা নারী বেশে। হাওড়া থেকে তা দেখতে আসেন রেখা বণিক। তিনি বলেন, "আমার ননদের বিয়ে হয়েছে এখানে । তাই তেঁতুলতলায় এলাম। মা খুব জাগ্রত শুনেছি। তাই দেখলাম। কত লোক। আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং নারী বেশে পুরুষদের বরণ করা। এটা কোথাও দেখিনি।"


প্রচলিত মতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুরের মেয়ের বাড়ি গৌরহাটিতে একসময় হতো জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই পুজোই চলে আসে ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায়। বাড়ির পুজো সার্বজনীন রূপ পায়। সেসময় বাড়ির মেয়েরা পর্দানসিন ছিলেন। বাইরে বেরোতেও ভয় পেতেন। বাইরে বেরিয়ে পুজোয় অংশ নিতেন  না। কিন্তু প্রতিমা বরণ তো মেয়েরাই করে, সেই কাজ হবে কি করে! বিসর্জনের আগে তাই পুরুষরাই কাপড় পরে মহিলা সেজে বরণ করা শুরু করেন।


একবিংশ শতকে মহিলারা বিভিন্ন জায়গায় চালিকা শক্তি। মহিলারাই দশভূজা হয়ে সব সামলাচ্ছেন। কিছু রীতি তবু রয়ে যায় যুগ যুগ ধরে। কালের প্রবাহেও তা হারিয়ে যায় না। সেইরকমই প্রথা মেনে আজও তেঁতুলতলা বারোয়ারী পুজো হয়ে আসছে। 


চন্দননগরের পাশাপশি ভদ্রেশ্বরে ২২৯ বছর ধরে হয়ে আসছে জগদ্ধাত্রী পুজো। তেঁতুলতলার অন্যতম আধিকারিক শ্রীকান্ত মন্ডল বলেন, "বারোয়ারীর পুজো যারা করত সেই পুরোহিতরা বরণ করতেন। এখন এগারো জন পুরুষ সদস্য কাপড় পরে বরণ করেন, যা যেখতে বহু মানুষ সকাল থেকে ভীড় করেন মন্ডপে। তেঁতুলতলার পুজো এতটাই জাগ্রত,মানুষের বিশ্বাস এখানে মানসিক করলে তা পূরন হয়। তাই পুজো দিতে ঢল নামে ভক্তদের।"


তিনি আরও বলেন, "করোনার পরিস্থিতিতে আগে মানুষকে দেখতে হবে, তারপর মাকে। মানুষই তো মায়ের সেবা করে। মানুষ ভাল থাকলেই মা ভালো থাকবে। করোনা বিধি মেনে আমরা করছি।আজকে বরণ হলেও আগামী কাল (সোমবার) সকল দশটায় প্রতিমা বিসর্জন হবে। করোনার জন্য ছাগ বলি ও দন্ডি কাটা বন্ধ রাখা হয়েছিল। পুজো যত প্রাচীন হচ্ছে মানুষের বিশ্বাসও যেন ততই বেড়ে চলেছে।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad